আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সে আসে ধীর পায়ে



মনের দরজায় এখনও প্রতি সন্ধ্যায় কে যেন কড়া নেড়ে যায়! বসন্ত বাতাস কোন এক সুদূরের পয়গাম আমার নিকট পৌঁছায়। রাত্রির ঐ জ্যোৎস্না তার অবয়বের নূর আমায় দেখায়। আমি রাতের নিকষ কালো আঁধারে তার খোলা চুল উড়তে দেখি। পর্দার আড়ালে কথা হয় স্বপ্নের মাঝে- তারই সাথে!
সম্বোধনহীন এমন হাজারো ভেজা বাক্য প্রতিদিন সিক্ত করে আমার বিকেল বেলার ডায়েরীর পাতা। আচেনা সেই তোমার জন্য আমি নাম করে দিয়েছি আমার প্রতিটি বিকেল, তোমার নাম শোনার জন্য আজ পর্যন্ত কোনও নাম আমি মনে রাখি নাই, শুধু তোমার মুখটি দেখার জন্য আমি আজ পর্যন্ত অন্ধ, তোমারই আওয়াজ শুনবার জন্য আমার কান অন্য কিছু শুনতে নারাজ, তোমার স্পর্শের আশায় আমার শরীর আজ নিথর।


রাতের গভীরে যখন জেগে উঠি, ঘুম ভেঙে দেখি পাশে তুমি নেই- বালিশের নিচে রাখা ডায়েরিটা নিয়ে বসি। বা পাশে রাখা বোতল থেকে সামান্য পানিতে গলা ভেজাই। রাতের আঁধারকে সাক্ষী করে দেই শব্দহীন কিছু আলাপচারিতার। যেখানে কথাগুলো কেবলই একক স্বরের।
শুধু তুমি নেই বলে- এখনও আলোহীন এ হৃদয় বাসর।

মনোবাগানে বসন্ত আসার জন্য আবেদন রোজ পাঠায়, কিন্তু শুধুই তুমি নেই বলে! ঘন কুয়াশায় ঢাকা মনের দ্বার আজও রুদ্ধ, এর যাদু কাঠি যে তোমারই হাতে। শুধু তুমি নেই বলে আমার বসন্ত বাগানের হাজারো ফুল কলিতেই থেমে আছে, এ ফুলের ভ্রমর যে তুমিই। আমার আকাশের চাঁদকে ঢেকে রেখেছে তোমার নিকাব। তুমি হীনা আমার সাগর শূন্য- শুষ্ক! মরু কুহেলিকায় ভ্রান্ত পথিক আমি, মরীচিকার ধোঁকায় দিশেহারা। মরু ঝড়ের দোর্দণ্ড প্রতাপে তাসবির রূপী খোয়াবের আলো আজ নিভু নিভু।

এ ঝড় এমনিতে থামবার নয়। আমার খোয়াবের বেখবর তাকদির আর ঝড়ের মাঝের দেয়াল যে তুমিই।
স্কুল জীবনে কোথায় জানি শুনেছিলাম, রাজকন্যা পেতে হলে রাজপুত্র হতে হয়। সে কিরকম রাজপুত্র হতে হয় আমি সেদিনও বুঝি নাই, আজও বুঝি না। তবে তোমার জন্যই আজ আমি- এই আমি।

আমার সামনে কোনদিন কোন পরী দাঁড়িয়ে গেলেও আমি সেই পরীর সাথে চোখ মেলাই নাই, শুধু তোমার জন্য। কোনদিন কোন অপ্সরীর আওয়াজ আসলেও, কানে বাজতে দেইনি শুধু তোমার জন্য। আমার প্রতিটি পলকের দাম দিতে পারে কেবলই তোমার পলকহীন চাহনি। কোনদিন যদি দ্যাখো, আকাশে একটাও নক্ষত্র নেই, বুঝে নিও কতবার ভেবেছি তোমায়। মেঘের আড়াল থেকে তোমার আওয়াজ শুনি, শুধু দেখিনা তোমায়।

অপেক্ষা করি বর্ষণের। আমার পৃথিবী যে তোমার মিলন তৃষ্ণায় বিভোর।
ভরা জ্যোৎস্নায় আমি আকাশের চাঁদটাকে তোমার গল্প শোনাই। আমি স্পষ্ট দেখি, সেও তোমার প্রেমে পড়ে যেতে চায়। আমি গল্প থামিয়ে দেই।

কালবৈশাখীর ঝড়কে দিক ভুলিয়েছি তোমার হাসির ছবি দেখিয়ে। চৈত্রের দুপুরকে শীতল করেছি তোমার ভেজা চুলের পরশে। বরষার সন্ধ্যাকে কাঁদিয়েছি তোমার অভিমানের কথা জানিয়ে। শীতের কুয়াশা ভেজা সকালে চাদর বানিয়েছি তোমার আলিঙ্গনের উষ্ণতাকে।
রাতের আঁধারে ছবি আঁকি তোমার চুলের, আর জোনাকির মিটিমিটি আলোয় এঁকে যাই তোমার চোখের পলক ফেলা।

ভোরের আলোয় শেষ আঁচড় পড়ে তোমার ঈষৎ বাঁকা হাসিতে। আর সন্ধ্যার কোমলতায় নিজ হাতে রঙ দেই তোমার ঘুমন্ত চোখে।
আমার ছবি আঁকা সেই কবেই শেষ হয়ে গেছে। আমি ছবি হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে। ছবিটির পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ গজিয়েছে।

ডালে এক ঝাঁক বনের পাখির দল নিশ্চুপ বসে। আমার ছবির কথা শোনার প্রতীক্ষায়। আমার ছবি কথা বলবে। সকালের আলো বিকেলের পথে পা বাড়িয়েছে। আমি পথ চেয়ে আছি।


ঐ দূরে কাকে যেন দেখা যায় !
তুলির শেষ আঁচড় এখনও যে বাকি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।