বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ মোট ১০ আসামির বিরুদ্ধে দুদকের করা দুই মামলা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায় বুধবার এ অভিযোগ গঠন করেন। সাক্ষ্যের জন্য আগামী ২১ এপ্রিল দিনধার্য করা হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো তাঁরা হলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার আসামি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী, নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি খালেদা জিয়া এবং খালেদা জিয়ার বড় পুত্র ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরীফ উদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মামুনুর রহমান।
অভিযোগ গঠনের সময় আসামি শরফুদ্দিন আহমেদ অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বাকি আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে আসামি তারেক রহমান সরকারের অনুমতি নিয়ে দেশের বাইরে থেকে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি বলে সাংবাদিকদের জানান দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
দুপুর ১টার সময় খালেদা জিয়া আদালতের এজলাশে পৌঁছলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সময় চেয়ে আদালতের কাছে দরখাস্ত করেন। আদালত আসামিপক্ষের দরখাস্ত নাকচ করে অভিযোগ গঠনের জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে শুনানি করতে বলেন।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা আদালতকে বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি সুপ্রীমকোর্টে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে; জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি হাইকোর্টে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে আইন মোতাবেক উচ্চ আদালতে কোন মামলা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলে নি¤œ আদালতে ওই মামলার কোন কার্যক্রম চলতে পারে না। খালেদা জিয়ার অপর একজন আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, যদি উচ্চ আদালতে কোন মামলা স্থগিতের আদেশ না দেয় কিন্ত ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে তারপরও নিম্ন আদালত ওই মামলার কার্যক্রম চালাতে পারবে না। দুদকের প্রধান আইনজীবী মোশাররাফ হোসেন কাজল বলেন, এ পর্যন্ত ৫২ বার মামলার সময় পেছানো হয়েছে। প্রতিবারই বিএনপির চেয়াপার্সনের অজুহাত তুলে সময় চাওয়া হয়েছে এখন তিনি আদালতে উপস্থিত হয়েছেন সুতরাং অভিযোগ গঠন করা হোক। এ আদালত কয়েকবার আসামিপক্ষকে বলেছেন, যদি উচ্চ আদালতের আদেশ দাখিল না করা হয় তবে অভিযোগ গঠন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ১০ থেকে ১২ বার সময় দেয়ার পরও আসামিপক্ষে হাইকোর্টের কোন আদেশ দাখিল করতে পারেননি তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে অভিযোগ গঠন করা হোক। ’ আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর অভিযোগ গঠনের ওপর বক্তব্য রাখার জন্য আসামিপক্ষকে আহ্বান জানান। এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতে তুমুল হৈচৈ শুরু করেন। কোন একপর্য়ায়ে অনেকে মারমুখী হয়ে ওঠেন। বিচারক বিব্রত হয়ে এজলাশ ছেড়ে চলে যান।
দীর্ঘ এক ঘণ্টা হৈচৈ চলতে থাকে। এ সময় খালেদা জিয়াকে এজলাশের পাশে পাতা চেয়ারে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। বিএনপিপন্থী কিছু আইনজীবীরা দুই দফায় বিচারকের খাস কামরায় গিয়ে বৈঠক করার পর বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিঞা বিচারকের এজলাশে দাঁড়িয়ে উন্মুক্ত আদালতে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা তিন তিনটা দরখাস্ত দিয়েছি অথচ কোন দরখাস্তই আদালত আমলে নিচ্ছে না। এ আদালতের ওপর আমাদের কোন আস্থা নেই। এ সময় খালেদা জিয়া মাথা নেড়ে নেড়ে সানাউল্লা মিয়ার কথায় সায় দেন।
বিকেল তিনটার দিকে আবারও বিচারক এজলাশে ওঠেন। এ সময় বিচারকের হাতে ৪ পৃষ্ঠার একটি নথি দেখা যায়। যেখানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ লেখা ছিল। বিচারক অভিযোগ পড়ে শোনানো শুরু করার সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লা মিয়া আদালতকে বলেন, এ আদালতের ওপর আমাদের কোন আস্থা নাই। এ সময় উপস্থিত বিএনপি আইনজীবীরা তুমুল হৈচৈ করেন এবং বিচারককে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া, ভুয়া, চোর, চোর’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বিচারক ফের বিব্রত হয়ে এজলাশ ছেড়ে চলে যান। বিকেল চারটার সময় এজলাশ থেকে পেশকার আরিফ হোসেন এসে ঘোষণা দেন ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় আসামি খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছ, সাক্ষীর জন্য আগামী ২১ এপ্রিল ২০১৪ দিনধার্য করা হলো। এ সময় আদালতে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। খালেদা জিয়াকে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। একপর্যায়ে খালেদা জিয়া উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো অথচ আমাকে অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়নি।
আমাকে জিজ্ঞাসাও করা হয়নি আমি দোষী কি নির্দোষ। ’
আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক মিয়া বলেন, এ অভিযোগ গঠন করা আইন মোতাবেক হয়নি; নিয়ম হলো আসামিকে অভিযোগ পড়ে শোনাবে তাকে জিজ্ঞেস করবে সে দোষী কি নির্দোষ অথচ বিচারক কিছুই করেনি। আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।
এর আগে বিভিন্ন কারণে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৪১ বার ও জিয়া চেরিট্যাবল মামলায় ১১ বার খালেদা জিয়ার পক্ষে সময় আবেদন করলে আদালত প্রতিবারই সময় পিছিয়েছেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১২ সালে ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলাটির অভিযোগপত্র ১৫ জানুয়ারি আমলে নিয়েছেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। এ মামলার অপর আসামিরা হলো খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী, নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ মামলায় হারিস চৌধুরী বার বার পলাতক রয়েছেন এবং বাকি আসামিরা জামিনে আছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করে ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার বড় পুত্র ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরীফ উদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মামুনুর রহমান। উল্লেখ্য, শেষের দুইজন বরাবর পলাতক আছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।