আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর প্রকৃত এজেন্ডা কাজ কী?

জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়

দেশে এখন কার্যত বিরোধী দল নেই। গণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থায় এটি একটি ভয়াবহ শূন্যতা। যেহেতু অধিকাংশ গণতান্ত্রিক নেতৃত্বই আত্মাহীন এবং পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় করেনা সেহেতু তারা সুযোগ পেলেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার করে থাকে।

বিরোধী দল সেসবের বিরোধিতা করে সরকারের কার্যক্রমে ভারসাম্য সৃষ্টিতে সহায়তা করে। বর্তমানে এনজিওগুলোর সক্রিয় ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে তারা বিরোধী দলের সে শূন্যতা এগিয়ে এসেছে। তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে সরকারের বিভিন্ন সমালোচনায় অংশ নিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের এ কার্যক্রম সরকারের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে সরকার কেন এনজিওদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে বা তাদের কাছে জবাবদিহি করবে?

কেননা গণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থায় জনগণের সাথে বিরোধী দলের একটি সম্পৃক্ততা আছে, এমনকি দায়বদ্ধতাও আছে।

কিন্তু এসব দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর দায়বদ্ধতা কার কাছে বা তাদের প্রকৃত এজেন্ডা কী? তারা কি জনগণের পক্ষ হয়ে কাজ করছে? আর করলেও তাদেরকে এই অধিকার কে দিয়েছে? তাদের অস্তিত্বের ভিত্তিই বা কী?

স¤প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, টিআইবির করা সর্বশেষ পার্লামেন্ট ওয়াচ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই এ বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। টিআইবির বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম। গত বুধবার জাতীয় সংসদের পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি টিআইবির পার্লামেন্ট ওয়াচ বিষয়ক প্রতিবেদনের কঠোর সমালোচনা করেন। এ সময় তিনি ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করাকে এখতিয়ার বহির্ভূত বলে মন্তব্য করেন। একইভাবে সমালোচনা থেকে অন্যান্য সাংসদ ও মন্ত্রীরাও পিছিয়ে নেই।

গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামকে আগামী মন্ত্রীপরিষদ বৈঠকে টিআইবি ও সুজনসহ অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থের অনুসন্ধান করার প্রস্তাব আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের এসব সমালোচনা ও পদক্ষেপের জবাবে টিআইবিও সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেছে, যে দলই ক্ষমতায় থাকুক তাদের একটা শ্রেণি সর্বদাই টিআইবির সমালোচনা করে থাকে।

আর বিরোধী দল টিআইবিকে চায় কাছে টানতে। টিআইবির অর্থের উৎস সম্পর্কে উদ্ভুত প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সরকারের অনুমতি ছাড়া আমাদের ফান্ডে এক পয়সাও আসে না, খরচও করতে পারি না। আমাদের সব আর্থিক প্রতিবেদন সরকারকে দিতে হয়।

আমাদের সব অডিট ও ফাইন্সিয়াল রিপোর্ট সরকারের জন্য সবসময় উন্মুক্ত। ’
প্রশ্ন হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে এসব এনজিওসমূহ এবং সরকারের মধ্যে এই দ্বৈরথ কেন? এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে এরা মূলত দেশের অভ্যন্তরে অবস্থান করে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে সুন্দর সুন্দর বাক্য ব্যবহার করে প্রকৃতপক্ষে দেশের বাইরের গোষ্ঠী মহলের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। তাছাড়া প্রায়শঃই তারা প্রতিবেদনের নামে বিতর্কিত তথ্য উপাত্ত হাজির করে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে উপস্থাপন করে দেশ ও দেশের সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে। গত পাঁচই মে রাতে হেফাজতে ইসলামীর অবৈধ অবস্থানের বিরুদ্ধে পুলিশি উচ্ছেদ অভিযানে ৬১ নিহত হয়েছে মর্মে অধিকার নামক একটি মানবাধিকার সংস্থা তথ্য প্রকাশ করে। পরে এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং যথাযথ তথ্য উপাত্ত না থাকায় উক্ত সংগঠনের সেক্রেটারি আদিলুর রহমানকে গ্রেফতারও করা হয়।

এ নিয়ে সে সময় দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এসব সংগঠন ও সংস্থাগুলোর অন্যান্য কর্মকাণ্ডও সাংঘাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের অজানা নয় যে, এদের নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বি¯তৃতি লাভ করেছে। অর্থনৈতিক উন্নতির নামে এরা ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে ফেলে দেশের মানুষকে আরও গরীব করে ফেলছে। ঋণ আদায়ের নামে গরীব মানুষের ঘর খুলে টিন নিয়ে আসছে।

তাদের ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে কত মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এমনকি সুদূরপ্রসারী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে তারা দেশের উপজাতি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে ধর্মান্তরিত করার কাজেও নিজেদের জড়িত করছে। এমনকি এসব সংগঠনের আড়ালে থাকা ব্যক্তিবিশেষ কর্তৃক দেশের গোপন তথ্য বিদেশিদের কাছে পাচার করার অভিযোগও রয়েছে। তাদের এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে অতীতে অনেকবার দেশের নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সরকার তাদের কার্যক্রমকে সম্মতি ও বৈধতা দেওয়ায় তারা এক প্রকার নির্বিঘ্নেই কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে।



কিন্তু সরকার এসব এনজিওসমূহকে দেশের অভ্যন্তরে অবস্থান, নির্বিঘেœ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগও ঋণপ্রদানের অধিকার দিয়ে এখন তাদের অর্থের উৎস খুঁজতে নামার মধ্য দিয়ে নিজেদের দুর্বলতাই প্রকাশ করছে না? ইতোমধ্যে দীর্ঘদিন দেশের ভেতরে অবস্থান করে এদেশের বুকে তাদের সমর্থক, ভোক্তা সৃষ্টি এবং বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়ে এখন তাদের গোড়া শক্ত হয়ে গেছে। এখন সরকার চাইলেও কী তাদের রাশ টেনে ধরতে পারবে? আর তা করতে চাইলেও আমাদের বিদেশি গণতান্ত্রিক প্রভুরা নাখোশ হবে না?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।