গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এমডি, শান্তিতে নোবেল জয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চেয়েছে সরকার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে এ সংক্রান্ত অগ্রগতির তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন ২৫ মার্চের মধ্যে জমা দিতে বলেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ১৬ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ ধরনের তাগিদ দিয়ে চিঠিটি পাঠায়। প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে সেগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, 'বিধিবহিভর্ূতভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা; অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে তহবিল স্থানান্তর; বিনানুমতিতে বিদেশ সফর ও পুরস্কার-সম্মানী-রয়্যালটি গ্রহণ; অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনকালে বেতন-ভাতা ছাড়াও অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ এবং স্বল্প সুদে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণগ্রহণসহ যেসব আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম হয়েছে সেসব ব্যাপারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ' তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে, প্রফেসর ইউনূসের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে সেটি সরকারকেই নিতে হবে।
অ-তফসিলি ব্যাংক হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংককেও মওকুফকৃত অর্থ আদায়ে কোনো নির্দেশনা দিতে পারে না। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে প্রফেসর ইউনূসের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ অবস্থানের কথা নিশ্চিত করেছে। এ ব্যাপারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক একটি মতামত পাঠিয়েছে। আমরা সেই মতামত সরকারকে অবহিত করতে পারি।
সূত্র জানায়, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম পর্যালোচনা করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ওই বৈঠকে গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ প্রফেসর ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশনের নামে মওকুফের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া এনবিআরের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রফেসর ইউনূস সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ১৩৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে বৈদেশিক সম্মানী, ১০টি প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার এবং ১৩টি বইয়ের রয়্যালটি পেয়েছেন। এভাবে সব মিলিয়ে তিনি পেয়েছেন ৫০ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৮ টাকা। তিনি করমুক্ত আয় দেখিয়েছেন ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯৭ টাকা। ইউনূসের এসব অর্থের বিষয়ে আয়কর রিটার্নে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি দাবি করে বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এনবিআর-সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে এনবিআর।
আর ব্যাংকিং-সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাপারে কোনো বিষয়ে মতামত প্রয়োজন হলে আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরে সরকারের ওই সিদ্ধান্তের পর গত ২৪ ডিসেম্বর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমের কাছে একটি মতামত পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। মতামতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, '২৯ জুন, ২০০০ সাল থেকে ১২ মে, ২০১১ পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বেতন-ভাতা ব্যতীত গৃহীত অন্যান্য সুবিধা এবং পুরস্কার-সম্মানী-রয়্যালটি বাবদ গৃহীত অর্থের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে সরকারই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। '
এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক রিভিউ কমিটির তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, 'ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস করপোরেশনকে গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের সুদ ১৬ শতাংশ ও ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করে প্রকৃত পাওনা ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা থেকে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা মওকুফ করা হয়েছে।
এর ফলে আসল বাবদ ৮৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মওকুফ করা হয়েছে, যা গ্রামীণ ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী। ' তবে গ্রামীণ ব্যাংক অ-তফসিলি ব্যাংক হওয়ায় প্যাকেজেস করপোরেশনের অনুকূলে মওকুফকৃত আসল আদায়ে ব্যাংকটিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের কাজ সরকারকেই করতে হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামতে উল্লেখ করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।