আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা-মেয়ে হত্যা: বাকপ্রতিবন্ধীর বর্ণনায় মেলে খুনির সন্ধান

এই মঞ্জুরই খুনের ঘটনার ‘ক্লু’ বের করতে গলদঘর্ম পুলিশকে দেন আলোর দিশা।
ঘটনার পর ওই ভবন থেকে দুই যুবককে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলেন মঞ্জুর। তার বর্ণনার সূত্র ধরেই ঢাকা থেকে আটক করা হয় মূল সন্দেহভাজন আবু রায়হানকে।
নিহত সাইমা আক্তারের ভাই সাঈদ রেজা বোনের উত্ত্যক্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করে এই রায়হানকেই খুনি বলে সন্দেহ করে আসছিলেন।
গত সোমবার সকালে সিডিএ আবাসিক এলাকার ১৭ নম্বর রোডের ১২৯ নম্বর বাড়ি ‘পদ্মা-যমুনা’য় খুন হন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের স্ত্রী রেজিয়া খাতুন (৪৯) ও তার মেয়ে সাইমা (১৭)।


যেভাবে খুনি সনাক্ত
মঞ্জুর সিডিএ আবাসিক এলাকার একটি বস্তিতে থাকেন। ‘পদ্মা-যমুনা’র সামনের একটি ভবনের এক বাসায় কাজ করেন তিনি।
খুনের ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে যায় চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও সিআইডির কয়েকটি দল।
ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার পান মঞ্জুরের দেখা।
বাবুল আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার সময় মঞ্জুর ওই বাড়ির সামনের রাস্তায় ছিলেন।

বের হওয়ার সময় দেখি মঞ্জুর স্থানীয় এক ব্যক্তিকে কী যেন বলার চেষ্টা করছে।
“আমি এগিয়ে গেলে তিনি আমাকেও একই কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার কথা আমি বুঝতে পারিনি। ”
পরে রাতেই নগরীর একটি অটিস্টিক স্কুলের এক শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে মঞ্জুরের বাসায় যান গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাবুল।
“ওই শিক্ষককের সহযোগিতায় মঞ্জুরের বক্তব্য বুঝতে পারি।

মঞ্জুর জানান, ওই বাসা থেকে দুই যুবককে তিনি বেরিয়ে যেতে দেখেছেন। দুই যুবকের বর্ণনাও দেন তিনি। ”

আবু রায়হান

পরে রায়হানের ছবি দেখানো হলে তাকে সনাক্ত করেন মঞ্জুর।
আবু রায়হান
এরপর রায়হানের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে রায়হানের নতুন ফোন নম্বর পাওয়া যায়।


রায়হানের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ফকিরাপুল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ফকিরাপুলের মুনস্টার হোটেলের ২০২ নম্বর কক্ষ থেকে রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে রায়হান আরেকটি হোটেলে অবস্থান করছিল। পরে সে হোটেল পাল্টায়। ”
রায়হানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের খুলশী এলাকার ক্রাউন রেসিডেন্ট নামের রেস্ট হাউজের গাড়িচালক শহীদকে বুধবার ভোরে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।


‘স্কুল থেকে এসেছি’ বলায় দরজা খোলে সাইমা  
গ্রেপ্তারের পর রায়হান ও শহীদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে খুনের দায় স্বীকার করেছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল বলেন, ঘটনার দিন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে রায়হান ও শহীদ ওই বাসার কাছে অবস্থান নেয়। সাইমার বাবা ও ভাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে দেখতে পেয়ে তারা এগিয়ে যায়।
“শহীদ কলিংবেল বাজায়। সাইমা দরজা খোলার আগে পরিচয় জানতে চাইলে শহীদ জানায়, তাকে সাইমার স্কুল থেকে পাঠানো হয়েছে।


এরপরই সাইমা খোলার সঙ্গে সঙ্গে শহীদ তার মুখ চেপে ধরে। এসময় সাইমার মা রেজিয়া খাতুন এগিয়ে এলে রায়হান তাকে ছুরি মারে বলে বাবুল আক্তার জানান।
“পরে দুজন মিলে রেজিয়া ও সাইমাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে এবং তাদের পায়ের রগ কেটে দেয়। ”
ঘটনার পর শহীদ ওই বাসায় পোশাক পাল্টে একটি লুঙ্গি পরে বেরিয়ে যায়। খুনের পর ওই বাসা থেকে রক্তাক্ত শার্ট-প্যান্ট ও একটি ব্যাগ উদ্ধার করেছিল পুলিশ।


ঘটনার দিন নিহত সাইমার বড় ভাই সাঈদ রেজা হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রায়হান কয়েকদিন ধরেই তার বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল।
এ নিয়ে দুই জনের মধ্যে ঘটনার কয়েকদিন বাগবিতণ্ডাও হয় বলে জানান সাঈদ রেজা।
গ্রেপ্তারের পর আবু রায়হান পুলিশের কাছে দাবি করেন, নিহত সাইমার সঙ্গে তার ‘সম্পর্ক’ ছিল। সম্প্রতি সাইমা সম্পর্ক রাখতে না চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি খুনের পরিকল্পনা করেন।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।