আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরব আমিরাতে বাঙালিদের সমস্যা ও সম্ভাবনা

আরব আমিরাতে বাঙালিদের সমস্যা ও সম্ভাবনা
লুৎফুর রহমান

আরব আমিরাত ও বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে। দু দেশের বয়সই সমান। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রবাসে আসা অদক্ষ শ্রমিকদের কারণে পিছিয়ে আছি আমরা। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সত্তর দশকে কিছু লোক আসেন এ আমিরাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে। কেউ কেউ আরব আমিরাতের নাগরিকত্বও পেয়েছিলেন।

২০১০ সালে আরব আমিরাতে বাংলাদেশীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ লাখ। কিন্তু বাংলাদেশীদের জন্যে আমিরাতে ভিসা বন্ধ হয় ২০১২ সালের আগস্ট মাসে। তখন থেকে এ সংখ্যা কমতে থাকে। অবৈধ প্রবাসীদের ধরপাকড়, সাধারণ ক্ষমা (আউটপাস) এ দেশে যাওয়ায় সংখ্যা এখন ৮ লাখের কাছাকাছি। যারা আছেন অনেকেই চিন্তায় পার করছেন আপন দিনরাত।

ইমিগ্রেশন ভিসা ও আরবীর ঘরের ভিসা ছাড়া সকল ধরণের লেবার ভিসা বন্ধ। এমনকি নেই ওয়ার্ক পারমিট ও অন্য কোস্পানীতে কাজ করার সুযোগ আমিরাতে থাকা বাঙালিদের। এ জন্যে দু চোখের স্বপ্ন যেন অকালে হারিয়ে যেতে বসেছে।
এখানে আসা লোকেরা বেশিরভাগই অশিক্ষিত আর অসচেতন। ৩ লাখ টাকায় একটি ভিসায় আসলে বেতন পায় বাংলাদেশের মাত্র ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা।

তার ভিসার টাকা উসুল করতে চলে যায় একটি ভিসার মেয়াদ ২ বছর। এ লোকটি এক সময় পাপ কাজে জড়িত হয়। নানা রকম অবৈধ ব্যবসা যেমন মোবাইলের ব্যালেন্স বেচা, পর্ণো সিডি বেচা ও খোলা জায়গায় জুয়ার আসর বসিয়ে অতিরিক্ত টাকা কামানোর চেষ্টা করে। আর এসব ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ তাই সময় সময় এদেশের সিআইডি ও পুলিশের রয়েছে কড়া নজরদারী। কাউকে ধরলে সোজা জেল হয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা এয়ারপোর্টে।

এতে শুধু একজন লোকই যাচ্ছেনা। বরং বাংলাদেশীদের ইমেজ এখানে নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ এসব। তাছাড়া একদল অসাধু কিছু মেয়েকে সাংস্কৃতিক কর্মী বানিয়ে একসময় এখানে নিয়ে আসলেও এদের নিয়ে তারা চালিয়ে যাচ্ছে দেহ ব্যবসা। এছাড়াও একজন ভারতীয় শ্রমিক লেবার হয়েও আসলে তার বেতন থাকে মিনিমাম ১৫০০ দেরহাম। কারণ সে টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মাধ্যমিকের চেয়ে কম হলেও প্রযুক্তিগত শিক্ষা আর তার দেশের সাথে আমিরাতের চুক্তি তাকে এ বেতন পাইয়ে দেয়। সে জায়গায় রয়েছে বাংলাদেশী একজন শ্রমিকের বেতন মাত্র ৮০০ দেরহাম যা বাংলাদেশী টাকায় ১৬ হাজার হয়। আমাদের টেকনিক্যাল শিক্ষা আর কুটনৈতিক চুক্তিই আমাদের দুর্দশার কারণ।

আরব আমিরাতের প্রবাসীরা দেশের রেমিটেন্স অর্জনে পিছিয়ে নেই। গত বছর থেকে রপ্তানী খাতেও আয় বেড়েছে পাঁচ গুণ।

পূর্বের ৩ বছরে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এলেও গত বছর এই খাতে এসেছে ২৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সম্প্রতি স্মারক সই করতে হবে বাংলাদেশকে।

সম্প্রতি ইউএই থেকে এ সংক্রান্ত একটি নোট পাঠানো হয়েছে সরকারের কাছে। নোটে বলা হয়েছে, আরব আমিরাতে কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়, তার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ করে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আরব আমিরাতের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফরে গেলে বাংলাদেশীেদের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধের কথা বলেছেন সেগুলোও খুব স্পর্শকাতর।

এসব অপরাধে শাস্তির মাত্রা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড হয়ে থাকে। খুন, রাহাজানি, চুরি-ডাকাতি, মানব পাচার, নিষিদ্ধ পণ্য স্মাগলিংসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে যুক্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অপরাধের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ২০১২ সালের আগস্ট মাস থেকে দেশটি বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। জানা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারি ইউএই দূতাবাস তার দেশের পক্ষে চুক্তির তাগিদ দিয়ে একটি নোট পাঠায় সরকারের কাছে। ওই নোটে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ার আগে যেসব চুক্তির তাগিদ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- (১) নিরাপত্তা সহায়তা চুক্তি, (২) দণ্ডিত ব্যক্তি হস্তান্তর চুক্তি, (৩) জনঅপরাধসংক্রান্ত বিচারিক সহায়তা চুক্তি ও (৪) অপরাধীকে দেশ থেকে বহিষ্কার চুক্তি।

সব মিলিয়ে বলা হয় আমিরাতের সাথে আমাদের কুটনীতিক সম্পর্ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে জিঢাউর রহমান, এরশাদ এমনকি আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরও সম্পর্খ খুবই ভালো। যার প্রতিফলন ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে আরবের জনপ্রিয় দৈনিক খালিজ টাইমস এর 'বাংলাদেশ' নামক বিশেষ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। এ জন্যে সরকারকে আমাদের দক্ষ ও নৈতিক কর্মী তৈরী করার কোনো বিকল্প নেই।

সম্পাদক: মাসিক মুকুল, দুবাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।