আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রিকেট-প্রদর্শনী

সে এক আশ্চর্য সময়! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙিনায় তখনো হামাগুড়ি দিচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ এই দেশেই কিনা হচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মিনি সংস্করণ—আইসিসি নক আউট বিশ্বকাপ! কত শিশু-কিশোরের মনেই না স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছিল ১৯৯৮ সালের সেই মিনি বিশ্বকাপ। চোখে-মুখে স্বপ্নের মায়াঞ্জন বুলিয়ে দিয়েছিল সদ্য এসএসসি পাস করা ঢাকার এক কিশোরেরও। নাহ্‌, ঠিক ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নয়; স্বপ্ন ক্রিকেটকে কাছে পাওয়ার, ক্রিকেটারদের কাছাকাছি আসার! নেমে পড়লেন ক্রিকেটের স্মারক সংগ্রহে।

১৩ বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে আরেকটি বিশ্বকাপ।

এবার মিনি-টিনি নয়, সত্যিকারের বিশ্বকাপ। সেদিনের সেই কিশোর তখন স্বপ্নপূরণের পথে অনেকটা পাড়ি দেওয়া গর্বিত এক তরুণ। ভাবলেন, তাঁর স্বপ্নের জগতের সন্ধানটা আরও দশজনকে জানানো দরকার। দেশ যখন বিশ্বকাপ উত্তেজনায় কাঁপছে, বেছে নিলেন সেই সময়টিই। রাজধানীর রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে আয়োজন করলেন সংগ্রহ করা স্মারকগুলোর প্রদর্শনী, যেটির উদ্বোধন করলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার।

তবে প্রচার সেভাবে করতে না পারায় অনেকটা আড়ালেই থেকে গেল তা। ২০১৩ সালে আরেকটু বড় পরিসরে প্রদর্শনীর আয়োজন করলেন জাতীয় জাদুঘরে। সংগ্রহের ভান্ডার তত দিনে সমৃদ্ধ হয়েছে আরও। এবার প্রচারের আলোটাও পড়ল, বেশ ফলাও করে প্রচার হলো টিভি-পত্রিকায়। দর্শনার্থী হলো এবার অনেক।

ক্রিকেট স্মারকসংগ্রাহক হিসেবে ছড়িয়ে পড়ল জুনায়েদ পাইকারের নাম।
সেবারের প্রদর্শনীতেই জুনায়েদ পাইকারের পরিচয় হলো বর্তমান-সাবেক বেশ কজন ক্রিকেটার ও ক্রিকেট সংগঠক-কর্তাদের সঙ্গে। জানতে পারলেন আরও এমন কজন সংগ্রাহকের কথা। ভাবলেন, সবার সংগ্রহগুলো একসঙ্গে করে যদি দেখানো যেত ক্রিকেটপ্রেমীদের! সেই ভাবনার সুতা ধরে এগিয়ে পেয়ে গেলেন নতুন দিগন্ত। ক্রিকেট স্মারকসংগ্রাহক, সমর্থক সবাই মিলে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করে ফেললে কেমন হয়! এই ভাবনাতেই পাশে পেলেন ফেসবুকে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ক্রিকেট পেজের অ্যাডমিন জাভেদ আলীকে।

দুজন মিলে সত্যিকারের ক্রিকেটপ্রেমীর অনুসন্ধানে নামলেন বাস্তব আর ভাচু‌র্য়াল জগতে। মাস দুয়েক পর মনের মতো কয়েকজনকে পেয়ে গঠন করে ফেললেন সংগঠন। গত মে মাসে আত্মপ্রকাশ করল বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোটার্স সোসাইটি (বিসিএসএস)। এই সংগঠনের ব্যানারেই ১০, ১১ ও ১২ মার্চ ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে আয়োজন করা হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট উৎসব-২০১৪। সাড়া জাগানো আয়োজনটির পর জুনায়েদ পাইকার এখন বেশ পরিচিত এক নাম।

কেউ তাঁকে বলে পাগল, কেউ বলে খ্যাপাটে, কারও কাছে তাঁকে মনে হয় অদ্ভুত। তবে নিজে তিনি নিজেকে বলেন স্রেফ ‘একজন ক্রিকেটপ্রেমী’।

ক্রিকেট অনেকের কাছে শখ, অনেকের কাছে আবেগ কিংবা তার চেয়েও বেশি কিছু। জুনায়েদের শখ-আবেগ-ভালোবাসা সব মিলেমিশে একাকার ক্রিকেটে। লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের চাকরিটা তাঁর জীবিকা, কিন্তু জীবন হলো ক্রিকেট।

স্মারক সংগ্রহের শুরু ম্যাচ টিকিট দিয়ে। বাংলাদেশের স্মরণীয় সব জয়সহ অসংখ্য ম্যাচের টিকিট আছে সংগ্রহে, যেগুলোতে পরে অটোগ্রাফ নিয়েছেন গোটা দলের কিংবা ম্যাচের সেরা পারফরমারের। পরে টিকিট থেকে অটোগ্রাফ ছড়িয়ে পড়েছে জার্সি, স্মরণীয় সব মুহূর্তের ছবি আর মিনিয়েচার ব্যাটে। বাংলাদেশের সাবেক-বর্তমান প্রায় সব জাতীয় তারকা থেকে শুরু করে অটোগ্রাফ কিংবা স্মারক আছে বিশ্ব ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম তারাদের অনেকেরই। সুনীল গাভাস্কার, ইয়ান বোথাম থেকে শুরুর করে শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রিকি পন্টিং, ওয়াসিম আকরাম, জ্যাক ক্যালিস, মুত্তিয়া মুরালিধরন হয়ে ধোনি-যুবরাজ-সাঙ্গাকারা-শোয়েব, কে নেই তালিকায়! স্টেডিয়াম ও হোটেলের লবিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, অনেক শ্রম আর ধৈর্যের ফসল এই একেকটি মণি-মুক্তা।


খরচের কথা তো মুখেই আনতে চান না। পরিবারের সায় ছিল বলে পাগলামিটা করে যেতে পেরেছেন মন দিয়ে। প্রাপ্তির ভাঁড়ারটাও তাই সমৃদ্ধ। শুধু স্মারক নয়, উপহার পেয়েছেন অমূল্য কিছু মুহূর্ত। ক্রিকেটারদের কাছাকাছি আসতে পেরেছেন, অনেক ক্রিকেটারই তাঁকে নিয়ে গেছেন বাড়িতে।

২০১১ বিশ্বকাপের সময় নিরাপত্তার সেই কড়াকড়ির মধ্যেও বাংলাদেশ দলের এক বড় তারকা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন হোটেল রুমে। জুনায়েদের জন্য একটি ব্যাটে সতীর্থদের অটোগ্রাফ জোগাড় করে দিয়েছিলেন সেই ক্রিকেটার নিজেই!

দৃক গ্যালারির ক্রিকেট উৎসবের মূল আকর্ষণও ছিল ক্রিকেট স্মারকের প্রদর্শনী। জুনায়েদের স্মারকগুলোর সঙ্গে যোগ হয়েছিল সেখানে জাভেদ ওমর বেলিম, মোহাম্মদ আশরাফুল, মুশফিকুর রহিম, সংগঠক খন্দকার জামিলউদ্দিন, ক্রীড়া সাংবাদিক নাজমুল আমিন, বিসিএসএসের কয়েকজন সদস্যের সংগ্রহে থাকা দারুণ সব স্মারক। তিন দিনের প্রদর্শনীতে থমকে দাঁড়িয়েছিল যেন সময়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অতীত আর বর্তমান এসে মিলেছিল এক ছাদের নিচে। প্রদর্শনীর পাশাপাশি উৎসবের অংশ ছিল ক্রিকেট লেখার কর্মশালা, সেমিনার ও জাতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভক্ত-সমর্থকদের অভিজ্ঞতাবিনিময়।

দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে এই আয়োজন।

ব্যক্তিগত গণ্ডি ছাড়িয়ে বিসিএসএসকে নিয়ে এখন এগিয়ে যেতে চান জুনায়েদ। ফেসবুকে সংগঠনের সদস্য ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে, নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা ৫৫০। বেছে বেছে নিখাদ ক্রিকেটপ্রেমীদেরই নিবন্ধিত সদস্য করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্মারক সংগ্রহের পাশাপাশি ক্রিকেটারদের বিভিন্ন অর্জনে সম্মাননা জানিয়ে আসছে সংগঠনটি।

সুসময়ের পাশাপাশি দুঃসময়েও দলের পাশে থাকতে চায়, হয়ে উঠতে চায় বাংলাদেশ দলের স্বীকৃত সমর্থক গোষ্ঠী। আর অতীতকে সঙ্গী করে বর্তমানের হাত ধরে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে থাকতে চায় বাংলাদেশ দলের পাশাপাশি।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।