আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোলাচিঠি

আজ সারাটা দিন মনটা একধরনের বিষন্নতার আধারে ডুবে ছিলো। কত চেষ্টা করলাম। দেশে ফোন করে কথা বললাম ও ভাই-বোন,স্ত্রী-মেয়েসহ সবার সাথে। যতক্ষন ওদের সাথে,হাসি-ঠাট্টা করে সময় কেটেছে ভালই। কিন্তু ফোন রেখে দেওয়ার সাথে সাথেই আবার তুমি ফিরে আসো।

তোমাকে কাছে টেনে কিছু একটা বলছি আর তুমি মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছো। কারন আমাদের যে ভিন্ন মত বা পথ ছিলো না, একাকার হয়ে সব এক হয়ে গিয়েছিলো। ঘুম ভাঙ্গার পর মনটা একটা অনাবিল আনন্দে ভরে ছিলো। যা আমি খুব কমই অনুভব করি। কিন্তু তারপরই যখন মনে হলো তুমি তো আর আগের তুমি নেই, মিশে আছো তারাদের মাঝে।

তখন খুজে বেড়াই তোমাকে। আর মনটা ভারী হয়ে যায় খুজে পাই না তোমাকে বলে। মনটা নিজের অজান্তেই ফিরে যায় সেই ফেলে আসা দিনগুলির মাঝে। তোমার অকালে হারিয়ে যাওয়া আসলেই তোমাকে রানীর আসনে অধিষ্ঠিত করেছে আর আমাকে ভিখারীর।
তুমিতো সব লেন-দেন চুকিয়ে মিশে গেছো,পড়ে আছি আমি তোমার স্মৃতিকে আকড়ে ধরে।

আর হ্যা তোমার শেষ প্রতিটি ইচ্ছেই আমি পূরন করছি, যখন দেশে যাই। শুধু একটা বাদে। আর রাজনীতিকেও বিসর্জন দিয়েছি চিরতরে। যে তোমার ভাষায় ছিলো, তোমার সতীন। জানি না তোমার প্রিয়জনরাও তোমাকে এতোটা মনে করছে কি না?? আমি করছি কারন আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষনে,শ্বাসে জড়িয়ে আছো বলেই।

আজ আমাকে দেখতে হচ্ছে যাদের জন্য তুমি এতো ভাবতে, (এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে আমার চেয়েও বেশী) তারা আজ প্রকৃতির নিয়মে সবাই শিক্ষায়, ক্ষেত্রে স্বামী-সংসার নিয়ে সুখী। এমনকি আমি নিজেও। আজ তোমার জন্ম বা হারিয়ে যাওয়ার দিনটিতে দেখি না তাদের কেউ তোমার উদ্দেশ্যে একটু শ্রদ্ধার্ঘ বা স্মৃতির মালা গাথতে। তবে কাদের জন্য তোমর সেই ত্যাগ আর তিতিক্ষা ছিলো?? মনে বড় জ্বালা করে করে তখন, তুমি কি তা দেখতে পাও? এদিকে আমিও সুখী। কিন্তু তুমি সবাইকে সুখী রেখে কি নিয়ে গেলে? তুমি যে চিরহতভাগিনী ছিলে, গেলেও একেবারে রিক্ত হাতেই।

তাই তোমার সম্বল। আজ তোমাকে কেউ মনে করতেও চায় না, তাদের মন খারাব হবে বলে। দেখেছো এই পৃথিবীর বাস্তবতা?
ভালবাসা আর প্রেম এক না। ভালবাসা হয় বিয়ের পর আর প্রেম আগে। আমার প্রেম সেই কৈশর থেকে।

যা আমাকে জাগিয়ে রাখে অনুক্ষন। যদিও এর মাঝে পার্থক্য অল্পই,এক পদক্ষেপের। ক্ষেত্রবিশেষে তাও না। কিন্তু আমার হিসাবে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে ভিন্ন ভিন্ন স্থান থাকে তার প্রিয়জনদের জন্য। স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি ভালবাসা, ভাই-বোনের মমত্ব আর স্নেহ।

এমনকি প্রেমিকার জন্যও একটা স্থান থাকে তাতে। যে যার রাজত্বে অধিষ্ঠিত। জানি না ঠিকমতো বলতে পারলাম কি না? বোধহয় আমার মতো ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারবে এর ব্যাখ্যা।
কেউ কেউ হয়তো আমাকে লম্পট,বিশ্বাসঘাতক হিসাবেও চিন্হিত করতে পারে। কিন্তু আমি যতদিন বেচেঁ থাকবো তুমিও থাকবে।

যে যাই বলুক না কেন? আগের সেই প্রশ্ন আজও করছি কি পেয়েছো তুমি, আর কিই বা শান্তনা? কিছুই না। তোমার সব ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অবহেলা আর বঞ্চনা ছাড়া? আজ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলি ভাল আছি,সুখে আছি। আছি ঠিকই কিন্তু হৃদয়ের গোপন রক্তক্ষরন কি কেউ দেখতে পায়? না পায় না। কারন সুখের একটা মুখোশ পড়ে আছি যে।
সেদিন স্ত্রী ও আমার আলাপে হঠাৎ উঠলো তোমার কথা।

তুমি হয়তো কোনদিন জানোও নি ও তোমাকে কতটুকু শ্রদ্ধা ও ভালবাসে। ( ওর এখন এই ২৫বছর পরেও ধারনা আমাকে ও তোমার কাছ থেকে চুরি করেছে। ) প্রশ্ন উঠলো কার অগ্রাধীকার বেশী। জানালো আমার কারন এবছরেই আমরা আমাদের বিয়ের রজত জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। জবাবে আমি হাসতে হাসতে বলি তুমি কি জানো না আমাদের প্রেমের বয়স?(আমরা সবাই একই এলাকার বলে বিয়ের আগেই ও জানতো তা।

তাছাড়া ওর বড়ভাই আমার ঘনিষ্ট বন্ধুদের একজন। যার উদ্যোগেই আমাদের বিয়েটা হয়েছে। ) জবাবে সেও দুঃখপ্রকাশ করলো তোমার ত্যাগের জন্য সাথে এও বললো যে তুমার বোকামীতেই এই পরিনাম । অস্বীকার করার পথ পেলাম না।
জানি না তুমি সব দেখছো,বুঝছো কি না? আমার কোন অভিযোগ-অনুযোগ নেই কারো প্রতি।

কিন্তু অভিশাপ আর ঘৃনা থাকবে যারা আমাদের মিলনে “একটু অভিনয়ের” মাঝে তৈরী করেছিলো বাধর প্রাচীর। তোমাকে বুঝিয়েছিলো মিথ্যেটাকে সত্যি বলে। তাই তো কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আসল বাধা হয়ে দাড়ালে স্বয়ং তুমিই। তোমাকে সন্মান করতে যেয়ে পিছিয়ে এলাম আমিও। কারন আমি কখনো তোমার মতের বিরূদ্ধে জোর করতে চাই নি।

করিও নি দীর্ঘজীবনে। তা না হলে সে সময়ে কারো সাধ্য ছিলো না আমাকে বাধা বা রুখবার। শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলো তোমার জেদের কাছেই। কি বলবো একে দূর্ভাগ্য না সৌভাগ্য। যদিও এটা আজ দু’জনের ক্ষেত্রেই দুভাবে প্রযোয্য।


শেষে বলবো যেখানে যেভাবেই থাকো না কেন, জেনে রেখো তোমার রাজের ভালবাসা আজও তোমার সাথে আছে এবং থাকবেও। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।