আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ মফিজের বিয়ে

আজ মফিজের বিয়ে। বিয়ে পড়িয়ে বউ আজই তুলে নেবে। গাড়ি টাড়ি সাজিয়ে সব রেডি। বাসা বাড়ি লাইটিং টাইটিং করা শেষ। ধুমধাম গান বাজছে।

ব্যান্ড পার্টিকে বলা হয়েছে, গাড়ি গলিতে ঢুকতে দেখলেই যেন এলাহী অবস্থা করে দেয় বাজিয়ে। পুরো এলাকা যেন খবর পায় যে মফিজ বউ নিয়ে আসছে।

কনের বাড়ি যাত্রাবাড়ী। যাত্রাবাড়ীর আশপাশের একটা কমিউনিটি সেন্টার ঠিক করেছে কনের বাবা। মফিজের বাবা সহজ-সরল মানুষ, কি বুঝে রাজি হয়ে গেলেন।

মফিজের বাসা মিরপুর ১২ নম্বরে। দোতলা বাসা। বাসার সিঁড়ি আলপনা করা শেষ। পুরো বাড়িতে উৎসবের আমেজ। শুধু মফিজ একটু চিন্তিত।

ওর বিয়ে বুধবার সন্ধ্যায়। একটা বিজি ডে। মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী যাওয়া নিয়ে সে টেনশনে আছে।

গাড়ি রেডি করে বিকেলে রওনা দিল তারা। মোট ছয়টা গাড়ি।

সাতটায় পেঁৗছানো জরুরি। কিন্তু গাড়ি ভাগে ভাগে যানজট পড়তে লাগল। যেখানে কোনো দিন জ্যাম লাগে না, সেখানে আজ ট্রাক নষ্ট হয়ে বসে আছে। মগবাজার পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে ছয়টা।

মফিজের পানির পিপাসা পেল।

মাত্র মগবাজার! যাত্রাবাড়ী যাবে কখন? গাড়িতে মফিজের বাবা ঘুম দিল। পেছনের গাড়িগুলোর যাত্রী পানিস্বল্পতায় ভোগা রোগীর মতো কাতর। একজন ওর স্যালাইন গুলে সবাইকে খাওয়াচ্ছে। ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মাইক্রোতে ১৮ জন। দুই তিনজন যে এখনো ফিট হয়ে যায়নি সেটাই ভালো।

রাস্তায় কনে বাড়ি থেকে ফোন এলো। 'বাবা মফিজ, আসবা না আজকে?' মফিজ থতমত খায়। আসবা না আজকে? এটা কেমন প্রশ্ন? সে উত্তর দেয়, 'জি, জি, আসব'। আবার একটু পর কনে বাড়ি থেকে ঘটকের ফোন, 'মফিজ ভাই, বিয়া কি ক্যানসেল?' মফিজ বলে, 'মানে কি? আমি জ্যামে' ঘটক বলে, 'নাইমা হাঁটা দেন। সবাই ভাবতেছে বিয়া ক্যানসেল।

অতিথিরা অনেকে যাইতেছে গা'। সব শেষে ফোন দিল কনের বড় ভাই। যাত্রাবাড়ীর ছেলে, একটু মাথা গরম। 'কিরে মফিজ, বিয়া করবি না? আমার বইন কি এমনই ফেলনা? তোরে আমি পদ্মায় ভাসায় .....' মফিজ বলে, 'আমি আসতেছি। ' বলেই সে ঢোক গেলে।

এমনিতেই সাঁতার জানে না, তার ওপর পদ্মায় যেই স্রোত, বঙ্গোপসাগর দিয়ে ভারত মহাসাগরে চলে যাবে তার বডি।

মফিজ যাত্রাবাড়ী পৌঁছল রাত সাড়ে এগারোটায়।

বিয়া পড়ানো হলো। কনে ঘুমে ঢুলছে। কবুল বলার সময় কাঁদতে হবে, এটাও ভুলে গেছে।

সেটা দেখে মফিজেরই কান্না পেল। জ্যাম তার জীবনের সব কিছু কেড়ে নিল দেখা যাচ্ছে।

বিয়ের নিমন্ত্রণের খাবার দেওয়া হলো। মফিজের বাবা বলে ওঠেন, 'বেয়াই সাব, পোলাউটা চুকা চুকা লাগে। এঙ্ট্রা কিছু মিশাইছেন নাকি?' কনের বাবা বলে, 'রাত একটার দিকে সব পোলাউ-ই চুকা লাগে।

দুপুরের দিকে রান্না কিনা'। সবচেয়ে টক হয়েছে মুরগি। মুখে নিয়ে চাবানো যায় না, এক প্রচেষ্টায় সবাই গিলে ফেলতেছে।

'রান্না কেমন হয়েছে জামাই? পোলাউ আরেকটু দেই?' বলে ওঠে কেউ। পাশ থেকে বরপক্ষের একজন টিপ্পনি কাটে, 'সাথে ফুচকাটাও দিয়েন।

টকটা ভালো হইছে'।

বউ তুলে নিয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে রওনা দিল মফিজ। যেতে যেতে প্রায় ভোর রাত। ব্যান্ড পার্টি ঘুমিয়ে ছিল। গাড়ির আওয়াজ শুনে জাগল কিছু প্রতিবেশী।

চোখ ডলতে ডলতে এক প্রতিবেশী বলে, 'মফিজ, বাবা কি পলায়া বিয়া করলা নাকি'। মফিজের বাবা বিনয়ের সঙ্গে বলেন, 'জি না, জ্যামে পড়ছিলাম'। এক পড়শি গাড়ির ভেতর উঁকি দিয়ে বলে, 'মেয়ে কি বেহুশ? কি খাওয়াইছ? জোর করে তুলে আনছ?' সে জবাব দেয়, 'না, না, ক্লান্ত। তাই ঘুমাচ্ছে'।

বাসর নিয়ে মানুষের অনেক স্বপ্ন থাকে।

তারও ছিল। কিন্তু বাসায় পা রাখতেই একটা কাক কা করে উঠল। ভোর হবে হবে, একটু আলো পুব আকাশে দেখা দিল বলে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। যানজট কেড়ে নিল তার বাসর রাত।

এমন সময় জেগে উঠল ব্যান্ড পার্টির দল, সারা রাত ঘুমিয়েছে। পুরো জোশে বাদ্য বাজানো শুরু করল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুতে গেল মফিজ।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।