আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরও দীর্ঘ পরাজয়ের মালা

ম্যাচ শেষ হতে না-হতেই পাকিস্তান দলকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করলেন ইমরান খান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের পরও করেছিলেন। তাই বলে বাংলাদেশকে হারানোর পরও?
প্রশ্নটা উঠতে পারে জেনেই কি না ইমরান মনে করিয়ে দেওয়া কর্তব্য মনে করলেন, টি-টোয়েন্টিতে দুর্বল দল বলে কিছু নেই। কম ওভারের খেলা মানেই আপসেটের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া।
রাজনীতির কণ্টকাকীর্ণ বৃহত্তর জগতে জড়িয়ে যাওয়া সাবেক পাকিস্তান অধিনায়কের মনোজগতে ক্রিকেট অনেক দিনই আবেদন হারিয়ে বিগত জনমের স্মৃতির বুদ্বুদ।

এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা তিনি আদৌ দেখছেন তো!
দেখলে তো তাঁর বোঝার কথা, ওই শাশ্বত নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাংলাদেশ এখানে ‘বড়’ দল ‘ছোট’ দলের ব্যবধান বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় কী আশ্চর্য সফল! কাগজে-কলমে অন্য দলগুলোর সঙ্গে যে পার্থক্য, ম্যাচের পর ম্যাচ আশ্চর্য ‘ধারাবাহিকতায়’ ম্যাচের ফলাফলেও সেটির প্রতিফলন রেখে যাচ্ছে!
মুশফিকুর রহিমকে এর পরও প্রতি ম্যাচের পরই ‘ইতিবাচক কিছু আছে কি না’ এই বিব্রতকর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে হচ্ছে। তিনি অবশ্য বিব্রত হচ্ছেন না। বা হলেও সেটি বুঝতে দিচ্ছেন না। বিস্ময়করভাবে কিছু না-কিছু খুঁজেও বের করছেন!
না করে উপায়ই বা কী! একটি পরাজয়ের ধাক্কা সামলানোর আগেই যে আবার আরেকটি ম্যাচ এসে হাজির হচ্ছে। অধিনায়ককে দলবল নিয়ে আবারও নামতে হচ্ছে ‘যুদ্ধে’।

গলায় পরাজয়ের মালাটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। সেই মালায় ফুলের বদলে শুধুই কাঁটা! কে জানত, দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টির এই মহাযজ্ঞ আনন্দের বদলে উল্টো এমন ‘যন্ত্রণা’ হয়ে যাবে!
টি-টোয়েন্টির অনিশ্চয়তা বাংলাদেশ একদমই প্রমাণ করতে পারেনি, এই ‘অপবাদ’ দেওয়াটা অবশ্য অন্যায় হবে। তবে সেই প্রমাণ আপসেট ঘটিয়ে নয়, আপসেটের শিকার হয়ে। হংকংয়ের কাছে পরাজয়েও কি চাইলে ‘ইতিবাচক’ কিছু খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল না? রসিকতা হচ্ছে না। ওই হার তো একটা বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে পারতই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মনে, ওরা যদি আমাদের হারিয়ে দিতে পারে, আমরা কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ভারত-পাকিস্তানকে নয়?
হারানো দূরে থাক।

টানা তিন ম্যাচ লড়াই করে হারার সান্ত্বনাটুকুও তো জুটল না। আপনি চরম আশাবাদী লোক হলে অবশ্য এখানেও ‘ইতিবাচক’ কিছু খুঁজে পেতে পারেন! ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের বিপক্ষে ৭৩ রান ও ৮ উইকেটের পর কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়ের ব্যবধান ৫০ রান। ভালো না বলুন, একটু কম খারাপ তো বটেই!
জয়-পরাজয়টা রানে নির্ধারিত হয়েছে বলেই পার্থক্যটা কোথায় রচিত হয়ে গেল, সেটি খুঁজে পেতে একদমই কঠিন হচ্ছে না। পাকিস্তান ইনিংসের তৃতীয়, ত্রয়োদশ আর ১৯তম ওভারের দিকে ফিরে তাকালেই চলছে। টি-টোয়েন্টি বড় নিষ্ঠুর খেলা।

বিশেষ করে বোলারদের জন্য। সেই নিষ্ঠুরতার প্রমাণ দিতে গিয়ে প্রায়ই কাউকে না-কাউকে ভিলেন বানিয়ে ফেলে। কাল আবার বানিয়ে ফেলল দুজনকে। মাশরাফি সঙ্গী পেলেন জিয়াউরকে। দ্বিতীয়জন এক ওভার বোলিং করেই ২২ রান দিয়ে ফেললেন।

১৯তম ওভারে সেটিকেও ম্লান করে দিয়ে মাশরাফি বিলালেন ২৪ রান। এর আগে নিজের দ্বিতীয় ওভারে ১৮ দিয়েছেন। রেকর্ড একটা প্রায় করেই ফেলেছিলেন। ৪ ওভারে রান দিয়েছেন ৬৩।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পুরো কোটা বোলিং
করে এর চেয়ে মাত্র ১ রানই বেশি দেওয়ার ‘কীর্তি’ আছে।

যেটির যুগল অংশীদার জেমস অ্যান্ডারসন ও সনাৎ জয়াসুরিয়া।
মাশরাফি-জিয়ার ওই তিন ওভারেই ৬৪ রান। যেটি ৫০ রানে পরাজয়ের কারণ হিসেবে আড়াল করে দিচ্ছে বাকি সবকিছুকে। ওই ৬৪ রানের ৪৯-ই নিয়েছেন আহমেদ শেহজাদ। যাঁর অপরাজিত ১১১ শুধু পাকিস্তানের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরি বলেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে না।

টি-টোয়েন্টি মানেই যে এলোপাতাড়ি মার নয়, দৃষ্টির জন্য প্রশান্তি ছড়িয়েও এখানে রান করা যায়, সেটির প্রমাণ হিসেবেও।
৫৮ বলে সেঞ্চুরি বলতে যেমন বোঝায়, শেহজাদের ব্যাট কখনোই বৈশাখের সেই রুদ্ররূপ হয়ে ওঠেনি। বরং সেটি ছড়িয়ে দিয়েছে শরতের স্নিগ্ধতা। সেঞ্চুরি হয়ে যাওয়ার পর মাশরাফির জন্য দুঃস্বপ্নের ওই ওভারে নো বলে লং অনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। ৬২ বলের ইনিংসে ‘খুঁত’ বলতে ওটাই।


বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি স্পিনার সাকিব ও রাজ্জাকের বোলিংয়ে অমন কোনো খুঁতও খুঁজে পাওয়া কঠিন। দুজনের ৮ ওভারে ৪১ রানে ৩ উইকেট। কিন্তু দিন শেষে সেটির কোনো মূল্যই থাকল না। তিন বলের মধ্যে ২ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে ৩ উইকেটে ৭১ বানিয়ে ফেলার উল্লাস যেমন মুছে গেল ইনিংসের বাকি ৬৪ বলে ১১৯ রানে। শেহজাদের সেঞ্চুরিতে তৈরি দিঘিতে দু-এক ফোঁটা শিশিরের জোগান দিলেন আফ্রিদি।

৯ বলে ২২ রানের ইনিংসটিই নিশ্চিত করে দিল, জিততে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
সেই সম্ভাবনা কখনো জাগেনি। জাগবে বলে আশাও বোধ হয় করেননি কেউই। ক্রিকেটের এই সংস্করণে বিশ্বসেরা স্বীকৃতির দাবিদার পাকিস্তানের স্পিন আক্রমণ ওভারপিছু ছয়ের মতো রান খরচে তুলে নিল ৪ উইকেট। এককভাবে সফলতম বোলার অবশ্য উমর গুল।

সাকিব-তামিম-জিয়ার ‘বড়’ তিনটি উইকেট নিয়ে তিনি পেসারদের মান রাখলেন।
সাকিবের ৩৮ আর পাঁচ ব্যাটসম্যানের বিশের আশপাশে রান বাংলাদেশের ইনিংসটিকেও শুধু মান রাখার মতো জায়গায়ই নিতে পারল, স্টেডিয়ামভর্তি দর্শকের মনে ক্ষণিকের জন্যও আশার আলো জ্বালাতে পারল না।
বাংলাদেশের পরাজয়ে দর্শকদের চেয়েও অবশ্য বেশি হতাশ দেখাল টেলিভিশনে ক্লোজআপে ধরা একটি মুখ। মিটমিট করে জ্বলতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার আশার প্রদীপও এক ফুৎকারে নিভিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের পরাজয়। ফেবারিট হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করে শুধুই নিয়মরক্ষার জন্য শেষ দুটি ম্যাচ খেলার যন্ত্রণার আঁকিবুঁকি তাই অস্ট্রেলিয়ান কোচের মুখে।


জীবনে প্রথম বাংলাদেশের এমন মঙ্গল কামনা বিফলে যাওয়ায় একটু রাগ হতেই পারে ড্যারেন লেম্যানের!

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৯০/৫; বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪০/৭; ফল: পাকিস্তান ৫০ রানে জয়ী

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।