আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘এমন নির্বাচন গণতন্ত্রকে কলুষিত করে’

খুন, জালভোট, কেন্দ্র দখল, জোর-জবরদস্তি করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা, বিরোধী দলের ওপর নির্যাতনসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হলো উপজেলা নির্বাচন। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, এমন নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে আস্থার সংকট।


স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সেনাশাসিত সরকারের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তারা বিরাজনীতিকীকরণ করে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে আমরা দেখলাম মানুষকে কীভাবে রাজনীতিবিমুখ করা হয়েছে।

সহিংসতার আশঙ্কায় মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। অতীতের নির্বাচনগুলোয় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী ভোটারকে ভোট দিতে যেতে দেখা গেছে। এবারের নির্বাচনে নারীদের উপস্থিতি ছিল কম। ’


তোফায়েল আরও বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা খুব সীমিত। কিন্তু চেয়ারম্যান পদের প্রভাব দেখিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব।

সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে চোরাচালানি দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, গাজীপুর-কেরানীগঞ্জের চেয়ারম্যান হতে পারলে জমির দালালি, ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, খুলনা-যশোর হলে চিংড়ি ঘেরের দখল নিতে পারবেন। রাজনীতির যে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে তার অন্যতম উদাহরণ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বাড়াবাড়ি। ’

নির্বাচন কমিশন তাঁর ভাষায় সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পালন করেছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জালভোট, কেন্দ্র দখল, সরকারবিরোধী দলের প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জন—বিষয়গুলো ভোটারদের মনে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যে অভিযোগগুলো উঠছে, নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে সেগুলো ভালো করে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া।


তবে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সাখাওয়াত হোসেন সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই শক্তভাবে বিষয়গুলো হ্যান্ডেল করা উচিত ছল। তারা কতটা কী করেছে আমি জানি না। তবে এ ধরনের নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কলুষিত করে। নির্বাচন ব্যবস্থায় ভোটারদের আস্থার সংকট সৃষ্টি করে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেছেন, আগের চার দফা নির্বাচনে উত্তরোত্তর সহিংসতা বেড়েছে। এ দফায় দৃশ্যমান সহিংসতা কম কিন্তু অদৃশ্য ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে ব্যাপকভাবে। নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। ভোটাররা আসছেন, বাধা দেওয়া হচ্ছে না। আঙুলে অমোচনীয় কালি লাগিয়ে বলা হচ্ছে ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।

দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রতিপত্তিশালী বলে মানুষের সামনে দাঁড় করাতে পারছেন, তাঁরাই নির্বাচনে জয়ী হচ্ছেন।


কলিমুল্লাহ বলেন, ‘১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে যখন যুদ্ধ হচ্ছিল, তখন আশপাশের কৃষকেরা বলছিলেন, “সকাল-বিকাল রাজা পরিবর্তন হলে আমাদের কী। ” সে পরিস্থিতির দিকেই এগোচ্ছে দেশের লোকজন। ’

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।