ক্রিকেটের প্রতি বাংলাদেশিদের ভালোবাসার গভীরতা বোঝা যায়, চৈত্রের আগুন ঝড়া দিনে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারির দিকে তাকালেই। মাথার ওপর খাঁ খাঁ রোদ, তাপমাত্রা ৪০-এর কাছাকাছি। প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করেও দর্শকরা লাল-সবুজ পতাকা হাতে স্টেডিয়ামে হাজির। প্রাণোচ্ছ্বাসে তারা স্টেডিয়ামে ঢোকেন ঠিকই কিন্তু বের হন হতাশার বোঝা মাথায় চেপে।
একের পর এক হার দেখতে কার-ই বা ভালো লাগে! শুধু তো আর হার নয়, সুপার টেনের তিন ম্যাচের তিনটিতেই ভয়াবহ লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে টাইগারদের।
দর্শকরাও অভিমানে ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়েছেন বার বার! অনেকে কঠোরভাবে শপথ করেছেন, 'আর বাংলাদেশের খেলাই দেখব না'! তবে এই অভিমানের স্থায়ীকাল হয়েছে পরের ম্যাচের আগ পর্যন্তই। টাইগারদের খেলার দিন যথারীতি ম্যাচ শুরুর আগেই স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ। ঠিক আগের মতোই আবারও তারা আশা নিয়ে স্টেডিয়ামে যান, টিভির সামনে বসেন। হয়তো আজও তার পুনরাবৃত্তিই ঘটবে! অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচেও জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করবেন দেশবাসী। আর একটি জয়ই যে দূর করে দিতে পারে সব হতাশা।
কিন্তু জয় নামের সেই 'সুখ পাখি'র দেখা কি আর পাবেন মুশফিকরা? হতাশার মোড়কে ঢাকা বাংলাদেশ কি আবার নতুন করে জেগে ওঠার উপায় খুঁজে পাবে আজ মিরপুরে! প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যাদেরকে ধরে নেওয়া হয়েছিল ভবিষ্যৎ চ্যাম্পিয়ন বলে! তাদের অবস্থাও শোচনীয়। পর পর তিন ম্যাচেই হেরেছে তারাও। এক দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়েও অসিদের হতাশার জায়গাটা অনেক বেশি প্রসারিত। এই টুর্নামেন্টে ভাগ্য তাদের সহায় ছিল না মোটেও।
নতুবা ফর্মের তুঙ্গে থাকা দলটির এমন অবস্থা হবে কেন? এবারের অস্ট্রেলিয়া দলটি এমন সব ক্রিকেটার নিয়ে গঠিত, যাদের ১১জনই ম্যাচের চেহেরা বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। অথচ টানা তিন ম্যাচে হেরে তারা টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচটি ছাড়া পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচ দুটি ছিল অসিদের হাতেই। কিন্তু শেষ ওভার বিড়ম্বনায় হেরেছে দুটিতেই। তাই আজ হয়তো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা মরিয়া হয়ে সান্ত্বনার জয়টা পাওয়ার চেষ্টা করবেন।
কিন্তু অসিদের হতাশার ছবিটা কি আর একটু দীর্ঘ হতে পারে না -এমন প্রত্যাশা করবেন আজ টাইগারভক্তরা।
হারের বৃত্তে আটকেপড়া বাংলাদেশের আজ আর পিছু তাকানোর সুযোগ নেই। নেই কোনো চাপও। তবে একটা জয় বড্ড বেশি প্রয়োজন। কিন্তু টাইগাররা যেভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, আশা করাটাও তো বোকামি।
টি-২০ বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচেই টাইগারদের শরীরী ভাষা ছিল হতাশাব্যঞ্জক। মুশফিকরা যেন মাঠে নামার আগেই হেরে বসে থাকেন। গত দুই বছর মাঠে মুশফিকদের এমন হতাশার ছবি চোখে পড়েনি। হতে পারে সেটা একের পর এক হারের কারণে, কিংবা অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। তাছাড়া ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, এই দোষ শুধুমাত্র ক্রিকেটারদের নয়, তাদেরকে উজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড! কেননা হারলে এমনই চাপে থাকে ক্রিকেটাররা।
ঠিক এমন সময় মাথার ওপর থেকে যেন ক্রিকেট বোর্ডও ছাতাটা সরিয়ে নিয়েছে। যার ফলে দিকভ্রান্ত হয়ে শুধু পরাজয়ের তালিকাটাই দীর্ঘ হচ্ছে।
বাংলাদেশের ব্যর্থতার শুরু শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ থেকেই। তারপর এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ। তবে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হারলেও চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।
কিন্তু বিশ্বকাপে তো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছিটেফোঁটাও নেই। উল্টো বাংলাদেশ হংকংয়ের মতো 'ক্রিকেট নবজাতকে'র কাছে হারের লজ্জা পেয়েছে। তারপরেও সান্ত্বনা ছিল মুশফিকরা সুপার টেনে সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু টানা তিন ম্যাচে লজ্জার পর এখন যেন প্রত্যাশা করতেও ভয় পাচ্ছেন দর্শকরা! তারপরেও আজ হয়তো প্রত্যাশার কুপিটা জ্বালিয়েই রাখবেন ক্রিকেটামোদীরা। যদি কিছু ঘটেই যায়! তাহলে শেষটা অন্তত মনের মতো হয়ে থাকবে।
আর সেই শেষ ভালো দেখার অপেক্ষায় আজ মিরপুরের দিকে তাকিয়ে থাকবেন দেশবাসী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।