আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি শাফিক আফতাবের একগুুচ্ছ কবিতা

বসন্তে কার্তিকে গুণগুণ ধ্বনি তুলে /
শাফিক আফতাব/

জীবনে কোনো সঞ্চয় নেই, ধু ধু মরু
সেই দীনতা দেখে তুমি ভয় পেয়েছিলে
আমি তবু মৌসুমী কুকুর, বেড়ি দিয়েছিলাম
যদি থাকো এক কার্তিক।

মনিবের বাড়ি পাহাড়ায় তোমাকে আগলাতে পারিনি
জীবনের বিকাশে উর্ধ্বমুখি বৃক্ষ
ছুঁইতে চেয়েছো আকাশের নীল
বাড়ির প্রাচীর ধস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ __
আমার প্রেম তাই ভাগাড়ের জিপসাম।

জুয়ার আসর ফেরা নিঃস্ব জুয়ারু
তবু যাত্রাপালাগান তার মর্মে তোলপাড় তোলে
বসন্তে কার্তিকে গুণগুণ ধ্বনি তুলে
তবু সে জানায় নিবেদনের পূর্বাভাস..
যদি কোনো কার্তিকে বসন্তে পথ ভুলে আসে
কাঙ্ক্ষিত রমণী। ...........
২৯.০৩.২০১৪
আমি সুদৃশ্য বেলাভূমি /
শাফিক আফতাব /

দুঃখগুলো নিভৃতে পাড় ভাঙে, গহীন গাঙ তবু ছলাৎ ছলাৎ করে
তোমাকে ভাবি, কত গান গায় মধুকরে।

হৃদয়ের দুঃখকষ জলপ্রপাত হয়ে গড়িয়ে পড়ছে নেত্রকোণে
প্রবল ঝড়ে ভাঙছে শিশু বৃক্ষের হাত
আমি সদ্যমৃত বাবার সন্তান এদিক সেদিক দেখছি করুণার জলকণায়।



মেঘগুলো বৃষ্টি হয়না, হয় ঝড়ের তাণ্ডব
অকস্মাৎ বাজপড়া ঘরে নিঃস্ববধূর নিরালম্ব ভাবনা, আর্ত চিৎকার
তবু ধূলো ঝেড়ে সোজা হয়ে দাড়া্ই
মেরুদণ্ড করি মজবুত পিলার।

করুণায় নারী বাড়ালো ভালোবাসার হাত
পাষাণ আমলার ফাইল, ছুড়েঁ দিলাম শূন্যে
নিঃসঙ্গ বৃক্ষ বাঁচে না কি ঝড়ের তাণ্ডবে ?

এ হৃদয় পাড়-ভাঙা গহীন গাঙ
তবু পর্যটকের চোখে আমি সুদৃশ্য বেলাভূমি।
২৯.০৩.২০১৪
ভালোবাসা গর্ভবতী হয়ে জন্মাক সৌহার্দ্যের সংসার/
শাফিক আফতাব /

গর্ভবতী ধানগাছগুলো বাতাসের সাথে খেলা করে
নবদম্পতির খুনসুঁটি
তোমাকে ভেবে আমি লজ্জায় মরে যাই।

তুমি ধানগাছ, লাউপাতা, স্বর্ণলতা
আকাশের নীলে কী সুন্দর বিচ্ছূরণ
জলোচ্ছ্বাসে দহন বাড়ে
পৃথিবীর কেন্দ্রে টানে বাউলের একতারা।

চৈত্রে বর্ষাজল,তরুণীমনের উচ্ছ্বলতা
বৃক্ষের পাতায় পাতায় ধ্রুপদী সুবাস
জলের গভীর থেকে উঠে আসা তুমি এক রঙিন মাছ।



চৈত্রে মিত্রতা করি
দুটি ভূখণ্ডের পারস্পারিক লেনদেন, যাতাযাত আতিথেয়তা
নরম মৃত্তিকায় পুঁতে দেই প্রেমের চারা
ভালোবাসা গর্ভবতী হয়ে জন্মাক সৌহার্দ্যের সংসার।
২৯.০৩.২০১৪
পাতা মেলে চায় বাতাসের আদর /
শাফিক আফতাব /

অনেক বৃষ্টির পরও মেঘমালা জলেভরা
অনেক ভালোবেসে তবু ফুরায় না বেদনার ভার।

হেমন্তের ক্ষেতের মতোন ভালোবাসার ফসল কেটে তুলেছি ঘরে
পতিত ভূমিতে আর হবেনা চাষাবাদ
ভালোবাসা তবু হৃদয়ে অঙ্কুর ফোটায়
পাতা মেলে চায় বাতাসের আদর।

জীবনকে জলের মতো মনে হয়েছিলো
ভালোবাসাকে সার্বজনীন বাতাস
অথচ জীবন আজ এক জটিল জলের ঘূর্ণি
ভালোবাসা বাতাসার আপ্যায়ন।

ভালোবেসে আজ পাথরে ফোটে না ফুল
বেদনার ভারে প্লাবিত নদীর দুকূল।


২৯.০৩.২০১৪
কুকুরগণ /
শাফিক আফতাব /

কুকুরগণ ভেউ ভেউ করছেন
সামনে তাদের কার্তিক-উৎসব।

ইদানিং তাঁদের মনিবপ্রীতি বেড়ে গেছে
সাহেব চাহিবামাত্র লেজ নেড়ে নেড়ে বাড়ায় স্যালুটের হাত
অাগুন্তক-আগমনে কী সুন্দর অপমান
সাহেবের একনিষ্ঠ অর্ধ্বস্তন, পা চেটে বরাদ্দ আদায়
কার্তিক-উৎসবের।

নাম উচ্চারিতমাত্র জ্বী স্যার হ্যাঁ স্যার
‌'কালরাত জেগেছিলি'__জ্বী স্যার হ্যাঁ স্যার
'এই বদমায়েসের বাচ্চা'__জ্বী স্যার হ্যাঁ স্যার

অসহায় কুকুরের পাল
সারাটিজীবন কুর্ণিশ করে হইলি নাকাল।
৩০.০৩.২০১৪
আমার ভাবগুলো ফুটে হয় ভোরের গোলাপ।
শাফিক আফতাব /

তুমি এক অভিধান__তোমার মধ্যে
ভাব প্রকাশের অফুরন্ত শব্দের সম্ভার, উৎসবের আনন্দ
ভালোবাসার ফুলের সুবাসগুলো শব্দে শব্দে মাখা থাকে।



এই বিশ্ব সংসারে তোমার অভিধানে পেয়েছি
ভাষার প্রকাশ
নৃত্যরত নদীর নুপুর
আমার ভাবগুলো ফুটে হয় ভোরের গোলাপ।

এই মর্ত্যে কোনো শর্ত নয়
মৃত্তিকার দেহচিরে ফুটে ওঠা ফুলের মতোন বৃত্তি মেলে
আলিঙ্গন করো
মৌসুমী বাতাসের স্পর্শে মেঘেরা ঝরাক বৃষ্টি
বৃষ্টিভেজা মূর্তির মতোন তুমি ভালোবাসার অভিধান।

পৃথিবীর গবেষকগণ তোমাকে দর্শনে মাথাা চুল পাকাক।
৩০.০৩.২০১৪
নারীরে নদীর উপমা করিনা /
শাফিক আফতাব/

আমি নারীর কাছে নদীর কথা বললাম,
অমনি নদী গোস্সা করে পাড় ভাঙতে লাগলো।

প্লাবিত নদীর পলি মৃত্তিকার উর্বরতা
নারী তাই আমার কবিতা।



নদী আর নারীর গল্প শুনেছি
শিশুর মতোন আশ্চর্য অদ্ভূত অনুভবে
এ্যাডরোলালিন হরমোন জেগে দিয়েছে দেহের দুর্বাসকল।
রহস্যের প্রাচীর ভেঙে এক নভোচারি।

নদী আর নারী মিলে নক্ষত্র সুন্দর
খোসা খুলে বের হওয়া ফুলের সৌরভ
মৃত্তিকার চাক ভেঙে উঠে আসা বৃক্ষের অঙ্কুর।
নারীরে নদীর উপমা করিনা।

নদীর জলে কান পেতে শুনি নারীর গুঞ্জন,
নদী আর নারী কি সহদরা দুই বোন ?
৩০.০৩.২০১৪
সোনার পালঙ্কে দেবে রূপবতী যৌবনরস /
শাফিক আফতাব /

ঘরহীন পুরুষের ছন্নছাড়া জীবন
পথে, ফুটপাতে বাউলমন
তোমার সান্নিধ্য তবু ফুল ফোটায়।



একদা এক ফুলবতী রাত দেবে
সোনার পালঙ্কে দেবে রূপবতী যৌবনরস
নদীবাহিত পাললিক সরস।

দৈন্যের জীবনে অাসেনি অর্থনৈতিক মুক্তি
ভালোবাসা নিয়ে তাই পালালো স্বর্ণকার
সেই থেকে ছন্নছাড়া জীবন, রাতের নিঃসঙ্গ
ফুটপাত।

ভাবনা কেবলি,
ভালোবাসা কেনো চায় শিশুবৃক্ষের হাত
বাতাসের স্পর্শে কেনো সে হেসে ওঠে
ভালোবাসাহীন পুরুষ অনুর্বর তামাট মৃত্তিকা।
৩০.০৩.২০১৪
কবিতা : ইয়াবা
শাফিক আফতাব

কবিতা তুমি ইয়াবা
তাজা গাঁজা,মদ-মাগি-নেশা
কবিতা তুমি চুরুট, হিরোইন,রমনী কঙ্কণ লুট
তুমি চাও পাঠকের মার হাবা।

তুমি ঘাতক ক্যান্সার
কুঁরে কুঁরে খাও কবির হৃদয়
তুমি ঘুণে পোকা
রাত্রির নির্জনে ছিদ্র করো কবির কপাট।



কবিতা তুমি ঘোর
রমনীমিলনের স্বাদ
তুমি দেহাতীত প্রেমের সঙ্গম
তোমার জন্য কঙ্কাল হলো কবির শরীর।

কবিতা তুমি চুষে খেলে কবির রক্ত
কবির মৃত্যুর পর তাই জোটে তুমুল ভক্ত।
৩০.০৩.২০১৪
ফুটে থাকো, তাই মক্ষিকার গুঞ্জন,
শাফিক আফতাব /

তোমাকে দেখি বলে তুমি সুন্দর,
নইলে ঝরা বনফুল

চোখ মেলি বলে আলোর কদর,
নইলে অন্ধকারের সমার্থক শব্দ

ভালোবাসি বলে তোমার অহঙ্কার,
অন্যথা পতিত তামাদী জমি

ফুটে থাকো,
তাই মক্ষিকার গুঞ্জন,
ভালোবাসো বলে
আমি রাজার নন্দন

দিয়েছিলে ওড়ার আকাশ,
আমার তাই আজ পুরুষ-প্রকাশ
৩১.০৩.২০১৪

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।