আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহা নায়কের বিদায় নেই

আমি উচ্চারিত সত্যের মতো স্বপ্নের কথা বলতে চাই :: যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ :: শচীন টেন্ডুলকার ভারতবাসীর হৃদয়ে যিনি ক্রিকেটের ঈশ্বর হিসেবেই স্থান করে নিয়েছেন। বিশ্বের ক্রিকেট বোদ্ধারা কখনও তাকে অ্যাখ্যা দিয়েছেন মাষ্টার ব্লাষ্টার ব্যাটসম্যান, কখনও লিটল জিনিয়াস কখনওবা রেকর্ডের বরপুত্র হিসেবে। কিন্তু এই মহামানবটি বিগত ২৩বছর ধরে মাঠের ২২গজে যেসব কীর্তি গড়েছেন তার জন্য ক্রিকেট বিশ্ব তাকে স্মরণ রাখবে মহানায়ক হিসেবে। ক্যারিয়ারের পুরো সময় জুড়ে তিনি মাঠে নেমেছেন ১০০কোটি চাপ আর বিশ্বজুড়ে কোটি ভক্তের প্রত্যাশা পুরণের লক্ষে। এমন মহা নায়কেরা কখনও বিদায় নেন না, তিনি বেঁচে থাকবেন ক্রিকেটের অস্থিত্বের সাথে।

আমি ২৪বছর ধরে পৃথিবীর আলো-বাতাসে বড় হয়েছি। আর শচীন মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ২৩বছর ধরে। আমি ক্রিকেটকে ভালবাসতে শিখেছি শচীনকে দেখে । প্রতিটি মানুষেরই একজন ছোট্টবেলার নায়ক থাকে যার মতো হতে চায় সে। শচীন মনে হয় আমার ছোট্টবেলার নায়ক।

শতসহস্র মাইল দুর থেকেও তার বিদায় আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আমার নায়কের বিদায়ে চোখের কোণে জমিয়ে রাখা অশ্রু বেড়িয়েছে মনের অজান্তেই। প্রতিটি শিশুর মতোই আমার শৈশব শুরু হয়েছিল বাবার কিনে দেয়া ফুটবল আর ব্যাট দিয়ে। যখন ক্রিকেটটা বুঝতে শিখি চোখ আটকে যায় ইন্ডিয়ার আকাশি-নীল জার্সিতে। চমৎকার ব্যাপার হলো যতোবার খেলা দেখি ততোবারই দেখি যে দু’জন ছোটখাট গড়নের ব্যাটনম্যান মাঠে নামছেন কসরত করতে করতে।

এরমধ্যে একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান মাঠে নেমেই ছন্দময় ব্যাটিং, স্ট্রেট ড্রাইভ, কাভার ড্রাইভ, লেগে সুপার ফ্লিক, আপার কাট, কখনওবা ডান্সিং ডাউন দ্য ট্রাকে এসে ছক্কা। আবার কখনও দলের দুৰসময়ে বল হাতে ভয়ংকর সব ডেরিভারিগুলো করে বিভ্রান্ত করেন প্রতিপক্ষকে। আর এভাবেই শচীন হয়ে ওঠে আমার ছোট্টবেলার নায়ক। শচীন মাঠে নামলে আউট না হওয়া না পর্যন্ত কিছুতেই চোখ সরাতাম না টিভির পর্দা থেকে। যখন শুনলাম ক্রিকেটের এই বরপুত্র, ব্যাটিং মায়োস্ত্রো, নান্দনিক ক্রিকেটের পূজারী একদিনের আন্তর্জাতিক খেলা থেকে বিদায় নিয়েছেন।

অজান্তেই ব্যাথিত হয়ে অনুভব করেছি ভয়াবহ শূন্যতা। আমি হয়তো আবার খেলা দেখব কিন্তু ক্রিকেট বইয়ে বাঁধাই করে রাখার মতো শর্টগুলো তার ভঙিতে দেখতে পারবো না। কেউ আর রাজকীয় ভঙ্গিতে শতরান উদযাপন করবেন না। রানের পর রান, শতকের পর শতক, সবগুলো রেকর্ড দখলে নেয়ার পরও যিনি বিনীত প্রাণ সেই মহামানুষটি শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। ১৬ বছর বয়সে পাকিস্থানের বিরূদ্ধে অভিষেকের মাধ্যমে ক্রিকেট দুনিয়ার তার আগমন ঘটে।

ছোট্ট বালকটিই পাকিস্থান সফরে নাক ফাটিয়ে রক্তাক্ত হওয়ার পরও মাঠে নেমেই পরপর দুটি চার মেরে ক্রিকেট বিশ্বকে চোখ রাঙিয়ে দিয়েছিলেন। কেননা ছোট্ট ছেলেটিই যে একদিন ক্রিকেট বিশ্বের রাজাধিরাজ হবেন। এরপর একে একে পদতলে এনেছেন ক্রিকেট বিশ্বের ব্যাটিং এর সকল রেকর্ড, কতগুলো রেকর্ড নিজেই গড়ে আবার ভেঙেছেন নিজেই। দীর্ঘ পথচলায় অসংখ্যবার সমালোচকেরা তার দিকে নিন্দার তীর ছুড়েছেন। কিন্তু বিনয়ী টেন্ডুলকার সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ব্যাট দিয়ে।

নির্মমভাবে খুন করেছেন বিশ্বের বাঘা-বাঘা বোলারদের। ২৩ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শচীন খেলেছেন ৪৬৩টি ওয়ানডে । ১৮ হাজার ৪২৬ রান, ৪৯টি সেঞ্চুরি—দুটিই ওয়ানডে ক্রিকেটের অনন্য রেকর্ড। হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে ৯৬টি। ওয়ানডেতে শচীনের গড় ৪৪.৮৩।

দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রতাপের কারণে ঢাকা পরে যায় তার বোলিং কারিশমা। ওয়ানডেতে নিয়েছেন ১৫৪টি উইকেট পাঁচ উইকেট নিয়েছেন দুইবার। রেকর্ডের রাজাধিরাজ এই মহানায়কের রেকর্ডসমূহ **ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরী ও ফিফটি, সবচেয়ে বেশি নাইনটি, সবচেয়ে বেশিবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ, ম্যান অব দ্য সিরিজ এবং সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা মানুষ তিনি। **বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান, সেঞ্চুরীসহ সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটারও তিনি। **এক বছরে সবচেয়ে বেশি রান এবং সেঞ্চুরীসহ ক্রিকেটের সকল রেকর্ড তার দখলে।

**ওয়ানডেতেও যে ডাবল সেঞ্চুরী করা যায় এটাতো তিনিই শিখিয়েছেন। এই ইনিংসপি ছির তার ব্যাটিং সামর্থের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। **ওয়ানডেতে ২০১৬টি বাউন্ডারির প্রতিটিতেই ছিল শিল্পের ছোঁয়া। দলের স্বার্থে গড়েছেন অসংখ্য রেকর্ড জুটি। এতো নাতি-নাতনির কাছে গল্প শোনানোর মতো যে আমি শতকের শতক করা ক্রিকেটের ভদ্রবালক এই মহামানবের খেলা দেখেছি।

ক্রিকেটকে নান্দনিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এই মহানায়কের বিদায়ে ক্রিকেট বিশ্ব নিঃসন্দেহে তার দামি রত্নটিকে হারালো। আমি বলবো মহানায়কের বিদায় নেই বরং তিনি বেঁচে থাকবেন ক্রিকেটের পরতে পরতে। বিদায় বেলায় শ্রদ্ধার্ঘ গ্রহন করুন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।