মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত পিএসসির ২০১৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে কোটা পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে কমিশনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদনে পিএসসি বলেছে, বর্তমানে কোটা সংক্রান্ত যে নীতিমালা চালু আছে তার প্রয়োগ ‘অত্যন্ত জটিল, দুরূহ ও সময় সাপেক্ষ’।
সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ভবন।
বর্তমান কোটা ব্যবস্থায় ‘শতভাগ নিখুঁতভাবে’ উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন প্রায় অসম্ভব উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বিসিএসের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বর্তমানে প্রচলিত কোটা প্রয়োগ পদ্ধতির সরলীকরণ অপরিহার্য করতে বলা হয়েছে।
সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ভবন।
২০০৯ সালের ১৯ মার্চ পিএসসি কোটা পদ্ধতি সংস্কারে সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়।
ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, “মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও উপজাতি প্রাধিকার কোটাসমূহ জাতীয় পর্যায়ে প্রার্থী বণ্টন করা যেতে পারে; অর্থাৎ উক্ত প্রাধিকার কোটাগুলোকে পুনরায় জেলা/বিভাগভিত্তিক ভাগ করা যাবে না বা জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রাপ্য পদের সর্বোচ্চ সংখ্যা দ্বারা সীমিত করা যাবে না। ”
“এ ধরনের পদসমূহ জাতীয়ভিত্তিক নিজস্ব মেধানুক্রম অনুযায়ী উক্ত কোটায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা যেতে পারে। ”
২০০৯ সালের পর থেকে প্রতি বছরই পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনে ওই প্রস্তাব তুলে ধরে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে বলা হয়েছে।
বর্তমান ব্যবস্থায় বিশেষ বিসিএস ছাড়া অন্য সব বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনি কোটায় ৩০ শতাংশ, মহিলা কোটায় ১০ শতাংশ, উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী কোটা এক শতাংশ এবং জেলা কোটায় ১০ শতাংশ নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পিএসসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “প্রার্থীদের বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরির পছন্দক্রম এবং কোটার সঙ্গে বিভিন্ন জেলা/বিভাগের জন্য আরোপিত সংখ্যাগত সীমারেখা সংযুক্ত হয়ে এমন একটি বহুমাত্রিক সমীকরণ কাঠামোর সৃষ্টি করেছে যার নির্ভুল সমাধান করা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মানবীয়ভাবে প্রায় অসম্ভব। ”
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি সংশ্লিষ্ট তথ্য যথাসময়ে ও সম্পূর্ণভাবে কমিশনে পাঠানো হয় না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্পূর্ণ কাজগপত্র চেয়েও না পাওয়া গেলে পদোন্নতি কার্যক্রম বিলম্বিত হয়।
দ্বিতীয়বার তাগাদা দিয়েও কাজগপত্র সরবারহ না করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উক্ত বিষয়ে আগ্রহ নেই ধরে নিয়ে পিএসসি পদোন্নতি বিষয়ক কার্ক্রম স্থগিত করবে বলেও জানিয়েছে।
“সরাসরি নিয়োগে মেধাকে প্রাধান্য দিতে প্রাধিকার কোটা ৫৫ শতাংশকে কমিয়ে যৌক্তিকভাবে আনা উচিত এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রেও জ্যেষ্ঠতার চেয়ে মেধা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত।
”
সরকারের সব ধরনের পদোন্নতির ক্ষেত্রে পিএসসিও ভূমিকা ও অংশগ্রহণ থাকা প্রয়োজন বলেও প্রতিবেদনে মত তুলে ধরা হয়েছে।
পাঁচ বছরেও কোটা পদ্ধতির সংস্কারে কোনো অগ্রগতি কেন পাওয়া যায়নি তা জানতে মঙ্গলবার রাতে কমিশনের চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশ-প্রশাসনে ৩৩তম বিসিএসসর্বশেষ ৩৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে ১৫৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৫০ জন, রাজশাহীর ২০ জন, চট্টগ্রামের ৩৫ জন, খুলনার ২২ জন, বরিশালের নয় জন, সিলেটের সাত জন এবং রংপুর বিভাগের ১৬ জন নিয়োগ পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
৩৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে ২৯৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৮৮ জন, রাজশাহীর ৪৬ জন, চট্টগ্রামের ৬৭ জন, খুলনার ৩৩ জন, বরিশালের ১৯ জন, সিলেটের ১৫ জন এবং রংপুর বিভাগের পাঁচ জন নিয়োগ পেয়েছেন।
এছাড়া ৩৩তম বিসিএসে ১৪টি সাধারণ ক্যাডারে ৬২২ জন প্রার্থীর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৯৪ জন, রাজশাহীর ৮৬ জন, চট্টগ্রামের ১৩৫ জন, খুলনার ৮০ জন, বরিশালের ৪৪ জন, সিলেটের ২৬ জন এবং রংপুর বিভাগের ৫৭ জন নিয়োগ পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৩তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে ৭১ দশমিক ০৬ শতাংশ পুরুষ (৪৪২ জন) এবং ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ নারী প্রার্থী।
অন্যদিকে ৩৩তম বিসিএসে ৩২টি শিক্ষা ক্যাডারের এক হাজার ২৮টি পদে ৬৯ দশমিক ১৬ শতাংশ পুরুষ (৭১১ জন) এবং ৩০ দশমিক ৮৪ শতাংশ নারী (৩১৭ জন) নিয়োগ পেয়েছেন।
নারী-পুরুষ খতিয়ান২৯তম বিসিএসে ৭১ দশমিক ৫৪ শতাংশ পুরুষ ও ২৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ নারী প্রার্থী নিয়োগ পেয়েছেন।
আর ৩০তম বিসিএসে ৬৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ পুরুষ, ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ নারী; ৩১তম বিসিএসে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ পুরুষ, ২৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ নারী প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি।
এছাড়া ৩২তম বিশেষ বিসিএসে ৪৪ দশমিক ৯০ শতাংশ পুরুষ, ৫৫ দশমিক ১০ শতাংশ নারী এবং ৩৩তম বিসিএসে ৬১ দশমিক ৭৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ২২ শতাংশ নারী প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।