আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

শর্ত ছিল গোলকধাঁধা পেরিয়ে একটা রোবটকে পৌঁছাতে হবে সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে। শুধু তা-ই নয়, সেখান থেকে বের হয়ে অন্য একটি ঘরের মধ্যে থাকা বিভিন্ন স্থির ও গতিশীল বস্তুর স্পর্শকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকঠাক বেরিয়ে আসতে হবে। যান্ত্রিক রোবটের জন্য শর্তটা একটু কঠিনই ছিল বৈকি! তবু ঠিক ঠিক কাজটি করতে পারল একমাত্র বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করা ‘বুয়েট এক্সপনেনশিয়াল’ দল।
ভারতের আইআইটিতে অনুষ্ঠিত টেককৃতি ২০১৪তে আইএআরসি (ইন্টারন্যাশনাল অটোনোমাস রোবটিকস চ্যালেঞ্জ) রাউন্ডে ভারত, পাকিস্তান ও আরব আমিরাতের দলগুলোকে হারিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় তুলে নেয় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা এ দলটি। এ রাউন্ডে দ্বিতীয় হয় ভারতের আইআইটির একটি দল।


দেড় বছর ধরে রোবটিকস নিয়ে নিরলস কাজ করার পর এ সাফল্যে যারপরনাই গর্বিত বুয়েট এক্সপনেনশিয়াল দলের দলনেতা খালেদ বিন মইনউদ্দীন। এ দলের আরেক সদস্য আবুল আল আরাবি। দুজনই পড়ছেন বুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষে।
যশোরের ছেলে খালেদের রোবটিকসে আগ্রহের সূত্রপাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার শুরু থেকেই। আরাবির যাত্রা শুরু আরও আগে।

ছোটবেলা থেকেই রোবটিকস নিয়ে কাজ করে অর্জন করেছেন জাতীয় শিশু পুরস্কার ২০০৭ (জেলা পর্যায়ে প্রথম, বিভাগীয় দ্বিতীয়)। এরপর দুজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হয়ে গঠন করেন এক্সপনেনশিয়াল দল। দেশীয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্যের হাত ধরে সুযোগ আসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণের। ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইস্যাব) আয়োজনে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল রোবটিকস উৎসবের আইএআরসি রাউন্ডে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে টেককৃতি ’১৪তে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায় বুয়েট এক্সপনেনশিয়াল। এটি দুজনের জন্যই ছিল প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতা।

আর প্রথম প্রতিযোগিতাতেই বাজিমাত।
‘সত্যিই এমন সাফল্য অকল্পনীয়। আত্মবিশ্বাস ছিল ভালো কিছু করার। কিন্তু এতটা ভালো করব, ভাবিনি। ’ বলছিলেন খালেদ।

অন্যদিকে বিশ্বের দরবারে দেশের নাম উজ্জ্বল করার আনন্দে কীভাবে আনন্দাশ্রু ঝরে তা সেদিনই প্রথম উপলব্ধি করেন আরাবি। এ দুই উদীয়মান তড়িৎকৌশলীই ভবিষ্যতে অটোনোমাস ড্রোন, হিউম্যানয়েড রোবটসহ বেশ কিছু প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার ইচ্ছার কথা জানান। রোবটিকস ক্লাব ও আর্কাইভ গঠন করে তৃণমূল পর্যায়ে রোবটিকস পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে রোবটিকসকে অটোমেটেড প্রোডাকশন সিস্টেম ও সাধারণ মানুষের কাজে লাগাতে চান এ দুই ধীমান তরুণ।
ভারতের কানপুরে আইআইটি প্রতি এক বছর পর পর আয়োজন করে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এ মহাযজ্ঞের। প্রতিবারের মতো এবারও টেককৃতি ২০১৪-এর বিভিন্ন ইভেন্টে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও ইউএই (ইউনাইটেড আরব আমিরাত) থেকে ৩০০-এর মতো দল অংশগ্রহণ করে।

প্রতিযোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সার্কভুক্ত দেশগুলোর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
প্রতিটি দেশ থেকে তাদের দেশের চ্যাম্পিয়ন দলগুলো এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বাংলাদেশের দল বুয়েট এক্সপনেনশিয়ালের অবাক করা সাফল্যে বিস্মিত আইআইটির সমন্বয়কেরাও। ‘এ সাফল্যের পর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরও দল দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ রোবটিকস উৎসবের বিভিন্ন পর্বে অংশগ্রহণ করবে, সেই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেছেন আয়োজকেরা।

’ বলছিলেন খালেদ।
আর আরাবির মতে, বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে রোবটিকসে যতটুকু উন্নতি সাধন করেছে, তা আসলেই অকল্পনীয়। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে হয়তো রোবটিকসে চীন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের নামও উচ্চারিত হবে।
বাংলাদেশের আগ্রহী তরুণদের প্রতি পুরস্কারবিজয়ী এই দুই কৃতী শিক্ষার্থীর পরামর্শ হলো, রোবটিকসে হারজিত থাকবে। কিন্তু কখনো আশাহত না হয়ে, রোবটিকসের রেডিমেড জিনিসের ওপর নির্ভর না করে মৌলিক কাজ করার ওপর জোর দেওয়া উচিত।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হয়ে আরও অনেক প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করে দেশের নাম উজ্জ্বল করার স্বপ্ন দেখেন এ দুই উদীয়মান প্রকৌশলী।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।