আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুক রিভিউঃ '১৯৫২ ঃ একজন পাঠকের মূল্যায়ন'

বইটার পুরো নাম '১৯৫২ নিছক কোন সংখ্যা নয় ' । মোহাম্মাদ নাজিম উদ্দিনের লেখা ষষ্ঠ বই । আগেরগুলোর মত এটাও থ্রিলার । এবারেরটা কোন সিরিজের অন্তর্ভুক্ত না ।

উদ্দিনই যে বাংলাদেশে থ্রিলার চালু করার কৃতিত্ব পাবে এতে কোন সন্দেহ নেই ।

আমি ওর আগের বইগুলোও পড়েছি, ভালও লেগেছে প্রায় সব বই-ই । কিন্তু রিভিউ লেখার সময় আমি এই বইটাকে শুধুই আরও একটা বই হিসেবে ধরে লিখব ।

বইটির কাহিনির শুরু একজন সাংবাদিকের নতুন গাড়ি কিনে রাস্তায় জোরে চালাতে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় । সাংবাদিক সায়েম দেখে সে একজন মানুষের উপর গাড়ি চালিয়ে দিয়েছে । সে নিজের কাজ বিশ্বাস করতে পারে না, কারণ তার নিজের গাড়ি নতুন হলেও অন্যের গাড়ি চালিয়ে চালিয়ে সে একাজে ওস্তাদ, তাছাড়া সে সাবধান হয়েই চালাচ্ছিল ।

নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না । তার পুলিশে চাকরি করা গুলশান-বনানি থানার ওসি গোলাম মাওলাকে কল করে পুরো ঘটনা বলে সে । তখন পর্যন্ত লাশের পরিচয় জানা যায় নি দেখে তারা ঘটনার গভীরতা বুঝতে পারে নি । দেখা যায় লাশটি ভাষা সৈনিক আদেল সুফির নাতি আদনান সুফির । পুরো দেশ তাদের চিনে, মানে ।

এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত তাদের সম্মাম করে । এ অবস্থায় কেসটির দায়িত্ব মাওলা দেয় তার সাবেক প্রেমিকার ছোট ভাই মিশুকে । তরুণ সাংবাদিক আদালতে দেখায় আদানান আগেই মারা গেছিল । ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয় ।

ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়েন প্রভাবশালী এমপি আহকাম উল্লাহ, যে কিনা শীগগিরি মন্ত্রী হবেন ।

কিন্তু প্রমাণের অভাবে কিছু করা যায় না । আদেল সুফি ভাষাসৈনিক হওয়ায় তার গাড়ি নম্বর ১৯৫২, যেটি ঘটনাচক্রে আবিষ্কার করেন সায়েম । এরপর বিরাট কাহিনি শেষে দেখা যায় আহকাম উল্লাহ'র ছেলে দোষী, তার সহযোগী আজমত দোষী, ভদ্রলোক নিজেও দোষী আরেক অপরাধে ।

কাহিনি হিসেবে খুব একটা খারাপ নয় এই বই, তবে অযাচিত বড় করা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু ভাবেই । একটা পর্যায়ে গিয়ে পুরো কাহিনি বোঝা যায় ।

এমনকি কেউ যদি মনে করে পাঁচ পৃষ্ঠা বাদ দিয়ে পড়বে তাতেও খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না, আসলে সমস্যা হবে না । বইটি লিখতে গিয়ে লেখক যে কোন রকমেরই রিসার্চ করে নি তা পরলেই বুঝা যাবে । তিনি নিজেই বলেছেন তরুণ নির্মাতা কাজি আসাদের কাছ থেকে শুনে বাসায় এসে লিখে ফেলেন । ষষ্ঠ বইয়ে এসে উনার এরকম আচরণ ভালো দেখায় না। পুরো বইটাতে গভীরতা আসলেই কম ।

আর প্রেম কাহিনি গুলো রীতিমত ন্যাকামোর পর্যায়ে, মোটেও ভালো লাগে নি । পুরো প্রেমের অংশ বাদ দিলেও বইটার কিছু যায় আসতো না ।

দেখুন সত্যি ঘটনার উপর বই লেখা এই প্রথম নয় । ফ্রেডরিক ফরসাইথ নিজের 'ডগস অব ওয়ার' বইটা লিখতে গিয়ে আফ্রিকান একটা দেশে ক্যু পর্যন্ত করিয়েছিলেন । তবে ঐ বইয়ের সাথে এই বইয়ের বিস্তর ফারাক ।

লম্বা না করে যদি উদ্দিন কাহিনির কন্টেন্ট এবং সারপ্রাইজ নিয়ে মাথা ঘাঁটাতেন তবে বইটি আরও ভালো হতে পারত । কাহিনিটা খুব ভালো ছিল, এত সুন্দর কাহিনি উদ্দিনের মত লেখক এভাবে উপস্থাপন করবেন ভাবা যায় না । আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে হতাশ হয়েছি । আমি উনার ফ্যান তবে, বইটি এক কথায় খুব ভালো হয় নি ।

শুধু শুধু বড় করতে গিয়ে বইটির পরিসর বেড়েছে, পৃষ্ঠা বেশি তাই দামটাও তুলনামূলক বেশি ।

২৬০ টাকা দিয়ে এই বই কিনে অনেকেই আক্ষেপ করবে নিশ্চিত । তবে উদ্দিনের প্রশংসা করতে হবে তার এই উদ্যোগ নিয়ে । আর কেউ সাহস করে নি কিন্তু ।

পৃষ্ঠাগুলো ভালই, বানানে কিছু মার্জনীয় ভুল আছে । কাভারটা বরাবরের মতই সাধারণ, এই জায়গায় বাতিঘর আরও উন্নতি করতে পারে সন্দেহ নেই ।

সব শেষে, থ্রিলার পড়ার একটা ভালো দিক হল সারাদিনের ক্লাস আর টিউশনি করিয়ে একটা চাঙা ভাব আসে, এই বইয়ে এই জিনিসটার অভাব চোখে পড়ার মত । উদ্দিনের আগামী বইগুলো ভালো হবে এই প্রত্যাশা থাকবেই । আর এই একটা বই দিয়ে উদ্দিনকে বিচার করা ভুল হবে । তার আগের বইগুলো নিঃসন্দেহে ভালো । অনুবাদগুলোর কিছু কিছু তো শীর্ষ মানের ।

এই বইটা তাই পড়লেন নাহয় লেখক কে ভালবেসেই । আর যাই হোক উদ্দিন খারাপ লেখে না । '১৯৫২ নিছক কোন সংখ্যা নয় ' এর ব্যতিক্রম নয় । পড়েই ফেলুন ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।