আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চার রাজ্যের ছয় আসনে ভোট শুরু

সরকারদলীয় সাংসদ এনামুল হকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এনা প্রপার্টিজ উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের মতো রাজশাহী সিটি সেন্টার নির্মাণকাজেও ব্যর্থ হতে চলেছে। দুটি প্রকল্পেই সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে সরকারকেই বিপদে ফেলেছেন রাজশাহী-৪ আসনের এই সাংসদ।
নির্ধারিত ৮৭ শতাংশ কাজের স্থলে মাত্র ১ দশমিক ১৫ শতাংশ কাজ করায় উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প থেকে সাংসদের প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়। একইভাবে রাজশাহী সিটি সেন্টার নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ৩১ মার্চ। সময় শেষ হলেও এখন কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ।


উত্তরায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ‘এ’ ব্লকে এনার কাজ বাতিল করে ইতিমধ্যেই ‘বি’ ব্লকে ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। এর ফলে নতুন বাজারদরে আগের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ খরচ বাড়বে। তবে নিজেকে ব্যর্থ মনে করেন না এনামুল হক। কাজ বাতিল হওয়ার পর তাঁর প্রতিষ্ঠান এনা রাজউকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছে।
রাজশাহী সিটি সেন্টার ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প—দুটিতেই এনা গ্রুপের মালিক কাজ পেয়েছিলেন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ ধারা লঙ্ঘন করে।

এই ধারা অনুযায়ী, কোনো সাংসদ সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারেন না।
রাজশাহী সিটি সেন্টারে এনা জামানতও দেয়নি: রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পুরাতন ভবনের জায়গায় ১৬ তলাবিশিষ্ট সিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য চার বছর আগেই এক কোটি ২০ লাখ টাকা জামানত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এনা প্রপার্টিজ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই টাকা জমা দেয়নি।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে সিটি সেন্টার নির্মাণকাজের দরপত্র ডাকা হলে শুধু সাংসদের প্রতিষ্ঠানই দরপত্র জমা দেয়। কাজও পায় প্রতিষ্ঠানটি।

২০০৯ সালের ১৪ অক্টোবর করা চুক্তি অনুযায়ী, ১৬ তলার মধ্যে মাত্র ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ সিটি করপোরেশন পাবে। বাকিটা পাবে এনা প্রপার্টিজ। চুক্তি সম্পাদনের ৩০ দিনের মধ্যে জামানত হিসেবে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা এনার জমা দেওয়ার কথা। সিটি করপোরেশন বারবার চিঠি দিলেও এনা টাকা জমা দেয়নি।
সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।

সভায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সচিব বলেন, নির্মাণ সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা দরপত্র ও চুক্তিপত্র দলিলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সভায় উপস্থিত এনার প্রতিনিধিকে দ্রুততার সঙ্গে জামানত দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
এর পরও এনা টাকা দেয়নি। এই অবস্থায় এনা আরও সময় চেয়ে আবেদন করলে সিটি করপোরেশন ৭ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছে। ৭ এপ্রিলও পার হয়েছে, এনা টাকা দেয়নি।

আবার সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, সিটি সেন্টারের পাশে অবস্থিত সোনাদিঘি সংস্কার ও উন্নয়নকাজ (কমন ফ্যাসিলিটিজ) নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করার কথা। এর মধ্যে রয়েছে একটি মসজিদ, তথ্যপ্রযুক্তি পাঠাগার, এমপি থিয়েটার, হাঁটার পথ, ল্যান্ডস্কেপিং, দিঘির এক পাশে গ্যালারি, সাবস্টেশন, জেনারেটর ও পাম্প হাউস, দিঘির দক্ষিণ-পূর্ব পারের উপ-ভাড়াটেদের পুনর্বাসন, পয়োনিষ্কাশন, ভেতরের পানি সরবরাহব্যবস্থা, সীমানাপ্রাচীরসহ আরও কিছু নির্মাণকাজ এনা প্রপার্টিজের নিজ খরচে করে দেওয়ার কথা। কিন্তু ওই সব কাজে হাতই দেয়নি এনা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সিটি সেন্টার নির্মাণের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে।

কাজের ধীরগতি দেখে তা দ্রুত করতে এনাকে অনেকবার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এখন আইনি পদক্ষেপ নিতে গেলে এনার চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে।
এনা প্রপার্টিজের নির্বাহী পরিচালক মমিনুল ইসলাম দাবি করেন, এক বছর আগে সিটি সেন্টারের নকশা অনুমোদন করা হয়েছে। ওই সময় থেকে তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে, চুক্তি সম্পাদনের সময় থেকে নয়।
জামানত না দেওয়ার ব্যাপারে মমিনুল বলেন, সিটি সেন্টার নির্মিত হচ্ছে যৌথ উদ্যোগে।

এটি অন্য ঠিকাদারি কাজের মতো নয়। এ জন্য তাঁরা শুরুতেই ওই জামানতের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিলেন। তবু যখন চুক্তিনামায় আছে, খুব শিগগির ওই টাকা জমা দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, এনার বক্তব্য ঠিক নয়। নকশা অনুমোদনের সঙ্গে কাজের মেয়াদের কোনো সম্পর্ক নেই।

চুক্তির পরপরই কাজ শুরু করে এনা।
উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প: উত্তরায় অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের বিষয়ে এনা প্রপার্টিজ এবং কোরিয়ান অংশীদার ডুঙ্গার সঙ্গে রাজউকের চুক্তি হয় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। রাজউকের ২৬টি ১৬ তলা ভবন নির্মাণের কথা ছিল। চুক্তির সময়ই জমি এবং চুক্তির পরপরই নকশা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
রাজউক সূত্র জানায়, ২০১২ সালের শুরুতে রাজউকের আহ্বানের ভিত্তিতে ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার গ্রাহক।

এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু কাজ শুরুর দুই বছরেরও বেশি সময়ে নির্ধারিত কাজের ন্যূনতম অংশও করতে পারেনি এনা প্রপার্টিজ। কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানকে চার দফায় নোটিশ করে রাজউক। সর্বশেষ গত ৩ মার্চ এনা প্রপার্টিজ ও অংশীদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে করা চুক্তি সম্পূর্ণ বাতিল করে চিঠি দেওয়া হয়। ৫ মার্চ রাজউকের বিরুদ্ধে জজকোর্টে মামলা করে এনা ও ডুঙ্গা।


তবে চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে নয়, তারা মামলা করে ‘সিকিউরিটি মানি’ বাজেয়াপ্ত না করার জন্য। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের বিভিন্ন গুচ্ছের (লট) জন্য এনা-ডুঙ্গা প্রাইম ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে সিকিউরিটি মানি রেখেছিল। যা প্রতি গুচ্ছের ব্যয়ের (৭০ কোটি টাকা) ১০ শতাংশ। চুক্তি অনুযায়ী, রাজউক ওই অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে পারে।
জানতে চাইলে এনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাংসদ এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পর্যায়ক্রমে অন্য বিষয়ে মামলা হবে এবং রাজউকের সঙ্গে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে এনা।


এদিকে এনা প্রপার্টিজের মামলার বিরুদ্ধে রাজউকও আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তা ছাড়া এ ব্লকে ফ্ল্যাট বরাদ্দপ্রাপ্ত গ্রাহকেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বি ব্লকে সম-আয়তনের ৫৯টি ১৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। ৩ এপ্রিল চারটি গুচ্ছের জন্য (১৬টি অ্যাপার্টমেন্ট) দরপত্র আহ্বান করে রাজউক। রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম জানান, পর্যায়ক্রমে অন্য গুচ্ছগুলোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।