আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উচচ শিক্ষার র্স্ব্গরাজ্য জার্মান // বাঙালী মোসলমান চলে আসুন জার্মানে//


জার্মানি






Bundesrepublik Deutschland
সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী জার্মানি



পতাকা কোট অফ আর্মস

নীতিবাক্য

"Einigkeit und Recht und Freiheit" (জার্মান)
"ঐক্য এবং ন্যায়বিচার এবং মুক্তি"

জাতীয় সঙ্গীত

Third stanza of
Lied der Deutschen (জার্মানদের সঙ্গীত)




জার্মান সরকারের সীল

জার্মান সরকারের সীল



জার্মানি এর অবস্থান (গাঢ় সবুজ)– ইউরোপে (সবুজ ও গাঢ় ধূসর)– the ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ (সবুজ) —

জার্মানি এর অবস্থান (গাঢ় সবুজ)
– ইউরোপে (সবুজ ও গাঢ় ধূসর)
– the ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ (সবুজ) —
রাজধানী বার্লিন
৫২°৩১′ উত্তর ১৩°২৩′ পূর্ব

বৃহত্তম শহর
রাজধানী

রাষ্ট্রীয় ভাষাসমূহ
জার্মান
জাতিগত গোষ্ঠী
৮১% জার্মান
৭% অন্যান্য ইউরোপীয়
৪% তুর্কি
২% এশিয়ান
৬% অন্যান্য


জাতীয়তাসূচক বিশেষণ
জার্মান

সরকার
যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র
- রাষ্ট্রপতি ইউয়াক্ষেম গাওক
- চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল
- বুনডেসটাগের সভাপতি নোবার্ত লামার্ত
- বুনডেসরাটের সভাপতি ভিনফৃদ কৃটসমান

আইন-সভা


- উচ্চকক্ষ বুনডেসরাট
- নিম্নকক্ষ বুনডেসটাগ

প্রতিষ্ঠাপন

- পুণ্য রোমান সম্রাজ্য ২রা ফেব্রুয়ারি, ৯৬২
- একীকরণ ১৮ই জানুয়ারি, ১৮৭১
- যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র ২৩শে মে, ১৯৪৯
- পুনঃ একীকরণ ৩রা অক্টোবর, ১৯৯০

ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তি
২৫শে মার্চ, ১৯৫৭

আয়তন

- মোট ৩৫৭ বর্গ কিমি. (৬৩তম)
১৩৭ বর্গ মাইল
- জলভাগ (%) ২.৪১৬

জনসংখ্যা

- ২০১১ আনুমানিক ৮০,৩২৭,৯০০ (১৬তম)
- ২০১১ আদমশুমারি ৮০,২১৯,৬৯৫ (১৬তম)
- ঘনত্ব ২২৫/বর্গ কিলোমিটার
/বর্গ মাইল
জিডিপি (পিপিপি) ২০১২ আনুমানিক
- মোট $৩.১৯৭ ট্রিলিয়ান (৫ম)
- মাথাপিছু $৩৯,০২৮ (১৭তম)
জিডিপি (নামমাত্র) ২০১২ আনুমানিক
- মোট $৩.৪০১ ট্রিলিয়ান (৪র্থ)
- মাথাপিছু $৪১,৫১৩ (২২তম)
জিনি (২০০৬) ২৭
এইচডিআই (২০১৩) ০.৯২০ (৫ম)

মুদ্রা
ইউরো (€) (EUR)

সময় স্থান
সিইটি (ইউটিসি+১)
- গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) সিইডিটি (ইউটিসি+২)

ড্রাইভ করা হয়
right

ইন্টারনেট টিএলডি
.de

কলিং কোড
+49
ক. ^ Danish, Low German, Sorbian, Romany and Frisian are officially recognised by the European Charter for Regional or Minority Languages (ECRML).
খ. ^ The .eu domain is also used, as it is shared with other European Union member states.

জার্মানি (শুনুনi/ˈdʒɜrməni/; জার্মান: Deutschland), সরকারিভাবে সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী জার্মানি (জার্মান: Bundesrepublik Deutschland, "বুন্ডেস্‌রেপুব্‌লিক ডয়চ্‌লান্ট্‌", উচ্চারণ [ˈbʊndəsʁepuˌbliːk ˈdɔʏtʃlant] ( listen) ), ইউরোপের অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত দেশ। এটি ১৬টি রাজ্য নিয়ে গঠিত একটি সংযুক্ত ইউনিয়ন। এটির উত্তর সীমান্তে উত্তর সাগর, ডেনমার্ক ও বাল্টিক সাগর, পূর্বে পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণে অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড এবং পশ্চিম সীমান্তে ফ্রান্স, লুক্সেমবুর্গ, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ড্‌স অবস্থিত। জার্মানির ইতিহাস জটিল এবং এর সংস্কৃতি সমৃদ্ধ, তবে ১৮৭১ সালের আগে এটি কোন একক রাষ্ট্র ছিল না। ১৮১৫ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত জার্মানি একটি কনফেডারেসি এবং ১৮০৬ সালের আগে এটি অনেকগুলি স্বতন্ত্র ও আলাদা রাজ্যের সমষ্টি ছিল।



আয়তনের দিক থেকে জার্মানি ইউরোপের ৭ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। উত্তর উত্তর সাগর ও বাল্টিক সাগরের উপকূলীয় নিম্নভূমি থেকে মধ্যভাগের ঢেউ খেলানো পাহাড় ও নদী উপত্যকা এবং তারও দক্ষিণে ঘন অরণ্যাবৃত পর্বত ও বরফাবৃত আল্পস পর্বতমালা দেশটির ভূ-প্রকৃতিকে বৈচিত্র্যময় করেছে। দেশটির মধ্য দিয়ে ইউরোপের অনেকগুলি প্রধান প্রধান নদী যেমন রাইন, দানিউব, এলবে প্রবাহিত হয়েছে এবং দেশটিকে একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে সাহায্য করেছে।

জার্মানিতে নগরায়নের হার অত্যন্ত উঁচু। বার্লিন দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।

তবে প্রাক্তন পশ্চিম রাজধানীর রাজধানী বন শহরে এখনও বেশ কিছু সরকারী অফিস রয়েছে। জার্মান ভাষা এখানকার প্রধান ভাষা। দুই-তৃতীয়াংশ লোক হয় রোমান ক্যাথলিক অথবা প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান।

জার্মানরা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বহু অবদান রেখেছে। জার্মানিতে বহু অসাধারণ লেখক, শিল্পী, স্থপতি, সঙ্গীতজ্ঞ এবং দার্শনিক জন্মগ্রহণ করেছেন।

এদের মধ্যে সম্ভবত ইয়োহান সেবাস্টিয়ান বাখ ও লুডভিগ ফান বেটোফেন সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ফ্রিডরিশ নিচা, ইয়োহান ভোলফগাং ফন গোটে এবং টমাস মান জার্মান সাহিত্যের দিকপাল।

জার্মানি বিশ্বের একটি প্রধান শিল্পোন্নত দেশ। এটির অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পরে বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম। জার্মানি লোহা, ইস্পাত, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম এবং মোটরগাড়ি রপ্তানি করে।

জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি।

১৯৪৫ সালে মিত্রশক্তি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত করে। মিত্র দেশগুলি দেশটিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে: ব্রিটিশ, ফরাসি, মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা একেকটি অঞ্চলের দায়িত্বে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা শক্তিগুলির মধ্যকার মিত্রতা ১৯৪০-এর দশকের শেষে ভেঙে গেলে সোভিয়েত অঞ্চলটি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র তথা পূর্ব জার্মানিতে পরিণত হয়। পশ্চিম-নিয়ন্ত্রিত বাকী তিন অঞ্চল একত্রিত হয়ে পশ্চিম জার্মানি গঠন করে।

যদিও জার্মানির ঐতিহাসিক রাজধানী বার্লিন পূর্ব জার্মানির অনেক অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল, তা সত্ত্বেও এটিকেও দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বহু লক্ষ পূর্ব জার্মান অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মানিতে অভিবাসী হওয়া শুরু করলে ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মানি সরকার বার্লিনে একটি প্রাচীর তুলে দেয় এবং দেশের সীমান্ত জোরদার করে।

১৯৮৯ সালে পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের বাসিন্দারা বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলে। এই ঘটনাটিকে পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদের পতন ও জার্মানির পুনঃএকত্রীকরণের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবর দুই জার্মানি একত্রিত হয়ে জার্মান ফেডারেল প্রজাতন্ত্র গঠন করে।

তবে দুই জার্মানির ভিন্ন সংস্কৃতি ও রীতিনীতির মিলন একত্রিত জার্মানির সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সমস্যার সৃষ্টি করে; উচ্চ বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস এদের মধ্যে অন্যতম।




পরিচ্ছেদসমূহ
১ ইতিহাস ১.১ জার্মানীয় জাতিগোষ্ঠীসমূহ
১.২ জার্মানীয় জাতিগোষ্ঠীসমূহ

২ বিশ্বযুদ্ধ
৩ ঠান্ডাযুদ্ধ
৪ রাজনীতি
৫ প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ
৬ ভূগোল ৬.১ পরিবেশ
৬.২ প্রানীবৈচিত্র্য

৭ অর্থনীতি ৭.১ কর্পোরেশনসমূহ
৭.২ পরিবহন

৮ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
৯ আইন
১০ বিজ্ঞান ও শিক্ষা ব্যবস্থা
১১ সামরিক বাহিনী
১২ জনসংখ্যা
১৩ খেলাধূলা
১৪ সংস্কৃতি
১৫ ছবিতে জার্মানি
১৬ আরও দেখুন
১৭ বহিঃসংযোগ


ইতিহাস
জার্মানীয় জাতিগোষ্ঠীসমূহ
ধারণা করা হয় সুপ্রাচীন নর্ডীয় ব্রোঞ্জ যুগ অথবা প্রাক-রোমান লৌহ যুগে জার্মানিতে আদি জাতিগোষ্ঠীগুলোর বসবাস শুরু হয়েছে। দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং উত্তর জার্মানি থেকে এই গোষ্ঠীগুলো দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে বসতি স্থাপন শুরু করে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে। এই সম্প্রসারণের ফলে তারা গলের কেল্টীয় গোষ্ঠী এবং পূর্ব ইউরোপের ইরানীয়, বাল্টিক ও স্লাভিক গোষ্ঠীগুলোর সান্নিধ্যে আসে। জার্মানির সেই প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে খুব অল্পই জানা গেছে।

এখন পর্যন্ত মানুষ যা জানতে পেরেছে তা হলো ঐ জাতিগুলোর সাথে রোমান সাম্রাজ্যের কিছু লিখিত যোগাযোগের দলিল প্রমাণাদির মাধ্যমে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এই তথ্যগুলোর অনেকাংশই উদ্‌ঘাটিত হয়েছে।

অগাস্টাসের রাজত্বকালে রোমান জেনারেল পুবলিয়াস কুইঙ্কটিলিয়াস ভ্যারাস জার্মানিয়াতে (রাইন থেকে উরাল পর্যন্ত অঞ্চলকে রোমানরা মাঝেমধ্যেই এই নামে ডাকতো) আগ্রাসন চালানো শুরু করে। এই আগ্রাসন চলাকালেই জার্মানির গোষ্ঠীগুলো রোমানদের যুদ্ধকৌশল সম্বন্ধে জানতে পারে। এই গোষ্ঠীগুলো নিজেদের স্বাতন্ত্র বজায় রেখেই রোমান যুদ্ধ কৌশলের অনেকাংশ রপ্ত করতে সক্ষম হয়।

৯ খ্রিস্টাব্দে টেউটোবুর্গ বনের যুদ্ধে জার্মানির চেরুস্কান নেতা আরমিনিউস, রোমান জেনারেল ভ্যারাসের নেতৃত্বে পরিচালিত নয় লেজিয়নের এক সৈন্যদলকে পরাজিত করে। এর ফলে আধুনিক জার্মানি তথা রাইন এবং দানিয়ুব রোমান সাম্রাজ্যের বাইরেই থেকে যায়।

বর্তমান জার্মানি অঞ্চলটি ৮৪৩ অব্দে ক্যারোলিঙ্গিয়ান সাম্রাজ্যের বিভাজনের ফলে সৃষ্টি হয়। সাম্রাজ্যটিতে ফ্রান্সও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর বহু শতাব্দী যাবৎ জার্মানি ছিল দুর্বলভাবে একত্রিত জমিদারিভিত্তিক কতগুলি দেশের সমষ্টি।

১৬শ শতকের পর থেকে জার্মান রাষ্ট্রগুলি ইউরোপের যুদ্ধ ও ধর্মীয় সংঘাতে ক্রমশ বেশি করে জড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ১৯শ শতকের শুরুতে ফ্রান্স জার্মান রাষ্ট্রগুলি দখল করলে জাতিগতভাবে একত্রিত এক জার্মানির জন্য জনমত প্রবল হয় এবং ১৮১৫ সালে প্রুশিয়ার নেতৃত্বে জার্মান রাষ্ট্রগুলি একটি কনফেডারেশন গঠন করে, যা ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।

১৮৭১ সালে অটো ফন বিসমার্কের অধীনে একত্রিত হবার পর জার্মানিতে দ্রুত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জার্মানি ইউরোপে আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা চালালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ১৯১৮ সালে যুদ্ধে জার্মানির পরাজয় ঘটলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

এর উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়ার ফলে নাৎসি পার্টির আবির্ভাব ঘটে। নাৎসি পার্টি ১৯৩০-এর দশকে আডলফ হিটলারের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে। ১৯৩৯ সালে জার্মানির আগ্রাসনের ফলে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বযুদ্ধ হয়।

১৯৪৫ সালে মিত্রশক্তি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত করে। মিত্র দেশগুলি দেশটিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে: ব্রিটিশ, ফরাসি, মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা একেকটি অঞ্চলের দায়িত্বে ছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা শক্তিগুলির মধ্যকার মিত্রতা ১৯৪০-এর দশকের শেষে ভেঙে গেলে সোভিয়েত অঞ্চলটি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র তথা পূর্ব জার্মানিতে পরিণত হয়। পশ্চিম-নিয়ন্ত্রিত বাকী তিন অঞ্চল একত্রিত হয়ে পশ্চিম জার্মানি গঠন করে। যদিও জার্মানির ঐতিহাসিক রাজধানী বার্লিন পূর্ব জার্মানির অনেক অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল, তা সত্ত্বেও এটিকেও দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বহু লক্ষ পূর্ব জার্মান অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মানিতে অভিবাসী হওয়া শুরু করলে ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মানি সরকার বার্লিনে একটি প্রাচীর তুলে দেয় এবং দেশের সীমান্ত জোরদার করে।

জার্মানীয় জাতিগোষ্ঠীসমূহ
ধারণা করা হয় সুপ্রাচীন নর্ডীয় ব্রোঞ্জ যুগ অথবা প্রাক-রোমান লৌহ যুগে জার্মানিতে আদি জাতিগোষ্ঠীগুলোর বসবাস শুরু হয়েছে।

দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং উত্তর জার্মানি থেকে এই গোষ্ঠীগুলো দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে বসতি স্থাপন শুরু করে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে। এই সম্প্রসারণের ফলে তারা গলের কেল্টীয় গোষ্ঠী এবং পূর্ব ইউরোপের ইরানীয়, বাল্টিক ও স্লাভিক গোষ্ঠীগুলোর সান্নিধ্যে আসে। জার্মানির সেই প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে খুব অল্পই জানা গেছে। এখন পর্যন্ত মানুষ যা জানতে পেরেছে তা হলো ঐ জাতিগুলোর সাথে রোমান সাম্রাজ্যের কিছু লিখিত যোগাযোগের দলিল প্রমাণাদির মাধ্যমে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এই তথ্যগুলোর অনেকাংশই উদ্‌ঘাটিত হয়েছে।



অগাস্টাসের রাজত্বকালে রোমান জেনারেল পুবলিয়াস কুইঙ্কটিলিয়াস ভ্যারাস জার্মানিয়াতে (রাইন থেকে উরাল পর্যন্ত অঞ্চলকে রোমানরা মাঝেমধ্যেই এই নামে ডাকতো) আগ্রাসন চালানো শুরু করে। এই আগ্রাসন চলাকালেই জার্মানির গোষ্ঠীগুলো রোমানদের যুদ্ধকৌশল সম্বন্ধে জানতে পারে। এই গোষ্ঠীগুলো নিজেদের স্বাতন্ত্র বজায় রেখেই রোমান যুদ্ধ কৌশলের অনেকাংশ রপ্ত করতে সক্ষম হয়। ৯ খ্রিস্টাব্দে টেউটোবুর্গ বনের যুদ্ধে জার্মানির চেরুস্কান নেতা আরমিনিউস, রোমান জেনারেল ভ্যারাসের নেতৃত্বে পরিচালিত নয় লেজিয়নের এক সৈন্যদলকে পরাজিত করে। এর ফলে আধুনিক জার্মানি তথা রাইন এবং দানিয়ুব রোমান সাম্রাজ্যের বাইরেই থেকে যায়।



বর্তমান জার্মানি অঞ্চলটি ৮৪৩ অব্দে ক্যারোলিঙ্গিয়ান সাম্রাজ্যের বিভাজনের ফলে সৃষ্টি হয়। সাম্রাজ্যটিতে ফ্রান্সও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর বহু শতাব্দী যাবৎ জার্মানি ছিল দুর্বলভাবে একত্রিত জমিদারিভিত্তিক কতগুলি দেশের সমষ্টি। ১৬শ শতকের পর থেকে জার্মান রাষ্ট্রগুলি ইউরোপের যুদ্ধ ও ধর্মীয় সংঘাতে ক্রমশ বেশি করে জড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ১৯শ শতকের শুরুতে ফ্রান্স জার্মান রাষ্ট্রগুলি দখল করলে জাতিগতভাবে একত্রিত এক জার্মানির জন্য জনমত প্রবল হয় এবং ১৮১৫ সালে প্রুশিয়ার নেতৃত্বে জার্মান রাষ্ট্রগুলি একটি কনফেডারেশন গঠন করে, যা ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।



বিশ্বযুদ্ধ
১৮৭১ সালে অটো ফন বিসমার্কের অধীনে একত্রিত হবার পর জার্মানিতে দ্রুত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জার্মানি ইউরোপে আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা চালালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ১৯১৮ সালে যুদ্ধে জার্মানির পরাজয় ঘটলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এর উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়ার ফলে নাৎসি পার্টির আবির্ভাব ঘটে। নাৎসি পার্টি ১৯৩০-এর দশকে আডলফ হিটলারের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে।

১৯৩৯ সালে জার্মানির আগ্রাসনের ফলে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বযুদ্ধ হয়।

ঠান্ডাযুদ্ধ
১৯৪৫ সালে মিত্রশক্তি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত করে। মিত্র দেশগুলি দেশটিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে: ব্রিটিশ, ফরাসি, মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা একেকটি অঞ্চলের দায়িত্বে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা শক্তিগুলির মধ্যকার মিত্রতা ১৯৪০-এর দশকের শেষে ভেঙে গেলে সোভিয়েত অঞ্চলটি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র তথা পূর্ব জার্মানিতে পরিণত হয়। পশ্চিম-নিয়ন্ত্রিত বাকী তিন অঞ্চল একত্রিত হয়ে পশ্চিম জার্মানি গঠন করে।

যদিও জার্মানির ঐতিহাসিক রাজধানী বার্লিন পূর্ব জার্মানির অনেক অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল, তা সত্ত্বেও এটিকেও দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বহু লক্ষ পূর্ব জার্মান অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মানিতে অভিবাসী হওয়া শুরু করলে ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মানি সরকার বার্লিনে একটি প্রাচীর তুলে দেয় এবং দেশের সীমান্ত জোরদার করে।

রাজনীতি
জার্মানি ফেডারেল, সংসদীয়, প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ১৯৪৯ সালের প্রণীত সংবিধানের কাঠামো অনুযায়ী জার্মানির রাজনীতিক ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। জার্মানির সংবিধান মূলত ফেডারেল জার্মানির মূল আইন বা গ্রুন্ডগেযেটস (Grundgesetz) নামে পরিচিত।

সংবিধান প্রনেতারা তাদের এই ইচ্ছা প্রকাশ করেছে যে যখন জার্মানি আবার একটি রাষ্ট্র হিসেবে পুনঃএকত্রিত হবে তখন এই সংবিধান একটি উপযুক্ত সংবিধান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। সংবিধানের সংস্কারের জন্য সংসদের উভয় সভার দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টাতার দরকার হয়। সংবিধানের মৌলিকনীতি গুলোর মধ্যে জনগনের আত্মমর্যাদার নিশ্বয়তা, ক্ষমতার বিভাজন, ফেডারেল অবকাঠামো এবং আইনের চিরস্থায়ী ধারা সমুহ বিদ্যমান।

জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধান হল রাষ্ট্রপতি যিনি বুনডেসটাগ (Bundestag) ও প্রত্যেক রাষ্ট্রের সমসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত সম্মিলিত সভার দ্বারা নির্বাচিত হন। জার্মানির সরকার ব্যবস্থায় সরকারের প্রধান হল চ্যান্সেলর বর্তমানে অ্যান্জেলা মারকেল যিনি সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রীর মত বিশেষ ক্ষমতা পেয়ে থাকেন।

ফেডারেল আইন তৈরির ক্ষমতা থাকে বুনডেসটাগ (Bundestag) ও বুনডেসরাট (Bundesrat) নামে সংসদের দুইটি সভার মধ্যে যারা মিলিত ভাবে একটি অদ্বিতীয় আইন প্রনয়নকারী পরিষদ তৈরি করে। বুনডেসটাগ (Bundestag) সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয় অপরদিকে বুনডেসরাট (Bundesrat) হল ষোলটি ফেডারেল রাষ্ট্রের সরকারের প্রতিনিধি। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের সরকার তাদের প্রেরিত প্রতিনিধি নিয়োগ ও অপসরনের ক্ষমতা রাখে।

১৯৪৯ সাল থেকে জার্মানির প্রধান রাজনৈতিক দল হল খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন ও সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জার্মানি। তাছাড়াও মুক্ত গণতান্ত্রিক দল নামে একটি ছোট রাজনৈতিক দল রয়েছে।



প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ
ভূগোল
জার্মানির মোট আয়তন ৩,৫৭,০২১ বর্গকিমি যার মধ্যে ৩,৪৯,২২৩ বর্গকিমি ভূমি এবং ৭,৭৯৮বর্গকিমি জলভাগ। আয়তনের বিচারে জার্মানি ইউরোপের মধ্যে সপ্তম এবং বিশ্বের মধ্যে ৬৩তম। জার্মানির সীমন্তবর্তী প্রতিবেশী দেশ গুলো হল উত্তরে ডেনমার্ক, পূর্বে পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণে অষ্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ পশ্চিমে ফ্রান্স ও লুক্সেমবার্গ এবং উত্তর পশ্চিমে বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ড।





ঈগল: জার্মানির জাতীয় পাখি।




জার্মানির ভূ-সংস্থানিক মানচিত্র
জার্মানি মধ্য ইউরোপের একটি বড় রাষ্ট্র।

এটি দক্ষিণে আল্পস পর্বতমালা থেকে উত্তর ইউরোপীয় সমভূমি হয়ে উত্তর সাগর ও বাল্টিক সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। সামুদ্রিক জলসীমার অন্তর্গত এলাকা গণনায় ধরে জার্মানির আয়তন ৩,৫৭,০২১ বর্গকিলোমিটার এবং আয়তনের দিক থেকে দেশটি ইউরোপের ৭ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। আল্পস পর্বতমালাতে অবস্থিত ২,৯৬২ মিটার উঁচু ৎসুগষ্পিৎসে জার্মানির সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। জার্মানির মধ্যভাগে আছে অরণ্যাবৃত উচ্চভূমি এবং উত্তরে আছে নিম্ন সমতলভূমি। এই নিম্নভূমি দিয়ে ইউরোপের কিছু প্রধান নদী বয়ে গেছে, যাদের মধ্যে আছে রাইন, দানিউব, এবং এলবে নদী।

বোডেন্‌জে দেশের বৃহত্তম হ্রদ। কেন্দ্রীয় অবস্থানের কারণে ইউরোপের অন্য যেকোন দেশের চেয়ে জার্মানির সাথেই সীমান্তবর্তী অন্য দেশের সংখ্যা সর্বোচ্চ।

পরিবেশ




জার্মানিতে বিশ্বের সর্ব বৃহৎ বায়ুকল এবং সৌর শক্তি সংগ্রাহক রয়েছে।
জার্মানি পরিবেশ সচেতন জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। বেশির ভাগ জার্মানরাই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ব্যাপারে সচেতন।

এই রাষ্ট্রটি কিয়োটো প্রোটোকল চরমভাবে মেনে চলে তাছাড়াও ক্ষতিকর গ্যাসের অল্প নির্গমন নিশ্চিত করে, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে। জার্মান সরকার বিপুল হারে দূষন রোধের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং দেশটির সামগ্রিক দূষন দিন দিন কমছে। যদিও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নিঃসরনের হার ইউরোপের অন্য সকল দেশের চেয়ে বেশি কিন্তু অস্ট্রেলিয়া,কানাডা,সৌদি আরব এবংমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বন্যা ও ঝড়ো বাতাস প্রায় সকল অঞ্চলে দেখা যায়।

প্রানীবৈচিত্র্য
উদ্ভিদতাত্বিক ভৌগোলিক বৈশিষ্টানুযায়ী জার্মানি বোরিয়াল জগতের অন্তর্গত সারকামবোরিয়াল রিজিওনের আটলান্টিক ইউরোপিয়ান ও সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান এই দুটি অঞ্চলে বিভক্ত।

জার্মানি অঞ্চলকে দুটি বাস্তুঅঞ্চলে ভাগ করা যেতে পারে, ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান পার্বত্য মিশ্র বনভুমি অঞ্চল এবং উত্তরপূর্ব আটলান্টিক মহীসোপান অঞ্চল। জার্মানীতে চাষাবাদযোগ্য কৃষিজমির পরিমাণ ৩৩ শতাংশ, স্থায়ী চারণভুমি ১৫ শতাংশ এবং বনভূমির পরিমাণ ৩১ শতাংশ। সাধারণত মধ্য ইউরোপের প্রাণী এবং উদ্ভিদই জার্মানিতে দেখা যায়। মোট বনভূমির এক তৃতীয়াংশ জুড়ে আছে বীচগাছ (মসৃণ কাণ্ড ও পত্রবিশিষ্ট একজাতীয় লম্বা গাছ), ওকগাছ এবং অন্যান্য পর্ণমোচী বৃক্ষ। সরলাকৃতির বৃক্ষসমূহ পাওয়া যায় উচ্চপর্বত ভূমিতে এবং বেলে মাটিতে পাইন আর লার্চ গাছের আধিক্য আছে।

বিভিন্ন ফুল, ফার্ণ, ফাঞ্জাই ও মসের বহু প্রজাতি জার্মানিতে পাওয়া যায়। উত্তরসাগর এবং নদীগুলোতে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। হরিণ, বন্য শুয়োর, শিয়াল, ব্যাজার, খরগোশ এবং ভোঁদড় পাওয়া যায়। হেমন্ত এবং বসন্তে বহু অতিথিপাখি জার্মানিতে আসে। ওয়াডেন সী ন্যাশনাল পার্ক, জাসমুন্ড ন্যাশনাল পার্ক, ফরপোমার্ণ লেগুন এরিয়া ন্যাশনাল পার্ক, মুইরিস ন্যাশনাল পার্ক, লোয়ার অডার ভ্যালী ন্যাশনাল পার্ক, হার্জ ন্যাশনাল পার্ক, স্যাক্সন সুইজারল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক এবং ব্যাভারিয়ান ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক সমূহ জার্মান ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে অন্যতম।

জুওলগিক্যাল গার্ডেন, পাখিশালা, একুরিয়াম ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষন পার্কের জন্য জার্মানি সুপরিচিত। একক দেশের হিসেবে জার্মানিতেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চিড়িয়াখানা ও এনিম্যাল পার্ক আছে, যার সংখ্যা ৪০০। বার্লিনের জুওলজিশার গার্ডেন জার্মানীর সবচেয়ে প্রাচীন চিড়িয়াখানা এবং বিশ্বের একক বৃহত্তম প্রানীসংগ্রহশালা।

অর্থনীতি
যোগ্যতাসম্পন্ন শ্রমিক, উন্নত অবকাঠামো, মূলধনের বৃহৎ মজুদ, দূর্নীতির নিম্নহার ও উচ্চ উদ্ভাবনীক্ষমতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সোশ্যাল মার্কেট ইকোনমি জার্মানিতে বিদ্যমান। জার্মানীর আছে ইউরোপের বৃহত্তম ও বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি, যা ২০০৯ সালে জিডিপি(পিপিপি)তে পঞ্চম স্থানের অধিকারি।

সামগ্রিক জিডিপির ৭০ শতাংশ সার্ভিস সেক্টর, ২৯.১ শতাংশ শিল্প ও ০.৯ শতাংশ জুড়ে রয়েছে কৃষি। জুলাই ২০১০ এ দেশের গড় বেকারত্বের হার ছিল ৭.৫ শতাংশ। সর্বনিম্ন ব্যাভারিয়াতে ৪.১ শতাংশ ও সর্বোচ্চ বার্লিনে ১৩.৬ শতাংশ। শিল্পায়নের শুরু থেকেই জার্মানি বৈশ্বিক অর্থনীতির চালক, উদ্ভাবক এবং সুবিধাভোগী। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, জি৮, জি২০ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য জার্মানি ২০০৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিশ্বের রপ্তানীকারক দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে ছিল।

২০০৯ সালে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানীকারক দেশ এবং তৃতীয় শীর্ষ আমদানিকারক দেশ এবং এর বাণিজ্যিক উদ্বৃত্ত ১৮৯.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রপ্তানীযোগ্য পণ্যের বেশিরভাগই প্রকৌশলসংক্রান্ত, বিশেষকরে যন্ত্রপাতি, গাড়ি, রাসায়নিক দ্রব্যাদি এবং ধাতু। বিশ্বে বায়ুমিল ও সৌরশক্তি প্রযুক্তির শীর্ষস্থানীয় উৎপাদক দেশ জার্মানি। হ্যানোভার, ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং বার্লিনের মতো বড় শহরগুলোতে বৃহত্তম বাণিজ্যমেলা ও বাণিজ্যসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ইউরোপীয়ান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংহতির প্রবক্তা জার্মানি।

ইইউভূক্ত দেশসমূহের মধ্যে লিখিত বাণিজ্যিকচুক্তি ও ইইউ একক বাজার আইনের আওতায় জার্মানির বাণিজ্য নীতি পরিচালিত হয়। ২০০২ সালের জানুয়ারিতে জার্মানিই ইউরোপের অভিন্ন মুদ্রা ইউরো চালু করে। ফ্রাঙ্কফুর্টের ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক কর্তৃক এর আর্থিকনীতি নির্ধারিত হয়। একত্রীকরণের দুইদশক পরে জীবনযাত্রার মান ও মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে প্রাক্তন পশ্চিম জার্মানীর স্টেটসমূহ পুর্ব জার্মানীর স্টেটগুলোর চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এগিয়ে আছে। পুর্বজার্মান অর্থনীতির আধুনিকীকরণ ও বিশেষায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে আছে যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত চলবে এবং প্রতি বছর পশ্চিম জার্মানি থেকে পুর্ব জার্মানিতে প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমান অর্থ স্থানান্তরিত হয়।

২০০৯ সালে এঙ্গেলা মার্কেলের নেতৃত্বাধীন জার্মান সরকার ৫০ বিলিয়ন ইউরো (৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এর একটি অর্থনীতি চাঙ্গাকরণ পরিকল্পনা অনুমোদন দেয় যার উদ্দেশ্য ছিল কিছু ক্ষেত্রকে নিম্নগামীতার হাত থেকে রক্ষা করা ও ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হার রোধ করা।

কর্পোরেশনসমূহ
ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ কর্তৃক নির্বাচিত ২০১০ সালের রাজস্বের ভিত্তিতে বিশ্ব স্টকমার্কেটের তালিকাভূক্ত সেরা ৫০০ কর্পোরেশনের ৩৭টির প্রধান কার্যালয় জার্মানিতে। সুপরিচিত বৈশ্বিক জার্মান ব্রান্ডগুলো হলো বিএমডব্লিও, ভক্সওয়াগন, এডিডাস, মার্সিডিস বেঞ্জ, অডি, পোরশে, ডিএইচএল, টিমোবাইল, লুফথানসা, এসএপি, নিভিয়া ইত্যাদি। জার্মানি মূলত উচ্চবিশেষায়িত ক্ষুদ্র ও মাঝারিধরনের এন্টারপ্রাইজের জন্য সুপরিচিত। প্রায় ১০০০ প্রধানত পারিবারিক ব্যবসা কোম্পানিগুলো তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাজারে শীর্ষস্থান দখল করে আছে।

এরা মুলত হিডেন চ্যাম্পিয়ন নামে পরিচিত। নিচের টেবিলটি ২০০৯ সালের তথ্যানুযায়ী তৈরী। এখানে রাজস্ব ও লাভের পরিমাণ মিলিয়ন ইউরোতে প্রকাশ করা হয়েছে এবং কর্মীসংখ্যা সমগ্র বিশ্বে কর্মরত কর্মীদের মোটসংখ্যা।


সারি

নাম

সদর

রাজস্ব

লাভ

কর্মী

১ ভক্সওয়াগন হোলসবুর্গ ১০৮,৮৯৭ ৪,১২০ ৩২৯,৩০৫
২ এইমলার স্টুর্টগার্ট ৯৯,৩৯৯ ৩,৯৮৫ ২৭২,৩৮২
৩ সিমেন্স মিউনিখ/বার্লিন ৭২,৪৮৮ ৩,৮০৬ ৩৯৮,২০০
৪ ই অন ডুসেলডর্ফ ৬৮,৭৩১ ৭,২০৪ ৮৭,৮১৫
৫ মেট্রো ডুসেলডর্ফ ৬৪,৩৩৭ ৮২৫ ২৪২,৩৭৮
৬ ডয়চে পোস্ট বন ৬৩,৫১২ ১,৩৮৯ ৪৭৫,১০০
৭ ডয়চে টেলিকম বন ৬২,৫১৬ ৫৬৯ ২৪১,৪২৬
৮ বিএএসএফ লুডভিগজাফেন ৫৭,৯৫১ ৪,০৬৫ ৯৫,১৭৫
৯ বিএমডব্লিউ মিউনিখ ৫৬,০১৮ ৩,১২৬ ১০৭,৫৩৯
১০ থাইসেনক্রুপ এসেন/ডুইসবুর্গ ৫১,৭২৩ ২,১০২ ১৯১,৩৫০

পরিবহন
ইউরোপের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় পরিবহনখাতের গুরুত্বের দিক দিয়েও জার্মানি কেন্দ্রে অবস্থিত। জার্মানীর বহুমুখী ও আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা এরই পরিচয় বহন করে।

বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম মোটরওয়ে জার্মানিতে অবস্থিত যা স্থানীয়ভাবে অটোবান নামে পরিচিত। উচ্চগতিসম্পন্ন রেলের একটি বহুকেন্দ্রিক নেটওয়ার্ক জার্মানি তৈরি করেছে। আন্তনগর এক্সপ্রেস হচ্ছে জার্মানীর সর্বাধিক অগ্রসর সার্ভিস যা নগর অতিক্রম করে প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহের সাথেও যোগাযোগ স্থাপন করেছে। রেলের সর্বোচ্চগতি ঘন্টায় ১৬০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৩০ মিনিট, এক ঘন্টা বা ২ ঘন্টা ব্যবধানে সার্ভিস পাওয়া যায়।

জার্মানীর বৃহত্তম বিমানবন্দর ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও মিউনিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দুটোই লুফথানসার বৈশ্বিক কেন্দ্র।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জার্মানি সবসময় নেতৃত্বপুর্ণ অবদান রেখে আসছে এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে ফ্রান্সের সাথে কঠিন সন্ধি বজায় রেখেছে। ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে বা ১৯৯০ দশকের প্রথম দিকে খ্রিষ্টান গণতন্ত্র পন্থী হেলমুট কোল (Helmut Kohl) ও সমাজতান্ত্রিক এফ. মিটেরান্ডের (François Mitterrand) শাসন আমলে এই সন্ধি কার্যত ভেঙ্গে যায়। জার্মানি ইউরোপের সেই সব দেশের মধ্যে অন্যতম যারা ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে অধিকতর রাজনৈতিক ঐক্য, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা জোরদার করতে চায়। নিকট ভবিষ্যতের ইতিহাস এবং বৈদেশিক শক্তির আগ্রাসনের কারণে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্র আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তুলনামূলক ভাবে কম অংশ গ্রহণ করেছে।







বৈদেশিক কূটনীতিক দের সাথে চ্যান্সেলর অ্যান্জেলা মরকেল
আইন
বিজ্ঞান ও শিক্ষা ব্যবস্থা
সামরিক বাহিনী
জার্মানির সামরিক বাহিনী সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ও কেন্দ্রীয় চিকিৎসা সেবা দ্বারা গঠিত। । ১৮ বছরেরর পুরুষদের জন্য সামরিক বাহিনীর সেবা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং তারা বছরে অন্তত নয় মাস দায়িত্ব পালন করে। সামরিক খাতে ২০০৩ সালে দেশটির জিডিপির ১.৫% খরচ হয়। যুদ্ধ ব্যতীত অন্য সময় সামরিক বাহিনীর সেনাপতি থাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।

জার্মানির সংবিধান শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধের অনুমতি দেয় যার সেনাপতি হবে দেশটির চ্যান্সেলর।

জার্মান সামরিক বাহিনীতে ২,০০,৫০০ পেশাদার সৈনিক, ৫৫,০০০ ১৮-২৫ বছরের সাময়িক সেনা সদস্য যারা বছরে অন্তত নয় মাস দায়িত্ব পালন করে এবং যে কোন সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকা ২,৫০০ সংরক্ষিত(reserve) সেনা। আত্মরক্ষার অথবা যুদ্ধের জন্য সবসময় প্রায় ৩,০০,০০০ জন্য সংরক্ষিত সৈনিক সব সময় পাওয়া যায়। যদিও ২০০১ সাল থেকে সামরিক বাহিনীর সকল কাজে মেয়েদের অবাধ অংশ গ্রহণ চালু রয়েছে তারপরও তাদের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক নয়। বর্তমানে ১৪,৫০০ জন মহিলা সেনা কর্মরত আছে।

এ পর্যন্ত দুই জন মহিলা চিকিৎসা কর্মকর্তাকে জেনারেল পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে।

জনসংখ্যা
জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। সারা পৃথিবীতে জার্মানি ১৫তম জনবহুল দেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২২৯.৪ জন অধিবাসী বাস করে। জার্মান ভাষা জার্মানির সরকারী ভাষা।

এছাড়া অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে আরও অনেকগুলি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে আরবি, গ্রিক, ইতালীয়, কুর্দি এবং তুর্কি ভাষা উল্লেখযোগ্য। লুসাটিয়া অঞ্চলে সর্বীয় ভাষা এবং দক্ষিণ শ্লেসভিগ অঞ্চলে ডেনীয় ভাষার আঞ্চলিক সরকারী মর্যাদা রয়েছে। উপকূলীয় দ্বীপগুলিতে ফ্রিজীয় ভাষা প্রচলিত। জার্মানির পূর্ব সীমান্তে পোলীয় ভাষা এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ওলন্দাজ ভাষা প্রচলিত।

এছাড়াও এখানে অনির্দিষ্ট সংখ্যক রোমানি ভাষাভাষী বাস করে।

খেলাধূলা
সংস্কৃতি
জার্মান ভাষায় জার্মানিকে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে “ডাস লাণ্ড ড্যার ডিখটার উন্ড ডেনকার”, যার অর্থ হচ্ছে “কবি ও চিন্তাবীদদের দেশ”। একটি জাতির দেশ হিসেবে জার্মানির উত্থানের অনেক আগে থেকেই জার্মান সংস্কৃতির আবির্ভাব, এবং এর বিস্তৃতি ছিল গোটা জার্মান ভাষী এলাকা জুড়ে। গোড়া থেকেই জার্মান সংস্কৃতি ইউরোপের তৎকালীন সব হালচালে প্রভাবিত হয়ে এসেছে এবং এই প্রভাবে ধর্ম ও ধর্ম নিরপেক্ষতা দুটোই ছিল। এই জন্যে জার্মান সংস্কৃতিকে ইউরোপের উচ্চ সংস্কৃতি থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করা মুশকিল।

আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, ইতিহাসের কিছু জাঁদরেল মনিষী,।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।