প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবিএম মূসা আর নেই। আজ বুধবার বেলা সোয়া একটার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, আজ বেলা একটা ১৫ মিনিটে এবিএম মূসার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসব্যবস্থা (লাইফ সাপোর্ট) খুলে নেওয়া হয়েছে। ৭ এপ্রিল দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে তাঁকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়।
অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় আজ তাঁর কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসব্যবস্থা খুলে নেওয়া হয়।
এবিএম মূসার ছেলে নাসির মূসা প্রথম আলোকে জানান, আজ বাদ মাগরিব মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড মাঠে তাঁর বাবার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রাতে তাঁর মরদেহ ল্যাবএইডের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় মরদেহ জাতীয় প্রেসক্লাবে নেওয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দাফন কোথায় হবে, এ বিষয়ে পারিবারিকভাবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে এবিএম মূসার মরদেহ দাফনের ইচ্ছা আছে পরিবারের সদস্যদের।
নাসির মূসা আরও জানান, মৃত্যুর আগে এবিএম মূসা অনুরোধ করে গেছেন, মারা যাওয়ার পর তাঁকে নিয়ে যেন ব্যবসা করা না হয়।
হাসপাতালের চিকিত্সক বরেণ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, এর আগেও এবিএম মূসা কয়েকবার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসে ছিলেন।
তাঁর শারীরিক অবস্থা কয়েক মাস ধরে ভালো যাচ্ছিল না। সাত-আট মাস আগে তিনি মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত হন। এতে অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হয়। রোগটা প্রায় ক্যানসারের কাছাকাছি।
এবিএম মূসার পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি অনেক দিন ধরে অসুস্থ।
গত ২৯ মার্চ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে তাঁকে কয়েকবার হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে নেওয়া হয়। ৭ এপ্রিল রাতে তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হলে চিকিত্সকেরা তাঁকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসে রাখেন।
প্রথিতযশা এ সাংবাদিকের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে মরহুম এবিএম মূসা বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে ছিলেন।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জগতে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
১৯৩১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ফেনীর ফুলগাজী থানার ধর্মপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে সাংবাদিক এবিএম মূসার জন্ম। তিনি ছয় দশকেরও বেশি সময় সাংবাদিকতা করেন। পাশাপাশি কলাম লেখক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবেও তাঁর সমান খ্যাতি ছিল।
বিশিষ্ট এ সাংবাদিক জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি চারবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফ-এ কাজ করার মধ্য দিয়ে মূসার সাংবাদিকতা শুরু। পরে ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার-এ যোগ দেন তিনি।
১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান অবজারভার-এ বার্তা সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
এবিএম মূসা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিবিসি, সানডে টাইমসসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন করে এ দেশের মুক্তিসংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিটিভির মহাব্যবস্থাপক হওয়া ছাড়াও মর্নিং নিউজ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
১৯৭৮ সালে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের (এসকাপ) এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পদে যোগ দেন মূসা। দেশে ফিরে ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ছিলেন।
পরে ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে তিনি কিছুদিন দৈনিক যুগান্তর-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কলম লেখা ছাড়াও তিনি টক শোতে গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কথা বলে বেশ জনপ্রিয় হন। জীবনভর তিনি গণমানুষের কথা বলে গেছেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।