১০৫ জনের পরিচয় এখনো মেলেনি। আদৌ হয়তো আর মিলবে না। এঁরা এখন থেকে কেবলই শনাক্তহীন লাশ। সবাই সাভারের রানা প্লাজা ধসের শিকার। আর এই ১০৫ লাশের পরিচয় অশনাক্ত রেখেই শেষ করা হলো ডিএনএ পরীক্ষা।
রানা প্লাজা ধসের প্রায় এক বছরে অশনাক্ত ৩২২ জনের মধ্যে মোট ২০৬টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া ১১টি লাশের ক্ষেত্রে দুজনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল গত মঙ্গলবার শ্রম মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়।
শ্রম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রানা প্লাজা ভবন ধসে মৃত অশনাক্ত ব্যক্তিদের ডিএনএ আর পরীক্ষা করা হবে না। তবে ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখনো ডিএনএ পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া পোশাককর্মীর পরিবারের সদস্যদের গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আহ্বান জানানো যেতে পারে।
শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শেষ দফার পরীক্ষায় আরও সাতটি লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। এঁরা হলেন পাবনার হাসিনা, ঢাকার রেখা, চুয়াডাঙ্গার শিরিন আক্তার, রংপুরের রাবেয়া, দিনাজপুরের মোমিনুল ইসলাম ও ফজিলা খাতুন এবং গোপালগঞ্জের রাফেজা। এ সাতজনের পরিবার এখন সহায়তা পাবে।
এখনো ১০৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো দুর্ঘটনা বা দুর্যোগে মৃত ব্যক্তিকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের আগে অবশ্যই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার সুপারিশ করেছে জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি। একই সঙ্গে নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করার জন্য দুর্ঘটনাস্থলের পাশে একটি অস্থায়ী মর্গ স্থাপন করারও সুপারিশ করেছে তারা।
তৃতীয় পর্যায়ে শনাক্ত হওয়া সাতজনের পরিবারের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে মুঠোফোনে কথা বলা হয় গতকাল বুধবার। ভবনধসে নিহত দিনাজপুরের ফজিলা খাতুনের একমাত্র বোন সেলিনার সঙ্গে ডিএনএ মিলেছে। গতকাল বুধবার এই প্রতিবেদক ফোন করলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি জানান, ফজিলার স্বামী অগেই মারা গেছেন। মা-ও খুব অসুস্থ।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলেন, যাক এবার বোনের কবরটার খোঁজ অন্তত পাওয়া যাবে।
একইভাবে নিহত হাসিনা, রেখা, শিরিন আখতার ও রাবেয়ার পরিবারের সদস্যরা কেঁদেছেন। এত দিন পর প্রিয়জনের কবরটা কখন দেখতে পারবেন, সে প্রশ্নই ছিল সবার। এত দিন তাঁরা স্বজনের লাশ খুঁজেছেন সাভারের হাসপাতালগুলোতে, ঢাকা মেডিকেলের মর্গে বা মিটফোর্ডে। কিন্তু সন্ধান মেলেনি।
অবশেষে পেলেন সেই সংবাদ।
শ্রমসচিব মিকাইল শিপার গতকাল প্রথম আলোকে জানান, ডিএনএ পরীক্ষার এই ফলাফল শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এরপর তা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যোগাযোগ করা হবে নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আপাতত রানা প্লাজা ভবন ধসে মৃত অশনাক্ত ব্যক্তিদের ডিএনএ আর পরীক্ষা করা হবে না।
ডিএনএ বিশ্লেষণে বিশেষ সফটওয়্যার দিয়ে সহযোগিতা করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। গত বছরের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৩৪।
সুপারিশ: জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে দেওয়া পাঁচ দফা সুপারিশে বলা হয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াই আট শতাধিক মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনাক্ত করার প্রক্রিয়া হিসেবে অনেক সময় পরিধেয় কাপড়, অলংকার, পকেটে পাওয়া দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখানে কোনো ভুল হয়ে থাকতে পারে।
তাই প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব পরিবার ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াই মৃতদেহ গ্রহণ করেছে, সেসব পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে। যদি তাদের কারও ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে ল্যাবের তথ্যভান্ডারের সংরক্ষিত অশনাক্ত কোনো মৃতদেহের ডিএনএ প্রোফাইলের মিল পাওয়া যায়, তাহলে মৃতদেহ শনাক্তকরণে সম্ভাব্য ভুল শনাক্ত করা সম্ভব হবে। আর শুধু ভুলভাবে শনাক্ত মৃতদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ পরীক্ষা করলে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যেতে পারে।
আরেকটি সুপারিশ হচ্ছে, একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সব তৈরি পোশাক কারখানায় সদস্যদের পর্যায়ক্রমে একটি ডিএনএ তথ্যভান্ডারের আওতায় আনা এবং নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক কর। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি অন্যান্য সংস্থায় নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে (বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ পেশার ক্ষেত্রে) ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।