অনেকগুলো পত্রিকার পেজ এ আমার লাইক দেয়া আছে। ফলে নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ খবর সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে যাই। এই খবরটাও প্রথম জানতে পারি ফেসবুকে ঠিক কোন পত্রিকার পেজ এ মনে নেই। ব্রেকিং নিউজ হওয়ার মতই খবর। দিল্লীতে একটি বাসে একজন মেডিকেল ছাত্রীর গ্যাং রেপ।
এই ধরনের ঘটনার পরে সাধারণতঃ কিছু রুটিন ঘটনা ঘটে। বেশ কিছুদিন শিরোনামে থাকবে, দোষীরা ধরা পড়বে, এই দুটো ব্যাপারে আমি অনেকটাই নিশ্চিত ছিলাম। যেটা আশা করি নি তা হচ্ছে এই বিক্ষোভ।
বিক্ষোভ এর কোন উল্লেখযোগ্য পরিণতি আমি আশা করছি না। বিক্ষোভকারীদের দাবী দোষীদের ফাঁসি।
যা বর্তমান আইনে সম্ভব না, বড়জোর চৌদ্দ বছর কারাদন্ড। এখন যদি নতুন আইন তৈরি ও হয় তারপরও সেই আইনে তাঁদের বিচার সম্ভব না। তাঁদের বিচার হবে পুরনো আইনেই। এরপরও বিক্ষোভকারীদের দাবী রেপ এর শাস্তি ফাঁসি হওয়া উচিৎ। তাঁদের ধারণা এতে রেপিস্টরা ভয় পাবে।
অন্য অনেকের ধারণা রেপিস্ট তৈরি হওয়া এভাবে বন্ধ হবে না।
আকাশ সংস্কৃতির কারণে ভারতীয় প্রায় সব নিউজ চ্যানেলে এখন বিক্ষোভের সরাসরি সম্প্রচার চলছে। সঙ্গে চলছে এ বিষয়ের অপর টক শো। দারুণ সব উপদেশবানীর সংকলন। কি করা উচিৎ, মেয়েদের সংযত হওয়া উচিৎ না পুরুষদের রেপ না করার শিক্ষা উচিৎ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জানাচ্ছেন তাঁরা কি করবেন ক্ষমতায় গেলে। এমন সময় শুরু হল একটা ডকুমেন্টরী, রেপ ভিকটিম দের নিয়ে। মর্মান্তিক কিছু তথ্য জানতে পারলাম।
প্রথম যে তথ্যটি ভয়ংকর লাগলো রেপ এর পরে হাসপাতালে যাওয়ার পরে তাঁদের সঙ্গে ব্যাবহার। একজন জানালেন তাঁর দিকে ডাক্তার তাকিয়েও দেখে নি।
ভিক্টিমের বোন ট্রলি ঠেলে ঠেলে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছিল। কেউ বলছিল তিন তলায় যান, কেউ অন্য রুমে পাঠাচ্ছিল। কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারে জানা গেল এধরনের যেকোনো রুগী এলে প্রথমে পাঠানো হয় ক্যাজুয়ালিটি তে। কিন্তু ক্যাজুয়ালিটিতে এধরণের রুগীদের আর সব রুগীদের মতই ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়।
যে ধরনের সংবেদনশীলতা নিয়ে এই রুগীদের চিকিৎসা দেয়া উচিৎ তাঁর জন্য আলাদা ট্রেনিং এর ব্যবস্থা নেই।
এদেরকে আলাদা রাখবার ব্যবস্থা, আলাদা ভাবে ইন্টারভিউ নেয়ার ব্যবস্থা কিছুই নেই। মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়া এইসব মেয়েদের জন্য পরিস্থিতি খুবই মর্মান্তিক। প্রাথমিক চিকিৎসার পর, যদি ভর্তি করবার প্রয়োজন হয়, তাঁদের রাখা হয় সাধারণ ওয়ার্ডে। উৎসুক জনতার জন্য দর্শনীয় বস্তু। অন্য রুগী দেখতে আসা লোকেরাও আসে দেখতে, ‘কালকের ঘটনা পেপারে এসেছে না? ঐ মেয়েটা’।
ফরেনসিক এভিডেন্স নেয়ার জন্য নেই দক্ষ টীম। আমি বড় বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলোর কথাই বলছি। জেলা হাসপাতাল তো অনেক দুরের ব্যাপার। এরপর আসে স্পেসিমেন কালেক্ট করা, প্রিসারভ করা এবং সেগুলো ল্যবরেটরীতে দ্রুত স্থানান্তর করা। স্থানান্তরের কাজটি করতে হবে দ্রুত, দ্বায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশকে।
প্রায়ই তাঁরা ফেলে রাখেন দিনের পর দিন। ডি এন এ টেস্ট হয় এমন ল্যাবরেটরীর সংখ্যা এদেশে একটির বেশী আছে কি না সন্দেহ। এর সংখ্যা বাড়ানো এবং দক্ষ জনবল তৈরির কথা কেউ ভাবছেন কি না জানি না।
একজন মহিলা জানালেন তাঁর এফ আই আর করার অভিজ্ঞতা। পুলিশ প্রথমে জানতে চাইলো, কেন কেস করতে চান? কি লাভ? শুধু লোক জানাজানি হবে।
বিচার হবে কি না কে জানে। বহু কষ্টে যখন পুলিশ মহোদয় এফ আই আর লিখতে রাজী হলেন, তখন তাঁর প্রশ্ন ছিল, এর পর কি হল বলেন। তাঁর চাই পূর্ণ পর্ণোগ্রাফিক ডিটেইল। কয়জন ছিল, কার পরে কে, কতক্ষণ ধরে এবং সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট, কিভাবে। পুঙ্খনাপুঙ্খ বর্ণনা চাই।
সব পুলিশের সামনে তাঁকে বলতে হবে। বাকীরা মজা নিয়ে শুনবে।
আদালতের অভিজ্ঞতাও অনেকে বললেন। সেই একই অবস্থা। উকিলদের জেরা তেও সেই একই চাওয়া পর্ণোগ্রাফিক ডিটেইল।
চেষ্টা থাকে মেয়েটিকে পতিতা প্রমাণের। মেয়েটি স্বেচ্ছায় গিয়েছিল কিংবা মেয়েটিই দোষী, নির্দোষ কয়েকজনকে ফাঁসাচ্ছে। কিংবা আদৌতে কিছু হয় নি। এরপর তো আছে, সাধারণ কোর্টে, সর্বসমক্ষে এই কেস পরিচালনা।
এদেশেও হরহামেশা রেপ হচ্ছে।
রেপ এর পরে বিচার চাইতে গেলে পুরো পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। কখনও ঝামেলা যেন না করতে পারে, তাই মেরেই ফেলা হয়। কখনও মেয়েটি নিজেই আত্মহত্যা করে সবাইকে মুক্তি দিয়ে যায়। কিছুদিন আগে মারা গেলেন ডাঃ ইভা, খুব বেশী আকর্ষক গল্প ছিল না দেখে খুব বেশী হৈ চৈ হয় নি। কিছু পত্র পত্রিকায় এসেছে, মানব বন্ধন হয়েছে, এই যা।
এদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ভারতের থেকে খুব ভিন্ন আমার মনে হয় না। যে কোন রেপ ভিক্টিম এর জন্য এদেশেও একই ধরনের অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করে আছে। পত্র পত্রিকায় শিরোনাম হলে হয়তো রেপিস্ট ধরা পড়বে। না হলে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে। বিচার ব্যবস্থায় যে সেসন জট, বিচার চাইতে চাইতেই তাঁর জীবন পার হয়ে যাবে।
যদি আদৌ সে বিচার চাইতে আগ্রহী হয়।
এদেশে এখনও কোন রেপ নিয়ে এমন বিক্ষোভ হয় নি। হবে কি না জানি না। হয়তো ভয়ংকর কোন রেপ ঘটবার জন্য অপেক্ষায় আছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।