আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কই, পৃথিবী তো ধ্বংস হলো না!

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience নতুন আশার সূর্যোদয় আশঙ্কার ২১ ডিসেম্বর দুপুর গড়িয়ে বিকাল হল। বিকাল শেষ হয়ে সন্ধে। পার হয়ে গেল আশঙ্কার রাতটিও। কিন্তু মায়ান বর্ষপঞ্জির গুজব অনুসারে কিছুই তো হল না! অথচ পৃথিবী টিকে থাকবে, নাকি প্রলয়ের ঘূর্ণাবর্তে পড়ে হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে এমন এক দোলাচলে গতকাল সারাদিনই দুলেছে বিশ্বের অনেক মানুষের মন। কারণ, রহস্যময় মায়া সভ্যতার বর্ষপঞ্জির হিসাব অনুযায়ী ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর দিনটিতে এই পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার জোর আশঙ্কা ছিল।

গতকাল সকালেই পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী আসাদ সাহেব অভ্যাস মতো মর্নিংওয়ার্ক সেরে শীতের সকালে সোজা চা দোকানে। খবরের কাগজওয়ালা যাচ্ছিল তারই ফ্যাটে কাগজটা দিতে। দেখে তর সইল না তার। হেঁকে থামালেন। কাগজটা চেয়ে বললেন, পৃথিবী ধ্বংস হওয়া নিয়ে আজ কি দিয়েছে দেখি! দেকি! ওই যে মায়ানরা নাকি কি সব বলেছে...।

কাগজটা মালিকের হাতে চালান করে দিয়েই খবরের কাগজওয়ালার সহাস্য জবাব, হাঃ হাঃ চাচা সবই মায়া। এই দৃশ্যটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গতকালের রাত পোহাতেই মায়ান বর্ষপঞ্জি ও মায়া সভ্যতা দুনিয়াজুড়ে আলোচনার খোরাক। সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছিল ভীতি। যার ফলশ্রুতিতে বিশ্বের অনেকগুলো দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ সতকর্তা জারি করা হয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার থেকে চীনের বিভিন্ন এলাকায় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল প্রায় সাতশো জনকে। রাশিয়ায় পৃথিবী ধ্বংসের গুজব ছড়ানো নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ­াদিমির পুতিন! আর্জেন্টিনায় ভিনগ্রহবাসীদের যান দেখার স্থান হিসেবে জনপ্রিয় কিছু পাহাড়ের চূড়ায় গণআত্মহত্যার ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় দর্শনাথীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পৃথিবীর শেষ দিন মনে করে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন ওয়েবসাইটেও ছড়াচ্ছিল নানা গুজব। ফ্রান্সের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ২১ ডিসেম্বর নিয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হলে শুধু ফ্রান্সের একটি পর্বত ছাড়া আর কিছুই রা পাবে না বলে সেখানেও সৃষ্টি হয়েছে ভীতি।

কিন্তু বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গবেষক, প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখন আঁতিপাতি করে খুঁজছেন, গুজব রটার রহস্যটা কি? কে বা কারা কেন এই নিয়ে রাতদিন কি উদ্দেশ্যে পাবলিসিটি নিয়ে ব্যবসা করছে? বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ মার্কিন, রুশ ও ফরাসি গোয়েন্দারাও উঠে পড়ে লেগেছেন ব্যবসার উৎস খুঁজতে। নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি যখন সুমেরুয়ীদের কথিত কালান্তক গ্রহাণু নিবিরুকে মন দিয়ে খুঁজছে মহাকাশে তখন গোয়েন্দারা খুঁজছেন গুজবের উৎসকে। তবে এই গুজবের উৎসে ছিল মূলত ৫১২৫ বছরের পুরনো মায়া সভ্যতার বর্ষপঞ্জি যাতে ১৩তম যুগ শেষ হল গতকাল। ৪০০ বছর ধরে চলছিল এই যুগ। ১৪তম যুগের সূচনা পর্বের দিন আজকের দিন।

সেই হিসেবে মায়ানদের আজ নববর্ষ! আর নতুন যুগের সূচনালগ্নের অভিজ্ঞতা নিতেই বিভিন্ন পেশার মানুষ মেক্সিকোর মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ চিচেন ইটজার কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। জোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন মায়া সভ্যতার সূচনায় মানুষের জ্ঞান বেড়ে যাবে। মানুষ অমিতশক্তির অধিকারী হবে আর অনেক বেশি আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে পূর্ণ হবে। কিন্তু সূচনা পর্বের আগেই রটে যাওয়া ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী শুক্রবার ভোর থেকেই মাটির তলায় গুমগুম আওয়াজ শোনা যেত। হওয়া উচিত ছিল ব্যাপক ভূমিকম্প ও মহাদেশীয় প্লেটের নড়াচড়া।

হওয়ার কথা ছিল বিশ্বজুড়ে সুনামি ও মহাপ্লাবন। অথবা হওয়া উচিত ছিল উল্কাবৃষ্টি, সৌরঝড় বা বড় কোনও গ্রহাণুর আছড়ে পড়া। হতে পারত হাজার পরমাণু বোমার মারণমতার মতো ধ্বংসলীলা। কিন্তু কোথায় কি? শুধু তাল মেলাতে না পারা হিসেব নিকেশ আর মায়া সভ্যতার জটিল লিপি পাঠোদ্ধার করতেই খাবি খাচ্ছেন পণ্ডিতরা। তবে এই অবসরে সংবাদমাধ্যম তার বাজারটা জমিয়ে মাত করল বলে ধারণা করছেন অনেক বিশ্লেষকই।

বিশ্বব্যাপী পাঠকরাও তা গিলল সোৎসাহে। কাগজে পড়া এ-সংক্রান্ত জ্ঞানের বুলি কপচিয়ে আসর মাত করলেন উকিল, কেরানি, ব্যবসায়ী, গৃহবধূ থেকে পাড়ার চায়ের দোকানদারটিও। পৃথিবী ধ্বংসের এমন পূর্বাভাস অবশ্য নতুন নয়। এর আগে ২০১১ সালের ২১ অক্টোবর পৃথিবী ধ্বংস হচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন ‘রেডিও মুঘল’ হ্যারল্ড ক্যাম্পিং। বলা ভালো, সভ্যতার ঊষাকাল থেকে পৃথিবী ধ্বংস হওয়া নিয়ে অজস্র ধারণা, ঘোষণার মতো এদিনটা নিয়েও কাঁপল একবিংশ শতকের প্রযুক্তি পরিচালিত দুনিয়া।

নিট ফল সেই শূন্য। ১২/১২/১২ পেরল। ২১/১২/১২ ও পেরিয়ে গেল। পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী আসাদ সাহেব থেকে লাতিন আমেরিকা নিবাসী মায়ানদের অন্যতম বংশধর রিকার্ডো পাওয়েল সবার সকালটা শুরু হল আর দিনটা কাটল অন্য সাতটা দিনের মতোই। ২১.১২.২০১২-এ পৃথিবী ধ্বংসের গুজবে প্রাণ বাঁচাতে বিচিত্র কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন।

নিউইয়র্কের রাজপথে এক ব্যক্তি রাস্তায় নামেন পুরোদস্তুর গ্যাস মাস্ক পরে (ছবি ১)। অতিসতর্ক আরেক চীনা বানিয়ে ফেলেছিলেন অভিনব গোলাকার যান (ছবি ২)। ভূমিকম্প, আগুন, উল্কাঝড় কিছুই কাবু করতে পারবে না এই যানটিকে। কিন্তু এত সব আয়োজন অবশেষে নিষ্প্রয়োজন বলেই প্রমাণিত হয়েছে। এদিন সকালটা শুরু হল আরও ১০টা সকালের মতোই।

দিনটিও কাটল তেমনই।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।