আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে বৃদ্ধ মহিলাটি।

সত্য সব সময় জনপ্রিয় হয় না , জনপ্রিয়ও সবসময় সত্য নয় । আজ মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে বৃদ্ধ মহিলাটি। মৃত্যুতেই যেন তার মুক্তি। আর কবরের অন্ধকারই তার জন্য মুক্তির রঙ্গিন আলো। আজ নিঃশ্বাস ফেলতেই তার কষ্ট হয়ে যায়।

খোলা আকাশ, মুক্ত বাতাস, চন্দ্র-সূর্য কিংবা নীল আকাশ, শীত-গ্রীষ্ম বা বর্ষা, পাহার-পর্বত বা ঝর্ণা। আজ কোন কিছুই তাকে আকর্ষন করে না। আকর্ষন করে কেবল ওই তসবী, পানের বাটা আর জাফরানী জর্দা। বৃদ্ধ মহিলাটি অবিরাম তসবী পড়ে যাচ্ছে। একটা দুটা করে তসবীর পুতি গুলো আঙ্গুল দিয়ে পিছনে ঠেলে দিচ্ছে।

দেখলে মনে হয় তিনি চরম অভিমানের সাথে তার জীবনের বাকি দিনগুলো গুনছে। ঝাপসা হয়ে ওঠা চোখের দৃষ্টি। পুরু কাচের চশমা লাগিয়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকা। কে জানে এ দৃষ্টি কোথায় গিয়ে মিশেছে। হয়তো বা চলে গিয়েছে সুদূর দূরে।

হয়তো যৌবনকালে কিংবা ছেলেবেলায়। হয়তো তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে মায়ের মুখ, অথবা ভেসে উঠছে সেসব দিনের স্মৃতি। যেদিন তার স্বামী তাকে প্রথমবারের মতো স্পর্ষ করেছিল, তার নারীত্বেত পূর্ণতা এনে দিয়েছিল। যাদিন তার সন্তান তাকে প্রথম মা বলে ডেকেছিল। আর সেসব হাস্যজ্জ্বল দিনগুলোতো আছেই।

কতো সুখ, কতো দুঃখ কতো জয়-পরাজয়, কতো অশ্রু। কতো ত্যাগ-তিতিক্ষা। দৃপ্ত পায়ে হেটে চলা, মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করা। বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকা কিংবা প্রকৃতির রূপ দেখে মুগ্ধতায় ভাসা। বৃদ্ধ মহিলাটি আজ শুধু মুক্তি চাইছে, সারাটা দিন বিছানায় শুয়ে শুয়েই কাটিয়ে দিচ্ছে।

কঙ্কালসাড় হয়ে পড়েছে দেহ। আজ তার জন্য কারো হাতে বিন্দুমাত্র সময় নেই, তার সাথে বসে কিছুক্ষন গল্প করার ফুসরত নেই। আর মহিলাটি যখন নিজ থেকে কথা বলতে আসে তখন মুখ খোলার আগেই তাদের কপালে বিরক্তির ভাজ দেখে। শুধু থাকার জায়গা, তিনবেলার খাবার, পান আর ঔষধের টাকা দিয়েই সবাই যেন তাদের সকল দায়িত্ব পালন করে ফেলছে। এভাবে জড় এর মতো বেচে থেকে কি লাভ? তাকে তো এখন আর কেউ চায় না।

শুধু শুধু অন্যের বোঝা হয়ে থাকার চেয়ে মুক্তিই ভালো। বৃদ্ধ মহিলাটি মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। কখন ভাবে নি তার এ ভাবনাও করতে হবে। অবশেষে আজ তার মুক্তি হলো। আর সবার ভিতরে স্বস্তির লুকায়িত ছাপ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।