আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বই পর্যালোচনা- "ইন্টারভিউ উইথ হিস্টোরী"- ওরিয়ানা ফালাচি (২য় পর্ব)

........ গোল্ডা মায়ার সাংবাদিকতার এমন কোন নীতি আছে কি যেখানে একজন সাংবাদিক একটি খবর বা সাক্ষাতকার লিখার ক্ষেত্রে সর্বদাই নিরপেক্ষ থাকবেন? যদি এমন কোন নীতি থেকেই থাকে তবে আম্র মনে হয় ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়ারের সাক্ষাতকার নিয়ে লেখার সময় ওরিয়ানা ফালাচি নিরপেক্ষ থাকতে পারেননি । কারণ এই অধ্যায়ের এক জায়গায় গোল্ডা মায়ারের সাথে নিজের মায়ের চেহারার মিল খুঁজে পাওয়ার কথা লিখে ফেলেন ফালাচি । গোল্ডা মায়রের নেয়া প্রথম সাক্ষাতকারটি ফালাচির কাছ থেকে রহস্যজনকভাবে চুরি হয়ে যায় । পরবর্তীতে আবার নতুন করে সাক্ষারকার নিতে হয় । ফালাচি মিসেস মায়ারকে জিজ্ঞাসা করেন মধ্যপাচ্যে শান্তি দেখে যাওয়া ফালাচির জীবদ্দশায় সম্ভব হবে কিনা ।

উত্তরে মায়ার বলেন, “আমার মনে হয় তা পারবে, হয়তো......আমি দেখে যেতে পারব না । ” গোন্ডা মায়ার অশান্তির জন্য আরবদের একনায়ক্তান্ত্রিক মনোভাবকে শান্তি স্থাপনের পক্ষে অন্তরায় বলে যুক্তি দেন(যুক্তিটা অত্যন্ত খোঁড়া আমার মতে) । এমনকি ইসরাইলী সৈন্যদেরকে মানবিক হিসেবেও দাবো করার চেষ্টা চালান তিনি, তার এই দাবির বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি । তিনি আরো মিশরকে দায়ী করে বলেন, তারা গাজা দখল করে ফিলিস্তিনীদের কাজ করতে দেয়নি, তাদের দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করাতে চেয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিনীরা ইহুদিদের কারণেই যে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল, এই কথাটি গোল্ডা মায়ার ও ফালাচি জেনেও পুরো সাক্ষারকারে এ বিষয়ে কোন আলোকপাত করা হয়নি । গোল্ডা মায়ার আরো উল্লেখ করেন, ফিলিস্তিনীদের দায়িত্ব ইসরাইলের নয়, আরবদের ।

তারা যেমন ফিলিস্তিন দখল করে আরবের অন্য জায়গা থেকে আস ১৪ লাখ ইহুদীকে গ্রহণ করেছেন, তেমনি নাকি আরবদেরও উচিত ছিল বিতারিত ফিলিস্তিনীদের সাহায্য করা, যা ইহুদীরাই করেছে(শুনতে অদ্ভুত লাগছে তাই না??? কিন্তু মহিলা যা বলেছিল তার সরলীকরণ করলে এমনই শোনায়) । এসব বিষয় ছাড়াও আরো পারিবারিক বিষয় নিয়েও কথা বলেন মায়ার । বাদশাহ হোসেন বাদশাহ হোসেন চ্যাপ্টারে সাক্ষাতকারের অংশের আগে বাদশাহ হোসেনের বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও বেঁচে যাওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে সংক্ষেপে বর্ণনা দেন লেখিকা । বাদশাহ হোসেনের সাক্ষাতকারটি অসম্পূর্ন । ৪০ মিনিটের বেশি সাক্ষাতকার দিতে চাইতেন না বাদশাহ হোসেন ।

দ্বিতীয়বার বসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সাক্ষাতকারটি আর শেষ হয়নি । এই অধ্যায়ে তাই বাদশাহের স্বভাব-জীবন ইত্যাদিই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে । ইয়াসির আরাফাত ওরিয়ান ফালাচির নেয়া ইয়াসির আরাফাতের সাক্ষাতকারটা সত্যিই পড়ার মত সাক্ষাতকার । যুদ্ধের ময়দানে গেরিলা হিসেবে আরাফাত কেমন ছিলেন, তার একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে দেওয়া তার চাঁছাছোলা জবাবগুলোতে । ফালাচি প্রশ্ন করেন, আরবের যেইসমস্ত দেশ এখন ফিলিস্তিনী যোদ্ধাদেরকে সাহায্য করছে তারা যদি ইসরাইলের সাথে সমঝোতা করে ফিলিস্তিনীদের সাহায্য করা বন্ধ করে দেয়, তাহলে গেরিলারা কি করবেন??? এমন প্রশ্নের উত্তরে আরাফাত এতে তাদের কিছু যাবে আসবে না বলে জানান ।

তিনি পরিস্কার ভাষায় বলেন, ফালাচি সহ পশ্চিমারা যাকে “শান্তি প্রতিষ্ঠা” বলছেন সেটাকে তিনি অপমান বলে মনে করেন । নিজেরা ঝামেলা করে নিজেরাই শান্তি প্রতিষ্ঠার ভন্ডামি দেখানোর বিরুদ্ধে এটা ছিল এক মোক্ষম জবাব । একপর্যায়ে ফালাচি বলেন, ইউরোপে ইহুদীদের প্রতি অনেক ভালোবাসা দেখানো হয়, আমরা তাদের হত্যা করেছি । আমরা চাই না এর পুনরাবৃত্তি হোক । উত্তরে আরাফাত বলেন, “আপনাদের যে ঋণ তা আপনাদেরই পরিশোধ করতে হবে ।

কিন্তু সেটা পরিশোধ করতে চান আমাদের রক্তে, আমাদের ভূখন্ড দিয়ে । ” “আপনি ইসরাইলের ইহুদীদেরকে সারাবিশ্বে দিশেহারা হয়ে ঘুড়ে বেড়ানোর কথা বলতে পারেন না । এটা অযৌক্তিক । “” মন্তব্য করেন ফালাচি । তখন আরাফাত বলেন, “তবে কি চান আমরা যাযাবরে মত্র ঘুরে বেড়াই?” “ইহুদিদের আবাসভূমি দেবার জন্য যখন আপনাদের এতই উদ্বেগ তাহলে আপনাদের ভূমি দিন ।

” “আপনাদের ঋণ পরিশোধের জন্য আমরা এ ভূমি দেবো না । ” আর কোন সাক্ষাতকার নেওয়ার সময় এতখানি পরাজিত হতে হয়নি ওরিয়ানা ফালাচিকে । (চলবে)  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।