আকাশের রং নীল, বেদনার রং নীল,সাফল্যের রং ও নীল...।
আমি তখনো জীবিত, যথারিতি আনন্দের সহিত দিন অতিবাহিত করছিলাম। খাই দাই, ঘুমাই আর মন চাইলে একটু চাকরি করি। সারাদিন ফেবু তে বসিয়া বসিয়া সুন্দরী দের প্রফাইল পিক্স অবলোকন করি, আর মধুর মধুর মধুচন্দ্রিমার স্বপন দেখী। বিকাল হইলে সবুজ মাঠে সাদা একখান বলের পিছনে দৌড়াদৌড়ি করি।
আর সন্ধা হইলেই একখান কোকের বোতল খুলিয়া কম্পুর সামনে বসি। নারী হীন এ এক নিশ্চিন্ত জীবন।
যাহাই হোক, আমার এ সুখ বেশীদিন কপালে সইলোনা। কোথা হতে এক বারতা আসিলো যে চট্টগ্রামে নাকি নীল চোখের সুন্দরী দেখা যায় যাহারা কিনা দুর্ধর্ষ ওলন্দাজ দের যোগ্য বংশ ধর। আরে????তখন হইতে আমি দু:স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম...যদি এ জীবনে মরিতেই হয় তবে নীল চোখের মাইয়ার হাতেই মরিতে হইবে।
হাজার হোক, আমার নিজের শহর হইতে আমার সামনে দিয়া কোন নীল চোখের মাইয়া অন্যের ঘরে যাইতে পারিবেনা।
যাহা ভাবিলাম তাহাই কাজে রুপান্তরিত করিতে হইবে। তৎকালীন যুগে আমার একখানা একালের পংখীরাজ ছিলো। আমি জানতাম, আমার চেহারা না দেইখা হোক, আমার পংখীরাজ এর জন্য হলে ও নীল ন্ য়নারা চক্ষু ফিরাইতে পারিবেনা। অতএব নিজেকে তো বটেই, পংখীরাজ কেও একখান ডলা দিয়া পরিবেশন যোগ্য করিলাম।
নীল ন্ য়না কোথায় দেখা যায় জানিনা, তবে জন্মিলে মরিতে হইবে এইটা যেমন চির সত্য, মেয়ে মানেই মার্কেটে আসিবে ইহাও চির সত্য। অতএব বিসমিললাহ করিয়া আমার অভিযান শুরু হইলো সানমার ওশান সিটি হইতে। যথাসম্ভব মানজা মারিয়া সানমার এ গিয়া হাজির হইলাম। ফুড কোর্ট থেকেই শুরু করিলাম। মহিলা মানেই খাইতে পছন্দ করে, অতএব ইহাই নীল নয়না খুইজা পাওয়ার উৎকৃষ্ট জায়গা।
অতপর দিবস রজনী অনেক গেল, কর্ণফুলী হইতে অনেক জল সাগরে গিয়া পড়িলো,ফুড কোর্টের এক কোনায় বসিয়া গোটা কয়েক পোল্ট্রি ফার্ম উদরস্ত করিলাম, ফুড কোর্টের সব দোকানি আমার নিকট আত্মীয় টাইপ হইয়া গেল,তবু আমার নীল নয়নার দেখা আর পাইলাম না।
ভগ্ন মনোরথে নিজ গৃহে ফেরত আসিয়া যখন আরেক খানা কোকের বোতল খুলিলাম, তখন আবার কে জানি আসিয়া কহিল,
নীল নয়না???
ওরা তো পাথরঘাটা বলিয়া এক দেশে থাকে।
আবার ও হৃদয়ে আশার সন্চার হইল। এক দরজা বন্ধ হইয়া আরো এক খান খুলিয়া গেলো।
এবার আবার পংখীরাজ লইয়া হাজির হইলাম পাথরঘাটায়।
শুভক্ষণ আর শুভস্থান দেখিয়া এক বিড়ির দোকানে বসিলাম। চোখে সানগ্লাস রাখিলাম, কোন মেয়ে যেন বুঝিতে না পারে আমি তাহা দের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
আমার সম্মুখ দিয়া অনেক রিক্সা গেলো, অনেক সি এন জি গেলো, উহাদিগতে বসিয়া থাকা কোন মেয়েই আমার শকুন চক্ষু হইতে নিস্তার পাইলোনা। কেবল গাড়ি করিয়া যাহারা চলাচল করিয়াছে, তাহারাই রক্ষা পাইলো। রাস্তায় অনেক সুগন্ধ ছিলো বিধায় তাহারা জানালা উঠায় রাখতো।
একবার ভাবিয়াছিলাম রাস্তার ধারে ফুলের বাগান করিয়া দিবো। করিলে তাহারা জানালা নামাইয়া নীল নয়ন ভরিয়া বাগান দেখিবে আর আমি ও আমার উদ্দেশ্য সাধন করিতে পারিব।
এভাবে দিন গেলো, রজনী গেল,কোরবানীর ঈদ ও গেল একটা, দেশের জনসংখ্যা বাড়িয়া গেল কমপক্ষে বিশ লাখ, আমার নীল নয়না আর আমার দেখা দিলনা। এই সময়ের ভিতর বিড়ি ওলা যাকে আমি মামা বলিয়া ডাকিতাম, তিনি আমার প্রায় মামা হইয়া গেলেন,আমার কাছে চা বিড়ি বিক্রয় করিয়া যা লাভ করিলো তাহা দিয়া একখানা ফাস্ট ফুড খুলিয়া বসিল। এলাকার পোলাপাইন সন্দেহ শুরু করিল যে আমি নিশ্চিত র্যা ব এর ইনফরমার, এলাকা্য় গেন্জাম কমিয়া গেল।
অবশেষে আমার মিশন সফল করিতে না পারিলেও, এলাকার জনপ্রতিনিধি যা করিতে পারেনাই, এলাকার আইন শৃংখলার পরিস্থিতি উন্নত করিয়া আমি আবার ভগ্ন মনোরথে নিজ গৃহে ফেরত আসিলাম আর শপথ করিলাম আর নীল নয়নার পিছু ছুটিবনা। এরপর আবার এক খানা কোকের বোতল খুলিলাম।
আপনাদের খোজে যদি নীল নয়না থাকে তবে আর আমাকে জানানো দরকার নাই, কারন আমি এখন মৃত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।