আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক নৌকায় তিনজন

আজ বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবার দিনটি গুল্লুর কখনই ভালো যায় না । এই ব্যাপারটা শুধু হিমি জানে । হিমি জেনে গেছে গুল্লু কপালে টিপ এবং চোখে কাজল অনেক পছন্দ করে তাই হিমি গুল্লুর সাথে দেখা করলে গেলেই কপালে টিপ এবং চোখে মোটা করে কাজল দিবেই । হিমির বয়স এবং গুল্লুর বয়স প্রায় কাছাকাছি ।

গুল্লু রেস্টুরেন্টে বসে চা খাওয়ার চেয়ে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খেতে পছন্দ করে । গুল্লুর একটা গোপন ইচ্ছা হলো- সে হিমিকে সাথে নিয়ে ঢাকা শহরের সব রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খাবে । হিমি যদি চা ছাড়া অন্য কিছু খায় খাবে ক্ষতি নেই । গুল্লুর বাবা ছেলেকে প্রায়ই বলেন, দিন দিন তুমি কালো হয়ে যাচ্ছো কেন ? রোদে রোদে কম ঘুরবে । গুল্লু বাধ্য ছেলের মতন বলে, জ্বী আচ্ছা ।

গুল্লুর যখন ৭ বছর তখন গুল্লু তার বাবার একটা ডায়েরী হাতে পায় । গুল্লুর বাবার হাতের লেখা অনেক সুন্দর । সে তার ছেলেকে অত্যাধিক পছন্দ করেন । গুল্লু এত বড় হয়ে গেছে- তবু গুল্লুর হাত ধরে রাস্তা পার করে দেন । সকাল দশটায় ।

গুল্লু দাঁড়িয়ে আছে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে । হিমি আসবে । গুল্লু আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানতে থাকে তখন হিমির ফোন আসে- হ্যালো, তুমি এসে পড়ছো ? রাস্তায় জ্যাম আমার আসতে আরো আধা ঘন্টা দেরী হবে । সরি বলে হিমি ফোন রেখে দেয় । গুল্লুর মাঝে মাঝে হিমুর মতন হতে ইচ্ছা করে ।

সে হিমুর মতন হলুদ জামা পড়ে থাকবে । হিমিকে নিয়ে জোছনা দেখতে শালবনে যাবে । হিমিকে ফোন করে বলবে তুমি পোলাও চাল দিয়ে খিচুরী আর গরুর মাংস এবং ইলিশ মাছ ভেজে রান্না করো, আমি রাতে খেতে আসবো । খাওয়া শেষে তোমাকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনাবো । হিমি তাড়াহুড়া করে রান্না শেষ করে নীল একটা শাড়ি পড়বে, অনেক সময় নিয়ে চোখে কাজল দিবে-কপালে একটা ছোট্র টিপ পড়বে তারপর ছাদের দাঁড়িয়ে গুল্লুর জন্য অপেক্ষা করবে- কিন্তু গুল্লু আসবে না এবং মোবাইলটাও বন্ধ করে রাখবে ।

হিমির চোখ দিয়ে দু'টা জল গড়িয়ে পড়বে । রাত দুইটা । গুল্লুর চোখে ঘুম নেই । গুল্লু হিমিকে ফোন করে বলল- একটা গান শোনাও তো । তোমার গান শুনতে শুনতে ঘুমাই ।

হিমি বলল, আচ্ছা, অনেকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না কেন বলতো ? গুল্লু বলল, এখন শীতকাল তাই বৃষ্টি হচ্ছে না । বৃষ্টি দিয়ে তুমি কি করবে ? হিমি বলল, বৃষ্টির দিনে তোমাকে নিয়ে রিকশায় করে ঘুরব আর বৃষ্টিতে ভিজব । গুল্লু বলল- সেদিন কি তুমি শাড়ি পড়বে ? হিমি বলল, জ্বী জনাব শাড়ি পড়ব, চোখে কাজল দিবো কপালে টিপও পড়বো এবং আপনার যদি খুব ইচ্ছা করে তাহলে আপনি আমাকে একটা চুমুও দিতে পারেন । গুল্লু বলল, কই গান তো গাইলে না । হিমি গান গাইতে শুরু করলো- "যদি আমার কোনও পালাবার জায়গা না থাকে – দিন, রাত্রি, অন্ধকারে/ তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে।

" গুল্লু গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল । গুল্লু যদি জেগে থাকত তাহলে বুঝতে পারত একটি মেয়ে গান গাইছে কিন্তু তার চোখ জলে ভরা । জলে ভরা চোখ নিয়ে হিমি গাইছে-"যদি তলিয়ে যাই স্মৃতিতে/ যদি ক্ষয়ে যাই জলে/ যদি থেমে যাই চলাতে/ তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে। " সে রাতে হিমি না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয় । আর গুল্লু ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত সব টুকরো টুকরো স্বপ্ন দেখে ।

একটা স্বপ্ন এই রকম । গুল্লুকে একটা অন্ধকার ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে । খুব পানির পিপাসা পায় কিন্তু ঘরে পানি নেই । গুল্লু পানি পানি করে চিৎকার করতে থাকে কিন্তু কেউ পানি নিয়ে আসে না । হঠাৎ অন্ধকার থেকে একটি মেয়ে এসে বলে- এই নিন পানি খান ।

গুল্লু অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকায় । মেয়েটির মুখ শাড়ির আঁচলে ঢাকা । কিন্তু পায়ে রূপার নূপূর । নূপূরের শব্দে গুল্লুর ঘুম ভেঙ্গে গেল । তারপর গুল্লু সারা রাত ব্যালকনিতে বসে ছিল ।

ফযরের আযানের পর বের হলো- চা খেতে । গুল্লু জানে এত ভোর বেলা কোথায় চায়ের দোকান খোলা থাকে । মালিবাগের মোড়ে গিয়ে গুল্লু পত্রিকা কিনল- পত্রিকায় পাতা উল্টিয়ে তার তোলা ছবি দেখল। গুল্লু অনেক পরিশ্রম করে সে মুসলিমজ মাদ্রাসার ছবি তুলেছিল । কর্ণকর্ড নামে একটা কোম্পানী মুসলিম মাদ্রাসার জায়গা দখল করে বিশাল এপাটমেন্ট বানিয়েছে ।

সন্ধ্যাবেলা গুল্লু গেল হিমির কাছে । যদিও ভর সন্ধ্যায় প্রিয় মানুষদের কাছে যেতে নেই । হিমি অপ্রত্যাশিত এক আকাশ আনন্দ পেল । হিমির ইচ্ছা করছে গুল্লুকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদতে । মানুষের মনের গোপন ইচ্ছা গুলো কখনই পূরণ হয় না ।

হিমি বলল, হাত মুখ ধুয়ে আসো- গরুর মাংস ভূনা রান্না করা আছে, গরম গরম পরোটা ভেজে দিচ্ছি- চটপট খেয়ে নাও । গুল্লু লক্ষ্মী ছেলের মতন খেতে বসল। হিমি তার সামনে বসে আছে । গুল্লু এত আরাম করে খাচ্ছে- দেখে খুশিতে হিমির চোখ ভিজে উঠল । সন্ধ্যায় চোখের পানি প্রিয় মানুষকে দেখাতে হয় না বলে হিমি শাড়ির আঁচল দিয়ে গোপনে চোখের পানি মুছে নিল ।

গুল্লু বলল- হিমি, তুমি গরুর মাংসের ভর্তা বানাতে পারো । হিমি বলল, না জানি না । গুল্লু বলল- প্রথমে মাংসের টুকরোগুলো তাওয়ায় লবণ মেখে সেঁকে নিতে হয় আধঘন্টা। তারপর তাওয়া গরম হলে মাংস বিছিয়ে ঢেকে দিতে হয় । মাংসের পানি বের হয়ে শুকিয়ে একটু পোড়া পোড়া গন্ধ বের হবে।

গরম মাংসকে পাটায় ভালোভাবে থেঁথলে নিবে। যাতে গুঁড়ো গুড়ো আঁশ হয় কাঁচামরিচ চুলায় ঢেলে পেঁয়াজ ও আদা কুচি একটু থেথলে নিতে হবে। তারপর- সব একসঙ্গে মেখে একটি বাটিতে ভালোভাবে চেপে চেপে রেখে দুই/তিন ঘন্টা (ফ্রিজেও রাখতে পারো যাতে নষ্ট না হয়। সরিষার তেল দিয়ে খুব ভালোভাবে মাখাতে হবে। মাখাটা আটা মাখার মতো হলে তখন ভর্তা রেডী হবে ।

গুল্লু হিমির বাসা থেকে বের হলো রাত ১১ টায় । শীতকাল রাস্তা ঘাট ফাঁকা ফাঁকা । একটা রিকশাও নেই । গুল্লু রাস্তায় হাটা শুরু করলো- যেদিন হিমির সাথে দেখা হয়, সেদিন গুল্লু একা একা অনেকক্ষন রাস্তায় এক আকাশ আনন্দ নিয়ে একা একা হেঁটে বেড়ায় । গুল্লু হিমির কথা ভাবতে ভাবতে রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাটছিল- হঠাৎ একদল বখাটে ছেলে এসে গুল্লুকে দা-বটি ছুরি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলল ।

হিমি সকালে ফযরের নামাজ পড়ে পত্রিকা হাতে নিয়ে গুল্লুর মৃত্যুর খবর জানতে পারে । তখন আকাশে এক ঝাঁক পাখি দূরে কোথাও উড়ে যাচ্ছিল । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।