নির্ভীক নিশান এমমিতেই এতদিন মানুষজন জানতো , হল সংকট ,শিক্ষক সংকট সহ এক বস্তা অভিযোগ নিয়ে ঘুনে ধরা পুরনো কলেজের কিছু ভবন নিয়ে মাত্র ১১.১১ একর আয়তনের জমির উপর প্রতিষ্ঠিত নাম মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় । তাই অনেকে যেন এখনো এটাকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতিই দিতে পারছেনা । অনেক জ্ঞানী-গুনী , উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত অনেকের কাছে এখনো একটি শব্দ যখন শুনতে হয় তখন মনে মনে কিছুটা হতাশ হতে হয় । তারা কথায় কথায় জগন্নাথকে এখন কলেজ বলে সম্বোধন করে ! রিক্সায় করে যখন ক্যাম্পাসে যাই এমন কোন রিক্সাওয়ালাকে দেখলামনা যে অন্তত জানে জগন্নাথ এখন আর কলেজ নয় । এটা একটা বিশ্ববিদ্যালয় ।
পুরনো ঢাকার অনেক বাড়িওয়ালাকেও বলতে শোনা যায় জগন্নাথ কলেজ । এ যেন কাঁটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা ! এমনকী আশেপাশের স্কুল কলেজের কিছু ছেলে-মেয়েদের মুখেও একই গালি জগন্নাথ কলেজ ! এটার একমাত্র কারন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৭ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে । কিন্তু প্রশাসনের অবহেলা ও দূর্নীতি , অপ-ছাত্ররাজনীতির আগ্রাসনের কারনে ৮ তলার একটি নতুন ভবনের নির্মান ব্যাতীত প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত আর কোন উন্নতি এখনো লক্ষ করা যায়নি । অথচ হল নির্মাণের জন্য অনেক আগেই ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার ।
দেশের অন্যতম সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে মাথা তুলে দাঁড় করানোর জন্য একদল মেধাবী তরুণ ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক- শিক্ষীকা যেখানে মনে প্রানে কাজ করে যাচ্ছিল সেখানে ছাত্রলীগ নামধারী কিছু মুঁখোশ পরা সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরেই ক্যাম্পাসে অশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আসছে ।
কিছুদিন পর হয়তো ছাত্রদল ও শিবিরের ও আগ্রাসনও বাড়বে । তাদের বিশৃংখলতার জন্য অধিকাংশ বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে জগন্নাথে ভর্তি করানোর ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন ।
সম্প্রতি তারা ঠান্ডা মাথায় একজন নিরীহ পথচারীকে খুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎকে আরও কয়েকধাপ পিছিয়ে দিল !! এখন রাস্তা ঘাটে , চায়ের দোকানে চলাফেরার সময় কান পাতলেই একটা কথা শোনা যায় জগন্নাথের ছেলেরা খুব খারাপ , উচ্ছৃংখল !!!
কারও কাছে জগন্নাথের পরিচয় দিতে গেলে আগে যেখানে বুক ফুলিয়ে বলতে ইচ্ছা করতো এখন সেখানে জগন্নাথে পড়ি এই পরিচয় দিতে লজ্জায় পড়তে হয় । কোন কোন বন্ধু অভিযোগ করে বলেছে জগন্নাথের পরিচয় দিয়ে গালিও খেতে হয়েছে ! কেউ কেউ আশংকায় আছে পরিচয় দিতে গিয়ে আবার মার না খেতে হয় ! আরেকজন বলল সে কিছুদিন আগে একটি টিউশনি পেয়েছিলো । যখন ক্লাশ সেভেনে পড়ুয়া তার ছাত্র জানতে পারলো তাকে জগন্নাথে পড়ুয়া একজন পড়াবে তখন সে বললো সে দরকার হলে ঢাকা কলেজের কারো কাছে পড়বে তবুও জগন্নাথের শিক্ষার্থীর কাছে পড়বেনা ! কেউ কেউ আশংকা করছে চাকরীর ইন্টারভিউতে না আবার জগন্নাথের পরিচয় দিয়ে গালি খেতে হয়
___________________অপরদিকে পুলিশের ভয়তো আছেই ।
বাইরে বের হলে আইডি কার্ড রেখে বাসায় রেখে যেতে হয় । পুলিশ জিজ্ঞেস করলে জগন্নাথে পড়ি জানলে যদি আমাকে আবার বিশ্বজিৎ হত্যার আসামী বলে চালিয়ে দেয়া হয় ? অথচ আগে রাস্তা ঘাটে পুলিশ ধরলে জগন্নাথের নাম বললেই এক ধরনের সম্মান পাওয়া যেত পুলিশের কাছে ।
এত কিছুর পরেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শুধু মারামারিই হয় তা কিন্তু নয় । একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বিকভাবে যেসব সুযোগ সুবিধা থাকা উচিত ছিল তা হয়তো এখানে এখনো নেই । কিন্তু ক্লাশ-পরীক্ষা নিয়মিতই হয় ।
এখানকার বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই মন দিয়ে পড়াশোনা করে । চাকরী ক্ষেত্রে মেধার কম্পিটিশনে তারা ঢাকা ভার্সিটির স্টুডেন্টদের থেকে কোন অংশে কম নয় , এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে এগিয়ে । বৈরী পরিবেশে থেকে থেকে তারা শিখছে কিভাবে প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে সংগ্রাম করে বাঁচতে হয় । তাদের থাকার জন্য হল নেই , পড়ার জন্য লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই নেই , পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই , যাতায়েতের জন্য পর্যাপ্ত বাস নেই । তবুও তাদের মনে গর্ব বিরাজ করে যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ,চোখে স্বপ্ন ঝিলমিল করে তারা একদিন বড় হবে , তাদের বিশ্ববিদ্যালয় একদিন দেশ বিদেশে অনেক সুনাম করবে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।