আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের প্রান্তবর্তী ফিলিস্তিনি উদবাস্তু শিবির ইয়ারমুক দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। কয়েকদিনের প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর শিবিরটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে বিদ্রোহীরা। সোমবার এ খবর জানিয়েছে বিদ্রোহী ও ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো।
এই শিবির দখলের লড়াইয়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে বিদ্রোহীরা ব্যাপক সাহায্য পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে ফিলিস্তিনি লিবারেশন অব ফিলিস্তিন-জেনারেল কমান্ডের (পিএফএলপি-জিসি) পপুলার ফ্রন্টের যোদ্ধারা লড়াই করলেও তাদের অনেকেই পক্ষ ত্যাগ করে বিদ্রোহী পক্ষে যোগ দেয়। পিএফএলপি-জিসি’র নেতা আহমেদ জিব্রিল দু’দিন আগেই শিবির ছেড়ে চলে গিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিদ্রোহীরা। ইয়ামুকের এক ফিলস্তিনি আন্দোলনকারী জানান, ‘পুরো শিবিরটি এখন ফ্রি সিরিয়ান আর্মির (বিদ্রোহী) দখলে। ’ লড়াই থেমে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, পিএফএলটি’র বাকি যোদ্ধারা পিছু হটে শিবিরের দক্ষিণ দিকে আসাদ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য চলে গেছে।
ইয়ারমুকের লড়াই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের দক্ষিণ সীমানায় চলা ধারাবাহিক লড়াইগুলোর মধ্যে অন্যতম। ৪৭ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য গত ২১ মাস ধরে আন্দোলন-বিদ্রোহ-লড়াই চালিয়ে আসছে বিদ্রোহীরা। লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ৪০ হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। বিদ্রোহীদের হটাতে যুদ্ধবিমান ও কামান ব্যবহার করছে সরকারি বাহিনীগুলো। কিন্তু লড়াই আস্তে আস্তে রাজধানী দামস্কে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে।
আন্দোলনকারীরা দাবি করেছে, সোমবার হামা প্রদেশে বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর তিনটি অবস্থান দখল করে নিয়েছে। ইয়ারমুকে লড়াই চলাকালে কয়েকশ’ ফিলিস্তিনি পরিবারকে সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী লেবাননে চলে যেতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। সিরিয়ায় আশ্রয় নেয়া প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের অধিকাংশেরই বাস ইয়ারমুক শরণার্থী শিবিরে। এদিকে তুরস্কের কর্মকর্তারা সিরিয়া সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নতুন প্রস্তাব রাশিয়াকে অবহিত করেছে। শুধু তুরস্কের একক উদ্যোগে এ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।
তুরস্কের দৈনিক রেডিকেল এ খবর দিয়েছে। তুরস্কের এ প্রস্তাবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে আগামী তিন মাসের মধ্যে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আসাদের পদত্যাগের পর সিরিয়ার সরকার বিরোধী তথাকথিত ন্যাশনাল কাউন্সিল বা এসএনস্থির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দৈনিকটি লিখেছে আমেরিকা, রাশিয়া, মিসর, কাতার ও জাতিসংঘ তুরস্কের এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখছে। তুরস্ক এমন সময় সিরিয়া সমস্যা সমাধানের জন্য এ প্রস্তাব তুলে ধরেছে যখন দেশটি সিরিয়ায় গোলযোগের শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছিল।
এ লক্ষ্যে তুরস্ক সরকার আসাদ বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ, অস্ত্র ও রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে সিরিয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এছাড়া, সম্প্রতি তুরস্ক সিরিয়া সীমান্তের কাছে পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ন্যাটোর উন্নত মানের রাডার ব্যবস্থা মোতায়েনের জন্য ন্যাটো জোটকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তুরস্ক সরকারের এ পদক্ষেপ সিরিয়া সমস্যা সমাধানে দেশটির আন্তরিকতা নিয়ে সিরিয়াসহ এ অঞ্চলের জনমনে ব্যাপক সন্দেহ দেখা দিয়েছে। পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনে তুরস্কের এ পদক্ষেপের বিষয়ে রাশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। অবশ্য মস্কোর আপত্তির পেছনে অনেক কারণ রয়েছে।
প্রথম থেকেই রাশিয়া তুরস্কের সিরিয়া সীমান্তে ন্যাটোর পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিল। রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন সম্প্রতি তুরস্ক সফরে গিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এর্দুগানের সঙ্গে সাক্ষাতে তার অসন্তুষ্টির কথা জানান। পুতিন এর্দুগানকে একটি রুশ প্রবাদ শোনান যাতে বলা হয়েছে, ‘তুমি যদি ঘরের দেয়ালে একটি বন্দুক ঝুলিয়ে রাখ, তাহলে একদিন ওই বন্দুক থেকে তুমি গুলি ছুড়বেই’। এ প্রবাদ তুলে ধরে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন তুরস্কে পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের উদ্যোগকে মস্কো-আঙ্কারা সম্পর্কের ক্ষেত্রে রেড লাইন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি পরোক্ষভাবে তুরস্ক সরকারকে এটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তুরস্ক সিরিয়ায় যে কোনো আগ্রাসন চালালে রাশিয়াও প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং চুপ করে বসে থাকবে না।
কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ দু’দেশের সম্পর্ক বহু দিনের পুরনো। তাদের মতে, সিরিয়া সমস্যা সমাধানে তুরস্কের উত্থাপিত প্রস্তাবের ব্যাপারে রাশিয়া খুবই সতর্ক। এছাড়া, তুরস্কের কর্মকর্তারা সাবেক ওসমানীয় সাম্রাজ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার যে স্বপ্ন দেখছে রাশিয়া তাকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না। তাছাড়া, সম্প্রতি তুরস্ক সরকার মস্কো থেকে দামেস্কগামী সিরিয়ার একটি বিমান নামিয়ে তল্লাশি চালানোয় রাশিয়া খুবই অসন্তুষ্ট এবং তারা এটাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না। এ অবস্থায় সিরিয়ার ব্যাপারে তুরস্কের নতুন প্রস্তাবকে রাশিয়া নানাভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখবে এটাই স্বাভাবিক।
তবে পাশ্চাত্য ঘেঁষা তুরস্ক সরকারের কর্মকর্তাদের পররাষ্ট্র নীতি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশকেই নয়, একই সঙ্গে তুরস্কের অভ্যন্তরেও ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে রস্কের এ নীতির কারণে রাশিয়াসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুরস্কের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।