আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে মানুষ দুই প্রকার। ১ যারা শাহবাগে এসেছে। ২ যারা শাহবাগে আসেনি...। ঐতিহাসিকভাবে এ দেশের মানুষ সরল ন্যায় ও সহজ কল্যাণের পথেই পরিচালিত হয়ে আসছে। তাদের মনের গতিপ্রকৃতিও অনেকটা এমনই।

কিন্তু শ্রেণী বিভাজন ও বিষয় বিন্যাসে গিয়ে সেই গতিপ্রকৃতি খেই হারিয়ে ফেলেছে বারবার। ধর্মীয় বোধ, রাজনৈতিক ক্ষেত্র ও কর্মসংস্থান-তৎপরতার জায়গায় সেটা ক্রমান্বয়ে আরও প্রকট ও বীভৎস আকার ধারণ করেছে। এখন ভয়ঙ্কর সেই কুৎসিত জল্লাদ-রূপ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। চারিদিকে জামায়াত-শিবিরের লকলকে জিহ্বা। আইনমন্ত্রী এবং পুলিশের উপর আছড়ে পড়ায় আর সহ্য করার উপায় দেখছি না।

কারণ মন্ত্রীর পরই প্রধানমন্ত্রী/প্রেসিডেন্টÑ যেন আবার একটি ১৫ আগস্টের হুঙ্কার, পায়তারা এবং শঙ্কায় কম্পমান সারাদেশ! বৃহৎ হিন্দুস্তানের ব্যাপারটা আপেক্ষিক, যদিও এই বাংলাদেশ, প্রিয় বাংলাদেশ কিন্তু কখনো জামায়াতসুলভ রাজনীতি ও জীবনযাপনের ক্ষেত্র ছিলো না, এখনো নেই। ৭৫ পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্তু প্রায় সব সরকার এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো জামায়াতকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে সত্য, কিন্তু জনগণ কখনো জামায়াত-শিবিরকে মন কেনো, উঠোনেও জায়গা দেয়নি কোনোদিন, পাড়ায়ও নয়। সরকার এবং রাজনৈতিক দল সবসময় জনগণের মনের কথা শোনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, জনগণের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছে, আবার জনগণের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে জামায়াতকে কাছে টেনে ফায়দা লুটার অপচেষ্টা করেছে। সাময়িক ফায়দা হয়েছে সত্য, কিন্তু পরিণতির বেলায় দেখা গেছে তাদের সামগ্রিক অধপতন। উদাহরণ হিশেবে বিগত নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবিকেও উল্লেখ করা যেতে পারে।

এমনিভাবে বলা যায়, শুধু বিএনপি কেনো, জামায়াতকে যারাই কাছে টেনেছে, তাদের পরিণতি কখনো সুখকর হয়নি, ...হবারও নয়। সরকার ও দলগুলোর সাময়িক ফায়দার নিচে দশকের পর দশক চাপা পড়ে আছে বাঙালীর বোধ, ইচ্ছা ও স্বপ্নের পৃথিবী; খেয়ে-নেয়ে বাঁচা এবং অল্পেতুষ্টি নিয়ে হাসিকান্নার দোলাচলে বেঁচে থাকা। অথচ নিঃস্বার্থ ও নির্বিরোধী মনোভাব নিয়ে একটু চিন্তা করলে খুব সহজেই চোখের সামনে ভেবে আসবে এমন একটি বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, যে বাংলাদেশ আমরা সবসময় চেয়েছি, ডান-বাম সবাই চেয়েছি, সেই বাংলাদেশ মানেই হচ্ছে ‘জামায়াত-শিবিরমুক্ত বাংলাদেশ’। এই যে স্বপ্নের বাংলাদেশ, সোনার বাংলাদেশ, এটা কিন্তু খুব কঠিন কোনো ব্যাপার নয়, অনেক বেশি সহজ এ কারণে যে, এ দেশের মানুষ জামায়াত চায় না, শিবির চায় না, মৌলবাদ চায় না, ধর্মান্ধতা চায় না, মওদূদীয়্যাত চায় না, ফ্যাসিবাদ চায় না এবং রগকাটাকাটির মতো নৃশংস কোনো রাজনৈতিক ভাষাও চায় না এ দেশের মানুষ। যেহেতু এ দেশের মানুষ কোনোদিন জামায়াতকে চায়নি এবং এখনো চায় না, সেহেতু জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করাটা এখন সময়ের ব্যাপার, স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত মাত্র।

কিন্তু প্রায় তিনযুগ যাবৎ জামায়াতকে যে আমরা প্রশ্রয় দিলাম, এর একটা ঝক্কি দাড়িয়ে গেছে এখন। অসৎ উদ্দেশ্যে হোক, বুঝে হোক, না বুঝে হোক, অথবা সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিশক্তির অভাবেই হোক, এই ঝক্কিটা কিন্তু সৃষ্টি হয়েই আছে। তাই এই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়াটা কেমন হওয়া উচিত, সে দিকটা একটু ভেবে দেখতে হবে। তবে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা-না করার ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনার অবকাশ নেই, কারণ তারা কোনোদিন মানুষের মনে বৈধতা পায়নি। সরকার ও রাজনৈতিক দল বৈধতার সার্টিফিকেট দিলে আর যাই হোক, জামায়াতের মতো একটি নিকৃষ্ট মানসিকতার দলকে কখনোই মেনে নেয়নি এবং নেবেও না এ দেশের মানুষ।

যদি কোনো সরকার অনুকূল পরিস্থিতি পাওয়া সত্ত্বেও জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ না করে, তবে অবশ্যই সেই সরকারের কর্তাব্যক্তিদেরকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। ধর্মপ্রাণ বাঙালী মুসলমানের আলাদা একটি শক্তি আছে, যেটা অনেক গভীরে প্রোথিত। জামায়াতের সাথে আমাদের যেসব বিরোধ, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এটি। জামায়াতটা সৃষ্টিই হয়েছে একটা ধর্মীয় ভাওতাবাজির উপর। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মিস্টার মওদূদী ইসলামের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা করে গেছেন।

আধুনিক বিশ্বে হঠাৎ যে জিহাদী অপতৎপরতা এই চিন্তাটির আধুনিক উপস্থাপক এই মওদূদী। হাসান আল বান্না এবং সায়্যেদ কুতুবরা কট্টর জায়গা থেকে জিহাদকে বিচিত্রভাবে উপস্থাপন করেছিলেন, যেটি খুব সুচিন্তিতভাবে গ্রহণ করেছিলেন মিস্টার মওদূদী। তার চিন্তার আরেকজন সঙ্গী হচ্ছেন আবদুল্লাহ য়ূসুফ আয্যাম, যিনি ওসামা বিন লাদেনে গুরু হিসেবেই সর্বত্র পরিচিত। এইসব লোকের মনগড়া ধর্মীয় ব্যাখ্যাই আজ সাধারণ মুসলমানদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এদের কারণেই আজ মুসলমানদের কপালে জঙ্গী-সন্ত্রাসের তকমা।

আর জামায়াত হচ্ছে এই চার জনের দর্শনের বিন্যাসে নির্মিত একটি কট্টরপন্থী ও উগ্র রাজনৈতিক দল। এসব কথা ও কথকতা জামায়াতের মৌলিক ভিত্তির ব্যাপারে একটি ইঙ্গিতমাত্র। আধুনিক চিন্তার ইসলামিক স্কলার ও থিঙ্কারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করলে সহজেই বেরিয়ে আসবে জামায়াতের সকল ইসলামবিরোধী তৎপরতার নির্দিষ্ট খতিয়ান। নবীজী সা. ও তার সাহাবীসহ ইসলামের মৌলিকসব বিষয়ে জামায়াতিদের দৃষ্টিভঙ্গীর আস্ফালন, এটিকেও নিষিদ্ধের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে তাদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

জামায়াত-শিবিরের সকল অপতৎপরতার আর্থিক যোগান আসে তাদের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে। তাদের সবচে বড়ো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক-এর প্রধান বৈদেশিক বিনিয়োগকারী হচ্ছে সৌদী আরবের আল-রাযী ব্যাংক। রাশিয়ার আরটি টিভি জুলাই মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং এতে ব্যাংকটির সাথে আল-কায়েদার আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে উঠে আসে, উল্লেখ্য যে প্রতিবেদনটি মার্কিন সিনেট রিপোর্ট-এর ভিত্তিতে রচিত। ফিন্যান্সিং ট্যারোরিজমের সাথে জড়িত একটি ব্যাংক কীভাবে সরকার অনুমোদিত ইসলামী ব্যাংকের সাথে মিলে এ দেশে বাণিজ্য করছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও বা এর জবাব কী আছে! আর এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় শতভাগই হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের কর্মি-সাথী-রুকন দ্বারা পরিচালিত। শতভাগ নিজেদের লোক থাকায় তাদের বাণিজ্যিক অপকর্মগুলোও হয়ে থাকে সম্পূর্ণ নিরাপদে।

সংগঠনের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হোক আর সাংগঠনিক ক্যাডারদের ভয়েই হোক, বাইরে মুখ খোলার কোনো সুযোগ নেই। আর এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে তাদের দাগী ও পলাতক আসামীদেরও আয়েশী ফলপ্রসু আন্ডারগ্রাউন্ড। নয়াদিগন্ত পত্রিকা বাজারে আসামাত্রই রিপোর্ট হয়েছিলো ‘এইটমার্ডার-এর আসামী নয়াদিগন্তে চাকরী করছে’। অতি সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ৭১-এর কসাই মীর কাসেম আলী আশ্রয় নিয়েছিলেন এই নয়াদিগন্ত কার্যালয়েই। এমন আরো অনেক অপকর্মেরই অভয়ারণ্য এইসব প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যের আড়ালে নির্দ্বিধায় তারা যাচ্ছেতাই যা করে চলেছেÑ এ ব্যাপারগুলোও নিষিদ্ধের প্রক্রিয়ায় ভাবা যেতে পারে।

তৃতীয়টি হচ্ছে তাদের মিডিয়া ও মিডিয়াসংশ্লিষ্টদের পেছনে অর্থলগ্নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশবিরোধীদের প্রধান মুখপত্র আখতার ফারূক সম্পাদিত দৈনিক সংগ্রাম। যুদ্ধের আগে এবং যুদ্ধকালীন এ পত্রিকাটি নিয়মিতভাবে বাংলাদেশবিরোধিতা করেছে এবং পাকিস্তানের পক্ষে গোলাম আযমদের জ্বালাময়ী বক্তব্য ছেপে রাজাকার-আলবদর-আশশামসদের উৎসাহ যুগিয়েছে। কৌতুককর হলেও সত্য, জামায়াতের মালিকানাধীন এ পত্রিকাটি এখনো সেই চিন্তাচেতনা নিয়েই প্রকাশিত হচ্ছে। এরচে বড়ো পরিতাপের বিষয় এই যে, পত্রিকাটিকে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র থেকে শুরু করে মফস্বলের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে দেয়ালে সেটে দেওয়ার মাধ্যমে।

ঐতিহাসিকভাবে এবং সমকালীনতার বিচারেও দেশবিরোধী এ পত্রিকাটির এখন পর্যন্ত টিকে থাকাটা ট্র্যাজেডি এবং একে নির্দ্বিধায় এ দেশের সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি লজ্জা হিসেবেই আখ্যা দেয়া যেতে পারে। পত্রিকাটি বেরোয় ঠিকই কিন্তু কোনোভাবেই একে সমাজের মূল স্রোতে অন্তর্ভূক্ত করা যাচ্ছিলো না, তাই তারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সেই চিন্তাধারাকে আধুনিক মোড়কে বাজারজাত করা শুরু করে নয়াদিগন্তের মাধ্যমে। এ পত্রিকাটি তাদের বিক্ষিপ্ত কোনো তৎপরতা নয়। মিডিয়ায় কারসাজির জন্য তারা বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নেমেছে, দিগন্ত মিডিয়া নামে একটি করপোরেশনও করেছে মীর কাসেম আলী। এই করপোরেশনেরই একটি প্রতিষ্ঠান দিগন্ত টিভি, বিগত জোট সরকার যেটির অনুমোদন দেয়।

দৈনিক আমার দেশ তো আছেই, এটি জামাতের সবচে বড়ো ভদ্রবেশী সংবাদমাধ্যম। যেটির অন্যতম প্রধান অংশীদার জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক এবং এক সময়ে সংগ্রাম পত্রিকার পাবনা জেলা প্রতিনিধি তাসনীম আলম। আর মিডিয়াতে তাদের সবচে বড়ো জেকে বসার জায়গাটা হচ্ছে জাতীয় প্রেসকাব। পরিস্থিতি অনেকটা এমন যে, প্রেসকাবের সাথে মগবাজারের আলফালাহ মিলনায়তনের পার্থক্য করাটাই মুশকিল হয়ে দাড়ায়। খালেদা জিয়ার মতো একজন প্রবীণ রাজনীতিকও প্রেসকাবে গিয়ে ইফতার করেন সংগ্রামের চীফ রিপোর্টারের আমন্ত্রণে এবং ঠিক তার পাশে বসে।

শেষ পর্যন্ত প্রেসকাবটাকেও আর পবিত্র রাখা গেলো না, সেটা হয়ে উঠেছে জামায়াতের একনিষ্ঠ প্রচারণার দপ্তর। গণমাধ্যমের নীতিনৈতিকতার বিস্তৃত পর্যালোচনা শেষে জামায়াতিদের মিডিয়াসন্ত্রাসবিষয়েও একটি পৃথক কমিটি করে বিষয়টির ব্যাপার নিষিদ্ধের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। চতুর্থ হচ্ছে শিক্ষাঙ্গণ ও মাদরাসাশিক্ষা। নব্বই পরবর্তী সময় থেকেই তারা ক্যাম্পাসে মারামাটি ও হত্যাযজ্ঞ চালানোকে একটা রাজনৈতিক উপাখ্যান হিসেবেই উপস্থাপন করে আসছে। প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারীÑ কেউই তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।

মূল ধারার শিক্ষাঙ্গনে তাদের প্রবেশের মূল জায়গা হচ্ছে আলিয়া মাদরাসা, আলিম কামিল পাশ করেই তারা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। এ সুযোগটাই হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনে শিবিরের প্রধান দাম্ভিকতা এবং জামায়াতি শিক্ষকদের প্রধান আস্ফালন, সবমিলিয়ে এ শিক্ষাব্যবস্থাটি নিয়েও পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন অবশ্যই। শিবিরের হিসেবমতে তাদের সংগঠনের কর্মীদের সাংগঠনিক মৃত্যুর সংখ্যা আড়াইশতাধিক। তাদের এই হিসেবটা থাকলে সরকারের পক্ষ থেকে কেনো জামায়াত-শিবির কর্তৃক ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে মার্ডারের সংখ্যা গণনা করা হবে না। জামায়াত-শিবির এ পর্যন্ত যেসব মায়েদের বুক খালি করেছে, যেসব মায়েদেরকে সন্তানহারা করেছে, সেসব মায়েদের কাছে আমরা কী জবাব দেবোÑ সেইসব মায়ের সামনে দাড়াবার মতো সূরত আমাদের নেই, সেরকম কোনো কাজ আমরা এখনো করতে পারিনি কেনো? শহীদ জননী জাহানারা ইমাম কি আমাদেরকে ক্ষমা করবেন কোনোদিন।

আর ঘরে ঘরে যে, লাখ লাখ শহীদজননী আছে, তাদের কাছে তো ক্ষমা’র আবদার করতে পারি সত্যিকার অর্থে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার পরই। ভাবা যায়, শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের সময়েই তাদের হাতে শহীদ হয়েছে লাখ লাখ নিরীহ বাঙালী, ধর্ষিত হয়েছে কতো মা এবং কতো বোনÑ এ হিসাবগুলোও গোচরে এনে জনসম্মুখে পোস্টার-ক্রোড়পত্র আকারে প্রকাশ করা দরকার। আর মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত তাদের জল্লাদিপনার বিস্তারিত আমলনামাও নিষিদ্ধের প্রক্রিয়ায় উপস্থান করা বাঞ্ছনীয় নয় কী? অনেক রকম অপরাধে যুক্ত থাকলেও অবশেষে যুদ্ধাপরাধের দায়ে এখন কারান্তরীণ গোলাম আযম-নিজামী, সাঈদী-সোবহান, কামারুজ্জামান-কাদের মোল্লা, আজহার-কাসেম আলী। চূড়ান্ত রায়ের পূর্ব পর্যন্ত তাদেরকে আটক রাখা হবে, কারণ তারা মুক্ত থাকলে বিচারে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, এটি সহজ আইনি প্রথা। কিন্তু গোলাম আযমের রচনা-লেখালেখি-বইপত্র এবং সাঈদীর ওয়াজ-বক্তৃতার বই-সিডিকেও যুদ্ধাপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে একটি বড়ো বাধা মনে করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অচিরেই জামায়াত-শিবিরের তাত্ত্বিক বইপত্র ও ক্যাসেট-সিডিকে সম্পূর্ণভাবে বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়া উচিত, সর্বোপরি তাদের সকল প্রকার প্রকাশনাকেই এই দৃষ্টিভঙ্গীর অন্তর্ভূক্ত করা গেলে কল্যাণকরই হবে। নইলে এইসব জিনিস ভবিষ্যতে জামায়াত-শিবিরের প্রক্রিয়াটিকে পুনর্জীবিত করতে সহায়ক হবে এবং কাছে-দূরের আগামীতে নিজামী-সাঈদীর আবির্ভাবও বন্ধ করা দুষ্কর হবে। আর দেশে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানশিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর থেকে কাটাবন মসজিদকেন্দ্রিক জামায়াতী তৎপরতা বন্ধের বিকল্প নেই। উচিত, হয়েও যাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিজামী-মুজাহিদদের ফাসি। কিন্তু দু’চারজন আযম-কাসেমকে ফাসিতে ঝোলালেই কি দেশ থেকে কালের যুদ্ধাপরাধ শেষ হয়ে যাবে? চিরকালীন যুদ্ধাপরাধের ইতি ঘটবে? পরিবর্তন আসবে দেশদ্রোহী মানসিকতায়? না, এতো অল্পতেই শয়তানের দরবার শেষ হবার নয়।

জামায়াত শেষ হবে না সহজেই, তারা ‘জামায়াত-শিবির’ নামক যে প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, সেটাই সৃষ্টি করে রেখেছে ভবিষ্যতের অনেক নিজামী, অনেক সাঈদী, অনেক মুজাহিদ এবং অনেক কামারুজ্জামানকে। এ প্রক্রিয়া টিকে থাকলে ধারাবাহিকভাবে ভবিষ্যতে সৃষ্টি হবে এমন অনেক জল্লাদ-দেশদ্রোহী। তাই জামায়াত-শিবির নামক পুরো প্রক্রিয়াটিকেই চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ করা অপরিহার্য। নিষিদ্ধপরবর্তীসময়ে রক্তমাংসে যারা জামায়াত-শিবির অথবা জামায়াত-শিবিরের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে, তাদেরকেও একটি সংস্কার ও পাপমোচনের আওতার মধ্যে দাড় করিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রত্যাখ্যান করা উচিতÑ যে নামেই হোক, যেন এ দেশে জামায়াত-শিবিরের মতো এমন অশুভ প্রক্রিয়ার উদ্ভব আর না ঘটে এবং বিদেশ থেকেও যেন আমদানী করার সুযোগ না হয়। বঙ্গবন্ধু যেভাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিলেন, তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে পিতার পথ অনুসরণ না করেন, তাহলে পিতা-কন্যায় যে রাজনৈতিক ও দার্শনিক বিরোধ তৈরি হবে, সেটি বৃহৎ আওয়ামী লীগকে আক্রান্ত করে বসতে পারে।

প্রচলিত গণতন্ত্রের আদি উৎস অ্যাথেনিয়ান গণতন্ত্রের পিতা কিসথেন্স-এর দর্শন মতে জামায়াত-শিবির কোনো বৈধ গণতান্ত্রিক শক্তি হতে পারে না। ইসলাম ধর্মের প্রধান পুরুষ মুহাম্মাদ সা.-এর আদর্শ মতে জামায়াত-শিবির কোনো বৈধ ধর্মীয় গোষ্ঠী হতে পারে না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিতেও জামায়াতকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বৈধতা দেয়া হয়নিÑ তাহলে জামায়াত-শিবিরকে বৈধতা দেওয়ার স্পর্ধা আমাদের মাঝে এলো কোত্থেকে, নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনার এরচে বড়ো অভিলাস আর কী হতে পারে! সূত্র : বাংলামেইল২৪  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।