প্রতিবছর প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পরদিন খবরের কাগজ খুলে দেখতে হয় বাজেট-প্রতিবেদন। কেউ বলেন তা ‘গরিবের সহায়ক বাজেট’, কারও বা দাবি এটা ‘গরিব মারা বাজেট’। মোটকথা প্রতিবছর আমরা মোটামুটি একই চিত্র দেখি। একটু উনিশ আর বিশ মাত্র। তাই রস+আলো একটু অন্য রকম বাজেটের কথা কল্পনা করেছে।
আগামী অর্থবছরের কল্পিত সেই বাজেটের প্রতিবেদন কেমন হতে পারে, তা দেখাচ্ছেন মাহফুজ রহমান
ঝকঝকে বাজেট চকচকে অর্থনীতি
বাজেট ২০১৩-২০১৪
বিশেষ প্রতিনিধি
দেশের অর্থনীতি এখন চাপমুক্ত। তবে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ক্রমশ রুগ্ণ। শিগগিরই চাঙাভাব ফিরে আসবে, তার লক্ষণ কম। তার পরও চিন্তা নেই বাংলাদেশের। সামনেই নির্বাচন, অথচ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণেরও কোনো চাপ নেই সরকারের।
সবই তো পূরণ হয়ে বসে আছে প্রথম বছরেই। দেশে তেলবাজের বাম্পার ফলনের কারণে জ্বালানির দাম বাড়ানোর মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়ারও দরকার নেই এখন। ফলে এই সরকারের শেষ বাজেট যেন পৃথিবীর বুকে নতুন এক দিকের উন্মোচন করল।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল জাতীয় সংসদে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের যে বাজেট দিলেন, তাতে ভারসাম্য আনা হয়েছে সবকিছুর মধ্যে। এই বাজেটে সাধারণ ভোক্তারা আহ্লাদে আটখানা হবেন, সন্দেহ নেই।
ব্যবসায়ীরাও খুশিতে ডগমগ।
অর্থনীতিবিদদের আশাবাদ, বাজেটে অতীতের অনেক গুণগান আছে, ভবিষ্যতের জন্য আছে অনেক আশার কথা। এর সঙ্গে পরিকল্পনাও আছে জোরদার। এই বাজেট দিয়ে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন আর মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৩ শতাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা অর্থমন্ত্রীর জন্য ছেলেখেলা মাত্র।
বাজেট সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বললেন, ‘বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার নিরিখে যে বাজেট-কাঠামোটি আমরা আগামী অর্থবছরে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি, তা প্রবৃদ্ধি-সহায়ক হবে, মূল্যস্ফীতিকে রাখবে ডায়েটের মধ্যে এবং এতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে ঠিক বেলজিয়াম থেকে আমদানি করা আয়নার মতো।
’
হতাশা নেই কেবলই আশা
সৎ মানুষের খোঁজে
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এবারও টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না কালোটাকার মালিকেরা। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেও এ সুযোগ পাবেন না কেউ। অথচ বেশ কিছু মহলই টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেনদরবার করতে চেয়েছিলেন। জয় হলো নৈতিকতার, দুর্নীতির নয়।
কথা বললেই কর
গত অর্থবছরে মুঠোফোনে কথা বলার জন্য কর আরোপ করা হয়েছিল।
ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল টক শোর কথার ওপরও কর বসানোর। এ বছর সেটাই হলো। সুতরাং কথা কম, কাজ বেশি।
হতাশা নেই কেবলই আশা
রপ্তানির পুরস্কার
রপ্তানি বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার পরও বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা কমেনি।
বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পে রপ্তানির পরিমাণ অতীত ইতিহাস ভেঙে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের উচ্চমানের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ফলেই এমন উন্নতির জোয়ার। এসব কারণেই মওকুফ করা হলো রপ্তানিকারকদের কর।
সাধারণ মানুষের স্বস্তি
মূল্যস্ফীতি শব্দটি বোধ হয় জাদুঘরে পাঠানোর সময় হয়ে এল। ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা অনেকখানি বেড়েছে।
ন্যূনতম আয়করও কমিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এখন থেকে তিন হাজার টাকার পরিবর্তে কর দিতে হবে মাত্র ৫০০ টাকা। জয় অর্থমন্ত্রীর।
দাম বাড়তে পারে
অনুভূতি
বাজেটে অনুভূতির বর্তমান মূল্যস্তর ১০ শতাংশ বাড়ানোর এবং বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার যথাক্রমে ৪৮, ৫৫, ৭৫ ও ৮৯ থেকে বাড়িয়ে ৫০, ৫৬, ৭৬ ও ৯০ শতাংশে ধার্য করার প্রস্তাব ছিল। এ ছাড়া প্রবল অনুভূতিপ্রবণ হূদয়ের আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৬০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করায় অনুভূতির দাম বাড়বে।
এর ফলে অহেতুক কোনো কারণে কারও অনুভূতিতে আঘাত লাগার সম্ভাবনা নেমে আসবে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে।
হরতাল
বাজেটে হরতালের ক্ষেত্রে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক) মোট কর ১২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫২ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়ায় এর দাম বাড়বে। অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, এর ফলে দেশে হরতাল, ভাঙচুর, পিকেটিং, গাড়িতে আগুন দেওয়ার পরিমাণ অচিরেই শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।
গুজব
গুজব আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক, মূসকসহ মোট কর ১৫২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২১৩ শতাংশে আরোপ এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন: ফটোশপ, চাঁদ ও পোস্টারের উৎপাদনেও সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকায় এই পণ্যের
দাম বাড়বে।
আরও যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
বিদেশি সিরিয়াল, বাঁশ, ইটপাটকেল, আগুন, ভবনধস, চাঁদাবাজি, খুন, গুম, দুর্নীতি, জর্দার কৌটা, অনিয়ন্ত্রিত বক্তব্য ইত্যাদি।
দাম কমতে পারে
সুপারি পাতার গাড়ি
সুপারি পাতার গাড়ি আমদানির ওপর এর আগে আরোপিত অতিরিক্ত ২০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি বা নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করায় এই বাহনের দাম কমতে পারে।
মাছের তেল
বাজেটে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত কই, বোয়াল, ইলিশ ও পুঁটি মাছের তেল আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশের রেয়াতি হারে নির্ধারণের প্রস্তাব করায় পণ্যগুলোর দাম কমবে।
ধুতরা ফুল
বাজেটে ধুতরা ফুলের উৎপাদন খরচের ওপর শুল্ক, মূসকসহ মোট কর ১৫২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে এবং এই শিল্পে প্রয়োজনীয় ৫০টি উপকরণ আমদানিতেও শুল্ক, মূসকসহ মোট কর কমানোর প্রস্তাব করায় ধুতরা ফুলের দাম কমার সম্ভাবনা আছে।
মানুষের জীবন
বাজেটে সাধারণ মানুষের জীবনের বর্তমান মূল্যস্তর ৭০ শতাংশ কমানোর এবং বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার যথাক্রমে ৮৭ ও ৮৯ থেকে কমিয়ে ৩০ ও ৩২ শতাংশে ধার্য করার প্রস্তাব ছিল। এ কারণে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য আরও কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে
ছাই, সেফটিপিন, মারবেল, লেইস ফিতা, নেইল কাটার, ঘোড়ার ডিম, জোঁকের তেল, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি।
* উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে একটির বদলে সাতটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।