২০০৮ সালে পরিবর্তনের শ্লোগান নিয়ে আমেরিকায় ক্ষমতায় এসেছিলেন বারাক ওবামা ঠিক সেই রকম পরিবর্তনের লক্ষ্যে জাপানের দীর্ঘদিনের এলডিপি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল ২০০৯ সালে ডিপিজে । কিন্তু চার বছর মেয়াদের সংসদ তিন বছরেই ভেঙ্গে দিতে বাধ্য হন জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নোদা । শুধু তাই নয় তিন বছরে পরিবর্তন হয়েছেন তিনজন প্রধানমন্ত্রী ডিপিজে ভাঙ্গনের সন্মূখীন হয়েছে তিন বার । জাপানের সংসদীয় ব্যবস্থায় দলীয় সিদ্বান্তের বিরুদ্বে সংসদে ভোট প্রদান বা ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকলে সংসদীয় পদ হারাতে হয় না বাংলাদেশের মত । অবশ্য দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের কারনে শাস্তির সন্মূখীন হতে হয় ।
গত মাসের শেষ দিকে সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার পর নির্বাচন অনুষ্টানের দায়িত্ব প্রাপ্ত কতৃপক্ষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন ১৬ই ডিসেম্বর ২০১২ এবং মনোনয়ন পত্র দাখিলের দিন ধার্য্য করা হয় ৪ ডিসেম্বর ২০১২ । জাপানের সংবিধান অনুসারে সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার ৪০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্টান বাধ্যতামুলক । নির্বাচনের তারিখ ঘোষনার সাথে সাথে পুলিশের বিশেষ বিভাগ নির্বাচনী অপরাধ পর্যবেক্ষন করার জন্য তৎপর হয় । ৩০০ আসনের সংসদে ৪৮০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন আজ । ৩০০ জন সরাসরি নির্বাচিত হবেন বাকী ১৮০ জন সারা দেশের ১১টি ব্লকের মাধ্যমে জনগনের পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন (বিষয়টি পরে ব্যাখ্যা করছি )।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন ১২টি রাজনৈতিক দলের ১২৪৬ জন এবং ৪৮ জন নির্দলীয় প্রাথী।
ভোটারঃ ভোটারদের সর্বনিন্ম বয়স ২০ । জাপানে বাংলাদেশের মত ভোটার তালিকা করা নেই । জন্মের ১৪ দিনের মধ্যে নিবন্ধন বাধ্যতা মুলক জাপানে এবং ১৪ দিনের মধ্যে শিশুর নাম নির্ধারন করতে হয় । এই নামটি তাকে সারাজীবন ব্যবহার করতে হয় ।
একই ভাবে মৃত্যু সম্পর্কিত তথ্য দাখিল ও বাধ্যতামুলক অবশ্য বিবাহ বা বিবাহবিচ্ছেদ অথবা মা অথবা বাবার ২য় বিবাহের কারনে পারিবারিক নাম (FAMILY NAME) পরিবর্তন হতে পারে । জাপানে অবস্থান রত বিদেশী সহ জাপানীদের স্থানীয় ওয়ার্ড অফিসে নিবন্ধন করতে হয় । বাসস্থান পরিবর্তন করে অন্য ওয়ার্ডে গেলে ২ সপ্তাহের মধ্যে নিবন্ধন করতে হয় । এরকম নিবন্ধনের কারনে জাপানের স্থানীয় বাসিন্দাদের সকল তথ্য ওয়ার্ড অফিসে সংরক্ষিত থাকে । সে অনুসারে ২০ বছর হলেই নির্বাচনের পুর্বেই স্থানীয় ওয়ার্ড অফিস থেকে পোষ্ট কার্ডের মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিককে ভোটকেন্দ্র এবং নম্বর জানানো হয় ।
নির্বাচনী প্রচারনাঃ ৪ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র দাখিলের সাথে নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করেন প্রাথীগন , ১২ দিনের নির্বাচনী প্রচারনা শেষ হয়েছে গতকাল রাত ৮টায় । সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারনা চলে । রাস্তা বা ফুটপাতে নির্বাচনী মঞ্চ তৈরী করা যায় না । গাড়ীর উপরে ভ্রাম্যমান মঞ্চের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার চালান । অনেক প্রাথীকে সাইকেলের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারনা করতে দেখা যায় ।
যেখানে সেখানে প্রাথীর পক্ষে পোষ্টার লাগানো যায় না। নির্বাচনী কতৃপক্ষ পোষ্টার লাগানোর জন্য পার্ক সহ বিভিন্ন স্থানে বোর্ডের ব্যবস্থা করে থাকেন। কোন কোন সমর্থক নিজের বাড়ির সামনে নিজের মালিকানা আছে সে রকম স্থানে পছন্দের প্রাথীর পক্ষে পোষ্টার লাগাতে পারে। অবৈধ লেনদেনের সম্ভাবনা থাকায় জাপানের নির্বাচনে প্রাথীরা ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালাতে পারেন না ।
ভোট প্রদান এবং গ্রহনঃ পুর্ব নির্ধারিত ভোট গ্রহনের দিনের এক সপ্তাহ আগ থেকে স্থানীয় ওয়ার্ড অফিসে ভোট প্রদান করতে পারেন ।
হাসপাতালেও ভোট প্রধানের ব্যবস্থা আছে । সাধারনত স্কুল, কলেজ সরকারী কমিউনিটি সেন্টার গুলো পোলিং বুথ হিসাবে ব্যবহৃত হয় । সরকারী ছুটির দিন রবিবারেই জাপানে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্টিত হয় । বাংলাদেশের মত নির্বাচনের জন্য সরকারী ছুটি ঘোষনা করা হয় না । পুলিশ বা নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী চোখে পরে না এমনকি দেখা যায় না ভোট প্রদানের জন্য দীর্ঘ লাইন ।
একজন ভোটারকে দুটি ব্যালট পেপার দেওয়া হয় । একটিতে ৩০০ আসনের জন্য সরাসরি নির্বাচন যোগ্য সংসদস্যের নাম লিখতে হয়। অন্য টিতে ১৮০ আসনের প্রাথীর জন্য রাজনৈতিক দলের নাম লিখতে হয় । ব্যাপারটি অনেকের কাছে পরিস্কার নাও হতে পারে , এমনকি আমিও বুঝতে পারিনি । সাধারন ভাবে মনে হতে পারে একজন ভোটার ৩০০ আসনের জন্য ডিপিজের প্রাথীকে ভোট দিলে তিনি ১৮০ আসনের জন্যও ডিপিজেকেই ভোট দেবেন তাই স্বাভাবিক ।
তখন আমার মনে পড়ল আমার এক সহকর্মী ছিলেন উনি কালিয়কৈর বাসিন্দা ,দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলেও প্রাথী হিসাবে উনার এলাকার তানভীর সিদ্দীকিকে পছন্দ করতেন । চট্টগ্রাম এবং নারায়নগঞ্জের মেয়র নির্বাচনেও তাই হয়েছে ,দলের চেয়ে প্রাথীকে দেখেছেন ভোটাররা এটি ভাল লক্ষন বল যেতে পারে ।
ফলাফল ঘোষনাঃ রাত ৮ টায় নির্বাচন শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রচারমাধ্যম গুলো বুথ ফেরত জরিপ প্রচার করে থাকে । যা মুল ফলাফলের সাথে প্রায়ই মিলে যায় । নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে সাধারনত সকল আসনের ফলাফল প্রকাশ হয়।
প্রত্যেক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রাথীদের নামের বোর্ড থেকে নির্বাচিত হলে নীচের ছবির মত লাল ফুল লাগিয়ে দেওয়া হয় ।
আজকের নির্বাচনে কোন দলেরই নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই । সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে চীনের ক্রমাগত চাপের মুখে জাপানে ডানপন্থী সরকারের উত্থানের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না
.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।