আজ ও নিজের মাঝে অসাধারণের ছাপ খুঁজে বেড়াই কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে খুব সাধারনরুপে আবিষ্কার করি । মন্দ কি ভালই তো আছি । সারাদিন ঘুরাঘুরি করার পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কারওয়ান বাজার নর্দান ইউনিভার্সিটির সামনে দিয়ে হাঁটছি । গন্তব্য ফার্মগেট বাস স্টপেজ । বাসায় দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কি বলব তা নিয়ে মোটামুটি একটু চিন্তিতই বলা যায় ।
একটু সামনে আগাতেই লোকজনের চিৎকার শুনে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্ঠা করলাম । দেশের যা অবস্থা বাইরে বেরুলেই ভেতরটায় একটা অজানা আতংক ভর করে । তার উপর কাল আবার বিজয় দিবস । অনাকাংখিত কিছু একটা ঘটে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু না । গুটিকতক পুলিশের এদিক ওদিক ছোটাছুটি দেখে সত্যি অন্তরাত্মায় কাঁপন ধরে গিয়েছিল ।
কিছু বুঝে উঠতে না পেরে অবশেষে একজন পথচারীকে জিজ্ঞাস করে জানতে পারলাম ভি আই পি আসছে!!!এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে বাংলামোটর পর্যন্ত সব গাড়ি চলাচল বন্ধ!!!শুধু তাই না । প্রত্যেকটা ফুটওভার ব্রিজ পর্যন্ত ব্লক করে দেয়া হয়েছে । আর যেসব মানুষ উঠানামাতে ব্যস্ত ছিল তাদের তাড়াতেই পুলিশের এত তাড়া । এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়ে গেছে । মানুষকে রাস্তায় পর্যন্ত নামতে দেয়া হচ্ছে না ।
আমি নিশ্চিত কোন বিদেশী এই দৃশ্য দেখলে মনে করত বর্তমানে হিট হিরো অনন্ত জলিলের নতুন মুভির শুটিং চলছে । মুহূর্তেই মনের ভিতর একটা তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হল । খুব কম মানুষকেই দেখলাম ব্যাপারটা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে । হতে পারে অনেকেই বৃথা ক্ষোভ প্রকাশে আগ্রহ দেখান নি । তবে আমজনতার একটা বড় অংশকে দেখলাম বিপুল উৎসাহ ভরে ওই ভি এই পি নামক চিড়িয়াটিকে এক নজর দেখার জন্য ফুটপাতে লাইন করে দাঁড়িয়ে পরেছে ।
আর এদিক সেদিক না তাকিয়ে সোজা হাঁটা শুরু করে দিলাম । কারণ এইসব বিখ্যাত ব্যাক্তিদের দর্শন লাভ করে আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর বর্তমানে এমনকি অদূর ভবিষ্যতেও দু চার আনা লাভ হবে না । কিছুদূর আগাতেই মনের মধ্যে যে প্রশ্নটা কুটকুট করছিল তার উত্তর পেলাম । আমার বয়সেরই একটা ছেলেকে পুলিশের সামনে বেশ রাগান্বিত সুরে বলতে শুনলাম "জমিদারের বাচ্চারা...সবসময় এইভাবে চলাফেরা করিস বলেই তো আমাদের দুর্ভোগ তোদের চোখে পরে না । খাটাশের দল ।
" পুলিশের রিএকশানটা দেখার জন্য আবারো থামলাম । আমি নিশ্চিত ছিলাম খারাপ একটা কিছু ঘটে যাবে । পুলিশ তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে জবাব দিল "আরে ভাই উনারা সবই জানে । দোষটা হচ্ছে আপনার আমার কপালের । "এবারে আমি সত্যি কিছুটা অবাক হলাম ।
মুচকি হাসলাম । যাই হোক দীর্ঘ আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর বিশাল গাড়ির বহর নিয়ে এই অতি উঁচু স্ট্যাটাসের মানুষগুলো হন হন করে চলে গেল । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও ২০ মিনিটের মত লেগে যায় । একটা একটা করে বাস আসছে আর মানুষগুলো কুত্তার (কুকুরের)বাচ্চার মত ঝাপিয়ে পরছে । এক মুহূর্তের জন্য ভাবলাম হয়ত রোগী বহনকারী কোন এ্যম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস ও ওই চিরাচরিত দুর্ভোগ থেকে রেহাই পায়নি ।
পৌছাতে পারেনি গন্তব্যে । হয়তোবা স্বজনহারা পরিবারটি তাদের বেঁচে থাকার খুঁটিটুকু হারিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলতে ফেলতে চলে গেছে । এর মাঝেই আমার ৬ নাম্বার বাসও এসে যায় । আমিও ওই একই ফর্মুলা অনুসরণ করলাম । যাক শরীরের সব কলকব্জা ঠিক আছে ।
মানিব্যাগটাও পকেটে আছে দেখছি!!!পরম করুনাময়ের কাছে লাখো শুকরিয়া । এ যেন পান্তাভাত চাইতে গিয়ে খোরমা পোলাও পেলাম!!!জানি আমার এ লেখায় কারোর কিছুই আসবে যাবে না । সব কিছু যেমন চলছে ঠিক সেভাবেই চলতে থাকবে । কিন্তু সব কিছুরই একটা শেষ আছে । পরিবর্তন খুব সহসা না আসলেও একসময় ঠিকই আসবে ।
সেদিন আমরা না থাকলেও আমাদের নাতিপুতিরা থাকবে । হয়তো ইন্টারনেট ঘেঁটে সামুতে আমার এই লেখাটিও পরবে । তখন প্রচণ্ড ক্ষোভ আর ঘৃণাবোধের জায়গা থেকে ওইসব মানুষদের কবরে থুথু ফেলবে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।