১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর (মুক্তিযুদ্ধ) বাংলার মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করে। উপমহাদেশের মানচিত্রে বাংলাদেশের আবির্ভাব ছিল সব অর্থেই যুগান্তকারী ঘটনা। মুক্তিকামী বাংলার লড়াই সে সময় বিশ্বব্যাপী বিপুল আবেগ, সমর্থন টানতে সক্ষম হয়েছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের এ-দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতি ঘাতক বাহিনীর গণহত্যা বিশ্ববিবেককেও কাঁপিয়ে দিয়েছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরাজয় এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বিজয়ের স্মারক হিসেবে ১৯৭২ সাল থেকেই আমরা প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর ‘বিজয়’ দিবস পালন করে আসছি।
বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে আর এরকম দ্বিতীয় কোন বিজয় দিবস নেই।
১৬০৮ সালে ঢাকাকে রাজধানী করে সুবেহ বাংলার( অখন্ড বংগদেশ, বিহার ও উড়িষ্যা) রাজধানী করেছিল দিল্লীর মোঘল সরকার। প্রথম সুবেদার ইসলাম খান। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছে, শতাব্দীর ভয়াবহতম গণহত্যা যারা চালিয়েছে, তাদের বিচার এবং রাষ্ট্র ও রাজনীতিকে যুদ্ধাপরাধী ও খুনিদের প্রভাব থেকে মুক্ত করতে না পারলে গণতন্ত্র ও জাতি গঠনের কাজ যেমন সম্পূর্ণ হতে পারে না, তেমনি ১৬ ডিসেম্বরের গৌরব ও বিজয় পরিপূর্ণতা পাবে না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে ঘাতকরা সপরিবারে হত্যা করে ইতিহাস থেকে তাঁর অসামান্য অবদান মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালালেও বাস্তবে যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বাঙালি জাতির অহংকার হিসেবে তাঁর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
আমাদের প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ১৬ই অক্টোবরকে রাখী বন্ধন দিবস ঘোষণা করেছিলেন। কবিগুরু রাখী বন্ধন দিবসটি চালু করেছিলেন বংগভংগের প্রতিবাদে। পঁচিশে মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ হত্যা করে।
গ্রেফতার করা হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙ্গালীর প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গ্রেফতারের পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
সারাদেশে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। এখনো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য দাবী তুলতে হচ্ছে! দেশ বাসী সবার একটাই চাওয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ দ্রুত শেষ হোক।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সাহায্য লাভ করে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে যখন স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র তখন পাকিস্তান পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের।
৫২'র ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আর ৭০এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি এগিয়ে যায় স্বাধিকারের দিকে৷ ২৭শে মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আবারো স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করলে মুক্তিযুদ্ধ আরো গতি পায়৷ ১৭ই এপ্রিল কুষ্টিয়ার মুজিব নগরে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার৷
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি করেছেন সাধারণ মানুষ৷যারা দেশের সঙ্গে বেইমানি করেছে, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটে অংশ নিয়েছে তাদের বিচার হয়নি আজও৷ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।