রাজনীতিবীদদের ঘৃণা করি---
আমি বিশ্বজিৎ! চিনতে পারছনা? বিশ্বজিৎ দাস। এখনতো আমি সংবাদ শিরোনাম। আমার নাম সবার মুখে মুখে। শাঁখারীবাজারের একটি দর্জির দোকানের কর্মচারি বিশ্বজিৎ দাস আজ ইতিহাস। আমি দল করিনি।
সকাল থেকে রাত অবধি কাজের সাথে যুদ্ধ করে রাজনীতি করার সময় কোথায়? গ্রামে বাবা-মা'র মুখে বেঁচে থাকার মত খাবার তুলে দেওয়ায় আমার ব্রত ছিল। এখন আমার বাবা-মা'কে কে খাওয়াবে? প্রধানমন্ত্রী? নাকি বিরোধীদলীয় নেত্রী?
সেদিন একটু সকাল সকালই বেরিয়ে পড়ি দোকানের উদ্দেশ্যে। ঘন কুয়াশায় হিমিহিম ঠান্ডায় বেশ ভালোয় লাগছিল। আমি ফুটপাথ ধরে হাঁটছিলাম। মনে মনে স্বপ্ন আঁকছিলাম, আমারো হয়তো একটা দোকান হবে।
বাবা-মা'কে আমার কাছে এনে রাখব। বছরে দু'বার বাবা-মা'কে দেখে কি মনে শান্তি আসে? ভাবছিলাম, আমাকে আরো কাজ করতে হবে। আরো বেশি আয় করতে হবে।
হঠাৎ চারদিকে মিছিলের শব্দ! আর ধর্ ধর্ করে কারা যেন চিৎকার করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম।
আরে! আমার দিকেইতো তেড়ে আসছে। আমি ভীত হরিণ শাবকের মত দৌড় দিলাম। সবকিছু বন্ধ, কোথায় লুকাব? পেছেনে অনেকগুলো হায়েনা। হঠাৎ একজন ডাক্তারের চেম্বার দেখে সেখানে লুকালাম। কিন্তু হঠাৎ আমার পিঠে মনে হল কে যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
হায়েনার হাতে চাপাতি। আমাকে কচুকাটা করছে পলকে পলকে। আমি করজোড়ে ক্ষমা চাইলাম, বারবার বললাম, ‘আমি রাজনীতি করি না, আমি ছাত্রদল বা শিবির করি না, আমি হিন্দু। আমি দর্জিখানায় কাজ করি। ’কেউ আমার কথা শুনল না।
আমার সারা শরীর বেয়ে রক্ত নামছে। আমি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি। আমি রাস্তায় নেমে এলাম কোনমতে। আমার অনুভূতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। এবার ১টা ২ টা নয়।
৫/৬ টা হায়েনা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। দূরে ক্যামেরা নিয়ে ক্যামরেম্যান। যেন আমাকে হত্যার শ্যুটিং চলছে। পুলিশ ছিল গোটা ৩০। আমাকে বাঁচাতে কেউ এলনা।
আমি দৌড়ে সামনে যেতে চেষ্টা করলাম। আমার পা চলছিল না। কিন্তু আমাকে যে বাঁচতে হবে। আমার বাবা-মা'কে দেখিনা কতদিন হয়ে গেল। মাগো তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাব আমি।
কে যেন আমাকে কাছেই হাসপাতালে নিয়ে গেল কিন্তু হায়েনারা ঢুকতে দিলনা আমাকে নিয়ে। এরপর আরেক হাসপাতালে। সেখানেও মানুষরূপি কিছু হায়েনা ছিল যাদের কাছে আমার জীবনের চাইতে হাসপাতালের ফর্মালিটি বড় ছিল। এরপর আর কিছু মনে নেই।
আমি বিধাতার কাছে বসে আছি।
এখন আর কোনো ব্যথা আমাকে স্পর্শ করছেনা। শরীরের ক্ষত দিয়ে গড়িয়ে পড়া রক্ত শুকিয়ে গিয়েছে। আমার মূল হামলাকারী পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হল—মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল, মীর মো. নূরে আলম ওরফে লিমন, মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, মো. ইমদাদুল হক ও মো. ওবাইদুল কাদের। এর মধ্যে চাপাতি দিয়ে প্রথমে কুপিয়েছে শাকিল।
বাকিরা রড আর লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে আমাকে। আমিতো ওদের নাম শুনিনি কখনো, দেখাতো দূরে থাক। জানি দুনিয়ার আদালতে আমার খুনের বিচার হবেনা। মানুষ আমাকে ভুলে যাবে। আমি বিধাতার কাছে বসে আছি ওদের স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিক্ষায়।
আমি নিজ হাতে ওদেরকে শাস্তি দিতে চাই। বিধাতা আমার আর্জি মন্জুর করেছেন।
মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল, মীর মো. নূরে আলম ওরফে লিমন, মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, মো. ইমদাদুল হক ও মো. ওবাইদুল কাদের-- আমি তোমাদেরকে জানোয়ার বলে জানোয়ারদের ছোট করব না। জানোয়ারদেরও একটা নীতি থাকে। তোমাদের নেই।
নেই ঐ পুলিশদের , সাংবাদিকদের, পথচারিদের---যারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল আমাকে বধ করার দৃশ্য। দু:খিত! আমি তোমাদেরকে জানোয়ারের সাথে তুলনা করতে পারছিনা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।