আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ বিকেলে আটলান্টিকের মোহনায়

সুখি হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় বিবেক হীন হওয়া। মোহনা বলতে আমরা নদী আর সাগরের মিলনস্থলকে বুঝি। কিন্তু মহাসাগরের সাথে লেগুনের মিলন কখনো দেখেছেন কি? এ ব্যতিক্রম ধর্মী মোহনার দেখা পেতে হলে আপনাকে আসতে হবে আইভরিকোস্টের আবিদজান শহরের পোর্ট সংলগ্ন এলাকায়। আবিদজান শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিস্তীর্ণ সব লেগুন এসে মিশে গেছে অ্যাটলান্টিকের এ মোহনায়। এ যেন মহাসাগরের বুকে প্রিয়তম লেগুনের নিঃশর্ত সমর্পণ।

লেগুনের প্রেমে উদ্বেলিত হয়েই কিনা, মোহনায় শুরু হয় অ্যাটলান্টিকের প্রমত্ত ঢেউয়ের উথাল পাথাল খেলা। যেন কতকাল দেখেনি সে প্রিয়তমার মুখ। মহাসাগরের এ উশৃঙ্খলতা কে বশে আনার জন্য শক্ত কংক্রিটের স্ল্যাব ফেলে পাড়টাকে বাঁধানো হয়েছে অতি মজবুত করে। স্ল্যাবের উপর বসে প্রত্যক্ষ করলাম মোহনার মোহনীয় রূপ। পোর্ট নিকটবর্তী হওয়ায় মোহনার বুক চিরে মাঝে মধ্যেই সাইরেন বাজিয়ে যাতায়াত করছে বিশাল বড় বড় সব জাহাজ।

দুই একটা পাল তোলা নৌকার আনাগোনাও লক্ষ্য করা গেল। মহাসাগর আর লেগুনের সঙ্গম স্থল স্পষ্ট ভাবে প্রত্যক্ষ করা গেল পানির রঙের ভিন্নতার কারনে। মোহনার এক পাশে একদল স্থানীয় তরুণ তরুণীকে দেখা গেল মহা উল্লাসে জলকেলি করতে। সাগরের কাদা বালিতে মাখামাখি, পানিতে দাপাদাপি আর সাঁতার কেটে বেশ মজা পাচ্ছে তারা। দুঃখ কষ্ট থাকুক না যত, জীবনকে এরা উপভোগ করতে শিখেছে বটে।

ওদের দেখা দেখি আমিও নেমে পড়লাম মহাসাগরের হাঁটু পানিতে। ক্ষণে ক্ষণে ঢেউয়ের ধাক্কায় মহাসাগরের হিম শীতল জলের পরশ অনুভূত হল। পানির ঝাপটায় অর্ধ স্নান হয়ে গেল আমার। ঢেউয়ের ধাক্কা এসে ফিরে যাওয়ার সময় টেনে নিয়ে যাচ্ছে পায়ের তলার সব বালি। এতে অজানা এক রোমাঞ্চে শিহরিত হল দেহ , মন।

কথায় বলেনা – পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে, বিষয়টি হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় সাগরের হাঁটু পানিতে নামলে। শেষ বিকেলের রক্তিম সূর্যটা অস্তাচলে হেলে পড়েছে। সূর্যের সোনালী কিরণের বর্ণচ্ছটায় দীপ্তি ছড়াচ্ছে স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ লেগুনের জল। খানিক পর আঁধার নেমে এল। একে একে জ্বলতে শুরু করল বাতিঘরের সব লণ্ঠন।

আলো আর আধারিতে অন্য রকম এক সম্মোহনী আবহ তৈরি হয়ে গেল পুরো মোহনা জুড়ে। উঠতে কিছুতেই মন সায় দিচ্ছিল না। এ রকম পরিবেশে সকল দুঃখ বেদনা ক্লেশ ভুলে অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর পাশে যদি থাকে প্রিয় কোন মানুষ , তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কিছুতেই জায়গাটি ছেড়ে আসতে মন চাইবেনা।

কিন্তু বিদেশ বিভূঁইয়ে এসে প্রিয় মানুষের দেখা পাব কোথায়? তাই উঠতে হল নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই। ফেরার পথে রাস্তার পাশে দেখলাম তৈরি হচ্ছে বিখ্যাত সেই আইভরিয়ান ডিশ – কলা পোড়া। আস্ত পাকা কলাকে বার- বি-কিউ বানিয়ে এরা কি মজা পায় বুঝিনি আজও! তবে আবিদজানের জোন কাথ এলাকার এক রেস্তোরাঁতে ‘ অস্কারের পুলে’ নামে এক বিশেষ ধরনের চিকেন বার বি কিউ টাইপ খাবার তৈরি হয় যা অতিশয় সুস্বাদু। ওটাতে ঝালের মাত্রা এত বেশি থাকে যে চোখে পানি আসবেই। কিন্তু পুরোটা শেষ না করে উঠা যায়না কিছুতেই।

কলা পোড়া দেখে মনে পড়ল- আজ আমার ডিনার সারতে অস্কার রেস্টুরেন্ট এ যাওয়ার কথা। গাড়ি হাঁকিয়ে রওনা হয়ে গেলাম জোন কাথের উদ্দেশে। পেছনে পড়ে থাকল অ্যাটলান্টিক মোহনায় রেখে যাওয়া মন মুগ্ধকর একটি বিকেল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।