আমি অবাক হয়ে যাই এই দেশে ডঃ জাফর ইকবালের স্যারের বিরুদ্ধে কথা বলার লোকের অভাব নেই। এই লোকটা বিদেশে উচ্চ ডিগ্রি লাভ করে; বিদেশে নানা রকম লোভনীয় প্রস্তাব উপেক্ষা করে দেশকে ভালোবেসে দেশে চলে এসেছে। বিনিময়ে কি দিছে এই দেশ উনাকে? যেই উনি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে লাগলেন; পত্রিকায় লিখতে লাগলেন; দেশের তরুন সমাজকে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে উদ্ধুদ্ধ করতে লাগলেন একদল নার বিরুদ্ধে উঠে পরে লাগল। প্রথম আলোতে এক লেখা আসছিল। তখন তাদের আবার গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেছে।
ভাব দেখে মনে হচ্ছে এই দেশের যুবসমাজ বাঙালি ললনাদের চেহারা কখনো দেখে নাই; আর তরুনেরা পাঞ্জাবি পায়জামা টুপি ছাড়া বুঝি কেউ রাস্তায় বের হয় না। (অথচ এক আজিজ মার্কেটে যেই পরিমাণ টি শার্ট আছে তাতে পুরা বাংলাদেশ কাভার করা যাবে)। তরুনেরা পড়বে টি-শার্ট- আস্তাগফিরুল্লাহ। আমি এই দেশেরই একজন। আমাদের দেশের তরুন তরুনীরা যে এত ধর্মপরায়ন আমি জানতাম না, জাফর ইকবাল স্যারের লেখার প্রতিক্রিয়া দেখে জানতে পারলাম।
স্বভাব খারাপ আমার; মোবাইলে ইন্টার্নেট ইউজ করি। আজেবাজে সাইটেও মাঝে মাঝে ঢুকে যাই। তাতে আমাদের দেশের তরুন তরুনীদের নৈতিক দিক সমন্ধে যে ধারনা পাই তা আর না-ই বললাম। যাই হোক সেই সব প্রতিক্রিয়া বাজদের ধারনা এই দেশের তরুন-তরূনী সবার বোরকা পর্দা করে অস্থির অবস্থা। কিন্তু জাফর স্যারের লেখা পড়ে সবাই বোরখা পর্দা বাদ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসছে।
সাচ্চা মুসলমান আমরা, এত বিরাট একটা কিছু ঘটে গেল আমরা তো চুপ করে থাকতে পারি না। প্রায়ই প্রতিদিন আমরা রেইপ-এর ঘটনা পত্রিকা মারফত জানতে পারি কিন্তু তা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না; রাজনীতিবিদরা দেশটা লুটেপুটে খাচ্ছে; খাক না। আমি তো ভালো আছি। কিন্তু জাফর ইকবালের এত বড় সাহস। সে পত্রিকায় কিভাবে এত খারাপ কথা লিখে।
মুসলমান সেন্টু তখন আমাদের ভিতর সুড়সুড়ি দেয়া শুরু করে। লাগ শালারা এই বেটার পিছনে। ইন্টার্নেট ঘেটে তখন তার মেয়ের ছবি উদ্ধার করা হয়। ডিজিটাল যুগ আমাদের। ব্লগে দিয়ে দেয়া হয় সেই ছবি; সাথে রসালো কথাবার্তা।
শালা ইসলাম ধর্ম নিয়ে কথা বলস কত বড় সাহস তোর। দেখ আল্লাহ আমাদের দিয়ে তোরে কত বড় শাস্তি দেয়ায়। তবে উপরওয়ালা ভালো বলতে পারবেন এই কাজটা কতটা ইসলামিক/অনৈসলামিক হয়েছে। আমার কথা হলো তোদের যদি স্যারের কথা যদি ভালো না লাগে ইগনোর কর। স্যার তো কোন পীর ফকির হয়ে যায় নাই যে স্যার যা বলে তাই শুনতে হবে।
তোর ভালো না লাগলে তুই শুনিস না।
আরেক দলের কথা বার্তা স্যার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত বড় বড় কথা বার্তা বলেন তবে স্যার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন নাই কেন? আমার কথা হলো মুক্তিযুদ্ধের সময় সবাই কি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল? অবশ্যই না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে নাই কিন্তু তিনি তো এইটা অস্বীকার করেন না। তিনি তো মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন কাজ আদায় করছেন না; কোন সুবিধাও দেশ থেকে নিচ্ছেন না। আর এইটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে তিনি একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
বরং তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন নাই; কিন্তু এখন যেই কাজ করতেছেন তা মুক্তিযুদ্ধ থেকে কোন অংশে কম না। তার লেখায় প্রায়শই মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠে আসে। তার লেখা পড়ে আমাদের তরুন সমাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দিপ্ত হয়, এইটা কি খারাপ? আমাদের দেশে তো লাখ লাখ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে; যারা মুক্তিযুদ্ধ করে নাই। কিন্তু সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে ঠিকই সুবিধা ভাগিয়ে নিচ্ছেন। সব দোষ জাফর ইকবাল স্যারের।
বড় অদ্ভূত আমাদের দেশের মানুষের মন মানসিকতা।
তার বিরোধীদের অভিযোগ তিনি নাকি এই সরকারের আমলে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন নাই। আমার কথা হলো তিনি কি এই দেশের কাছে চুক্তিবদ্ধ নাকি যে সব বিষয়ে উনার কথা বলতে হবে। এইগুলো ছাড়াও তো উনার অনেক কাজ আছে। দেশে তো আরো অনেক বুদ্ধিজীবী তো আছে ।
তাদের কারো কথা উঠে না শুধু জাফর ইকবাল স্যারের নাম কেন উঠে? ভাব দেখে মনে হচ্ছে স্যারের কথা ছাড়া বুঝি এই দেশে কিছু হয় না। পরিমল ইস্যু, পারসোনা ইস্যু; তেল গ্যাস ইস্যু ইত্যাদি ব্যাপারে উনি কিছু বলেন নাই মানে কি উনি এই গুলা সাপোর্ট করেন????? ভাব যে দেশের আইন আদালতও বুঝি স্যারের কথা ছাড়া চলে না। তাই যদি সত্যি হতো দেশে কবে রাজাকারেরা ফাসিতে ঝুলে যেত।
আমার কথা হলো মানুষের দোষ ত্রুটি থাকবেই। জাফর ইকবাল স্যারও মানুষ।
তিনিও দোষ ত্রুটির বাহিরে নন। কিন্তু তার দোষ ত্রুটি বলার আগে হাজার বার আমাদের স্বীকার করতে হবে উনি দেশের জন্য কি করেছেন। উনার আর কায়কোবাদ স্যারের প্রচেষ্টায় ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে এখন ছেলে মেয়েরা আন্তর্জাতিক গনিত অলিম্পিয়াডে অংশ গ্রহন করতেছে। এছাড়া যে কোন সামাজিক আন্দোলনে উনাকে সবসময় পাওয়া যায়। যে কোন সামাজিক অস্থিরতায় তার বক্তব্য আমাদের সঠিক পথ দেখায়।
কিন্তু এইগুলো কি উনি ব্যক্তিগত লাভের জন্য করেন? কি লাভ উনার এই সব করে? উনি যেই সাহিত্য রচনা করে গেছেন তা-ই উনাকে অমর করে রাখার জন্য যথেষ্ট। উনি এইগুলো করেন তিনি দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। আর দেশের মানুষ তাকে ভালোবাসার কি সুন্দর প্রতিদান দিচ্ছে? এই দেশে ১৭ কোটি মানুষের বসবাস। কেউ ১৭ জন দেখাক তো যে দেশ-কে ভালোবেসে জাফর ইকবাল স্যারের চেয়ে বেশি কিছু করেছে। দেশকে ভালোবাসা আর দেশের জন্য ভালোবেসে কিছু করা দুইটা আলাদা জিনিস।
জাফর ইকবাল স্যার তা করে দেখিয়েছেন। এই দেশকে ঠ্যাং দেখিয়ে আমেরিকা পরে থাকলে তার কিছু আসতে যেত না। কিন্তু তিনি না করে দেশে আসছেন দেশকে ভালোবাসেন বলেই।
স্যার, আপনি বড্ড অসভ্য একটা সমাজে বড্ড অকৃতজ্ঞ একটা জাতির মাঝে জন্মগ্রহন করেছেন। এই জাতি ২০০ বছর ইংরেজদের গোলামি করেছে; ২৪ বছর পাকিস্তানিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে; ৪০ বছর ইন্ডিয়ার দ্বারা শ্লীলতাহানির স্বীকার হচ্ছে।
হবেই কারন এই জাতি এইটারই প্রাপ্য। আপনি স্যার বড্ড ভুল সময়ে বড্ড ভুল জায়গায় জন্মগ্রহন করেছেন। আপনি যদি আমেরিকায় জন্মগ্রহন করেন তাহলে স্যার অনেক বেশি সম্মান পেতেন, আর অনেক চাকচিক্যের মাঝে থাকতে পারতেন। আপনার কপালে হয়তো নোবেল পুরষ্কারও জুটে যেত। খোদার কসম স্যার, আপনি যদি এখন এই দেশের জন্য নোবেল জয় করেও নিয়ে আসেন, তখন তারও সমালোচনা করার লোকের অভাব হবে না।
জানি না স্যার ব্লগে আপনার মেয়ে ছবি দিয়ে পোস্ট দেখার পর আপনার মাঝে বা আপনার পরিবারে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল । কিন্তু আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আপনি এই নরকের কীটগুলোরে কখন ক্ষমা করবেন না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।