হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীনতার যে ঘোষণাপত্র পাঠ হয়েছিলো, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সংবিধান তাতে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েমের উদ্দেশ্য হিসাবে পরিস্কার ভাষায় বলা হয়েছিলো,
‘যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব,সাহসিকতা ও বিপ্লবী তৎপরতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জমিনে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করেছে; বাংলাদেশের সার্বভৌম জনতার ইচ্ছায় চুরান্ত বিধায় তারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা,নির্বাচিত প্রতিনিধিরা,একত্র হয়ে গণপরিষদ গঠন করে পারষ্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য,মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে’
পাকিস্তান রাষ্ট্রে আমরা সমতা, মর্যাদা এবং ন্যয়বিচার পাইনাই বলেই আমাদের বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েম করতে হয়েছে। আমরা কারা, এদেশের আপামর জনগণ, প্রত্যেক নাগরিক। আমাদের বীরত্ব, সাহসিকতা এবং বিপ্লবী তৎপরতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েমের লড়াই শুরু হয়েছে। এই লড়াই বায়ান্ন থেকে একাত্ত্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক এবং একাত্ত্বরে এসে সামরিক রূপ লাভ করে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের কিছুকাল পূর্বেই গণতান্ত্রিক কায়দায় আমাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধীদের নির্বাচিত করেছি যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের ভুমিকা পালন করেছে।
আমাদের এই নির্বাচিত প্রতিনিধীরা আমাদের সার্বভৌম ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের মধ্যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য। সেই চেতনা নিয়াই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েম করেছি। এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধানেও গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এই দুই শব্দকে মূলনীতি হিসাবে গৃহিত করে সেই চেতনাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করাহয়েছিলো।
কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশ রাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়নাই তাই এখনো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চাইতে হয়। কারন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার বদলে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধীরা গোষ্ঠিতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আমাদের উপর জমিদারী কায়েম করেছে।
তাদের স্বার্থে ন্যায়, আমাদের স্বার্থে অন্যায় এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের বাস্তবতা। জনগণের সামরিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত রাষ্ট্রের মালিকানা তারা কুক্ষিগত করে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সাগরন-রুনির সন্তান ন্যায় বিচার পান না। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে তকির পিতা নায় বিচার পান না। এই পরিস্থিতিতে সাভারের শ্রমিকেরা ন্যায় বিচার পাবে কি? আমরাতো কিছুদিন আগেই একাত্ত্বরের শহীদদের পক্ষে ন্যায় বিচারকে গোষ্ঠিতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছি।
সাভারের শ্রমিকদের জন্যে আমরা কি করতে পারবো?
সামাজিক ন্যায় বিচার যেখানে নাই, সেখানে সাম্যের প্রশ্ন ওঠেনা। গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাষ্ট্রের সর্বাধিক আয় রোজগারের পাথেয় হওয়া সত্ত্বেও আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধীরা তাদের শ্রেণীগত স্বার্থে এই শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বহাল রেখেছে। এই শ্রমিকের জন্যে সাম্য নাই, ন্যায় বিচার নাই। কিন্তু মানবিক মর্যাদা আছে কি? দেখা গেলো যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটজনক একটি প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতি এই রাষ্ট্র কিভাবে মানবিক মর্যাদাটুকুও প্রতিষ্ঠা করতে পারলোনা? কেনো একটা ফাটল ধরা বিল্ডিংএ তাদেরকে জোর করে মালিক ও ভবনমালিকরা ঢুকিয়ে মেরে ফেললো? বিল্ডিংটায় ফাটল কিভাবে ধরলো? সেই পুরনো সামাজিক ন্যায়বিচারহীনতার কাহিনী, সংখ্যালঘু অত্যাচারের ইতিহাস, এবং সর্বোপরি আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধীদের গোষ্ঠিতান্ত্রিক জমিদারী কায়েমএর পেয়াদা হিসাবে ‘রানা’দের কাহিনী উঠে আসে।
এই পেয়াদাকে রাজা শূলে দেবেন কি? সেই ভয়ের কারনের অভাব নাই। কারন তাজরিন ফ্যাক্টরির ঘটনার বিচারের জন্যে এখনো রিট করতে হয়
গার্মেন্টস শ্রমিকদের মানবিক মর্যাদা, তাদের জন্যে সামাজিক ন্যায় বিচার এবং সর্বপোরি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা দূর করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবিত হয়ে আমাদের অবশ্যই বিজিএমইএ, আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধীদের মধ্য থেকে কতিপয় মন্ত্রী ও সকল সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে লড়তে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা আগামী ১মে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সকাল ১১টা থেকে বিজিএমইএ ভবনের সামনে দিনব্যাপী প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশ করতে যাচ্ছি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে হাজির হোন। সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার।
গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। আমরা শ্রমিকের অধিকার আদায় করে নেবো। শ্রমিক, শিল্প ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এই তিন রক্ষা করতে হবে।
আমাদের দাবি:
১. সকল খুনি মালিকদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত কর।
২. প্রত্যেক নিহত শ্রমিক পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা এবং আহত শ্রমিকদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য ৩০ লক্ষ টাকা দিতে হবে।
৩. নিহত ও আহত শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ কর।
৪. সকল কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করতে বাধা দেওয়া যাবেনা।
৫.খুনি মালিকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে শ্রমিক কল্যাণে ব্যয় করতে হবে।
প্রচারেঃ জাতীয় স্বার্থে ব্লগার অনলাইন একটিভিস্ট ফোরাম
ইভেন্ট লিংকঃ Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।