প্রচলিত কথানুযায়ী কালের আবর্তে শিল্পী হারিয়ে যান, কিন্তু তার শিল্প টিকে থাকে। কিন্তু শিল্পকে টিকে থাকতে হলে তার মধ্যে এমন কিছু গুণ বিদ্যমান দরকার হয়, যার আকর্ষণে মানুষ বারবার তার কাছে ফিরে আসবে। শেক্সপিয়ার, চার্লস ডিকেন্স কিংবা আমাদের শরৎচন্দ্র, রবি ঠাকুর এমনিতেই এতদিন ধরে পাঠক হৃদয়ে সমাদৃত হয়ে নেই, তাদের লেখনীতে এমন কোন বিশেষ ছোঁয়া আছে, যার ফলে দীর্ঘকাল যাবত পাঠককুল তাদের রেখে যাওয়া কর্মের তারিফ করতে ক্লান্ত হয়ে ওঠে না। আর বাংলাদেশের সমকালীন লেখকগণের মধ্যে এমন কেউকে পাওয়া যাবে না যার লেখনীতে প্রকাশ পায় যে তার কর্মের মাধ্যমে তিনি মানুষের কাছে যুগ যুগ ধরে সমাদৃত হবেন। সবাই হয়তো বলবেন, প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রের মাধ্যমে তিনি পাঠক হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
কিন্তু একবার ভালমত ভেবে বলুনতো, হিমুর কোন গল্পের কোন অংশটুকু আপনার মনে দাগ কেটে আছে। অথবা গল্পের কোন লাইন যা আপনার হৃদয়কে বারেবারে আন্দলিত করবে অথবা বিপ্লব সৃষ্টিকারী বা শিহরণ জাগানিয়া কোন আখ্যান। যা আছে তাহলো ব্যস্ত শহুরে পাঠকদের মনকে ক্ষণিক প্রশান্তি দেওয়ার কিছু রংচঙে কথাবার্তা আর সুড়সুড়ি জাগানো কিছু প্রেমোপাখ্যান। আর আমাদের মিডিয়া তো আছেই সবকিছুকে অতিরঞ্জিত করার জন্য। কোন একটা জিনিস বা কোন ব্যক্তি জনপ্রিয়তা লাভ করেই তাকে ঘিরে বিশেষ কিছু আয়োজনের মাধ্যমে টিভি চ্যানেলগুলো বাড়তি আয়ের সুযোগ খুঁজে।
আসলে মিডিয়ার পুরোপুরি দোষ দিয়েও লাভ নাই, আমাদের পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থাটাই এরকম। সবকিছুতেই বিপণন আর বাণিজ্যের গন্ধ খোঁজে। অন্যথায় কবির মৃত্যুতে সাধারনভাবে শোক প্রকাশ না করে ‘হলুদ পাঞ্জাবি’ পরে হিমু হলেই শোকের মাত্রাটা বেশি উপলব্ধ হবে, এ ধারণা কোন সাধারণ মানুষের মনে আদৌ আসার কথা না। মিডিয়ার কল্যাণে তার দুই দিনের সংসার আজ বিশ্বজোড়া সহানুভূতি আদায় করছে। আর চল্লিশ বছরের সাজানো সংসারের কেউ খোঁজও নিচ্ছে না।
লেখকের জন্মদিবসে তার তরুণী স্ত্রী এক এক চ্যানেলে এক এক রঙের শাড়ি পরে শোকগাথা বয়ান করে চরম আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা করছেন আর দর্শক হয়তো তা গোগ্রাসে গিলছেন। শেষ কথাটা হচ্ছে, কালজয়ী হলে কখনও প্রচার মাধ্যমের প্রচারণার দরকার হয়না। তার লেখনী যদি উচ্চমানের হয়ে থাকে তাহলে পাঠক তাকে মনে রাখবেন, অন্যথায় লাল,নীল,হলুদ এসব রঙের উপমা দিয়েও তাকে ধরে রাখা যাবেনা। পাঠকের চিন্তায় সাময়িক দৃশ্যপট অঙ্কন আর তার হৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেওয়া, কাজ দুইটি পরস্পর থেকে যোজন যোজন মাইল দূরের বস্তু। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।