আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৮টি গ্যাস ব্লক মিয়ানমারকে ছেড়ে দিয়ে নতুন ব্লক-ম্যাপে দরপত্র আহ্বান : কথিত সমুদ্র বিজয়ের গোমর ফাঁস!

গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের ৮টি সম্ভাবনাময় গ্যাস ব্লক মিয়ানমারের হাতে তুলে দিয়ে সমুদ্রসীমা বিজয়ের এক প্রতারণামূলক উচ্ছ্বাসে মেতেছে সরকার। মিয়ানমারকে ছেড়ে দিয়ে আসা ৮টি ব্লকে অন্তত ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা বাদ দিয়ে নতুন করে ব্লক-চিত্র তৈরি করেছে পেট্রোবাংলা। আর এই নতুন ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। এ বিষয়ে আজ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। গ্যাস ব্লক সংক্রান্ত নতুন ম্যাপে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের পুরনো গ্যাস ব্লক ম্যাপ থেকে ১৮, ২২, ২৩, ২৬, ২৭ এবং ২৮ নম্বর ব্লক পুরোপুরি মিয়ানমারকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ১২, ১৩, ১৭ ও ২১ নম্বর ব্লক থেকে আংশিক মিয়ানমারের দখলে চলে গেছে। গত ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত ইটলস’র রায়ে বিশাল সমুদ্র জয়ের যে গল্প সরকারের পক্ষ থেকে শোনানো হচ্ছিল তার গোমর ফাঁস হয়ে গেছে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ব্লকের নতুন ম্যাপ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। পুরনো এবং নতুন ম্যাপ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ কথিত ‘বিশাল অর্জন’ এর পরিবর্তে অবিশ্বাস্য বিসর্জন দিয়ে এসেছে। এর আগে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা গভীর সমুদ্রের যেসব ব্লককে সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন তার বেশির ভাগই চলে গেছে মিয়ানমারের হাতে। মূলত ওই সব ব্লকেই মিয়ানমার তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১২টি ব্লকে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। এই দরপত্র আহ্বানকে সামনে রেখে পেট্রোবাংলা ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেছে। জুনের মধ্যে নির্বাচিত উত্পাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) সই করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।

এতে আগামী শীত মৌসুমে ব্লকগুলোতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কাজ শুরু করা যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এবারের দরপত্রে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার আশা করছে পেট্রোবাংলা। আগামী ১৫ অথবা ১৬ তারিখে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হবে। এছাড়া ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি মিশন এবং বহির্বিশ্বে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে দরপত্রের নোটিশ পাঠানো হবে। জানা গেছে, বঙ্গোসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী কোম্পানিগুলো তাদের প্রস্তাব দাখিলের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস সময় পাবেন।

তারা পেট্রোবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করে আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকেই দরপত্র সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারবেন। জানা গেছে বঙ্গোপসাগরের ৬১ হাজার ৬৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪১ বর্গকিলোমিটার এলাকা পড়েছে গভীর সমুদ্রে। বাকি ৫১ হাজার ৫৮৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা অগভীর সমুদ্রে পড়েছে। আজ রোববার সকালে অগভীর সমুদ্রের ৯টি এবং গভীর সমুদ্রের তিনটি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র (‘বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড-২০১২) আহ্বানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলা কার্যালয়ে সংবাদ সন্মেলন করে এ ঘোষণা দেয়া হবে। সাগর ও স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর থেকে এরই মধ্যে পাঁচ দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে এবারই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ব্লকের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। এদিকে, সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় অগভীর সাগরের ১ ও ৫ এবং গভীর সাগরের ৯, ১৪, ১৫, ১৯, ২০, ২৪ ও ২৫ নম্বর ব্লকের জন্য এবার দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এর মধ্যে ৫ নম্বর ব্লকের জন্য বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দরপত্র আহ্বান করেও শেষ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নির্বাচিত কোম্পানি তাল্লোর সঙ্গে উত্পাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) করা যায়নি।

ব্লকটির বড় অংশজুড়ে ভারতের দাবি থাকায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেটির বিষয়ে পিএসসি করা থেকে বিরত থাকে। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রতিষ্ঠানে বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে আরেকটি সমুদ্র বিজয় হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে যে আত্মঘাতী মীমাংসা হয়েছে তাতে ভারতের সঙ্গে কতটা অর্জন হবে, না বিসর্জন দিতে হবে তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০০৮ সালের বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সর্বশেষ দরপত্রের মাধ্যমে মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপস ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব পায়। কোম্পানিটি সাগরের জলসীমায় জরিপ শেষে এখন প্রাপ্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করছে বলে জানা গেছে।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।