আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এম এম আকাশ স্যার , অর্থনীতিবিদ ( মুক্তিযোদ্ধা)

আমার জীবনী পরতে খুব ভালো লাগে, আর সেইটা যদি হয় কোন প্রিয় মানুষের তাইলে তো কথায় নেই। এইটা পড়ে মনে হল সবাইকে জানানোর দরকার, তাই কপি পেস্ট করে দিলাম আর কি। কেও প্রশ্ন করতে পারেন আরে বেটা নিজে লেখস না কেন? আমি বলব আগে নিজে একটু পড়ি কপি পেস্ট করে একটু পরিচিত হয় তারপর দেখা যাবে। যায় হোক হুদাই প্যাঁচাল না পেরে এম এম আকাশ স্যার এর হালকা কিছু লেখা কপি পেস্ট করলাম। স্কুলে পড়ার সময় যোগ দিই মুক্তিযুদ্ধে মা আমাকে বাসায় পড়াতেন।

সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলাম, অল্প কিছুদিন সেখানে পড়াশোনা করেছি। ১৯৬০-৬৪ সময়টা কেটেছে গ্রামে। এ সময়টায় সিরাজগঞ্জের জ্ঞানদায়িনী স্কুলে গিয়েছি তিন-চার মাস। ১৯৬৬ সালে ভর্তি হই ধানমণ্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলের প্রথম দিনের কথা এখনো মনে আছে।

আমাকে ভর্তি করাতে নিয়ে গেছেন বাবা। হেডস্যার জানালেন, 'সিট খালি নেই, বছরের মাঝামাঝি সময়ে ভর্তি করা যাবে না। ' আমার বাবা খুবই জেদি ছিলেন। তিনি আমাকে ভর্তি করিয়েই ছাড়বেন। এ সময় তিনি একটা অদ্ভুত কাণ্ড করলেন।

একটি চেয়ার নিয়ে এসে ক্লাসরুমের দরজার পাশে রাখলেন। বললেন, 'আমার ছেলে এখানে বসে ক্লাস করবে এবং ও ভালো করবে। ' নাছোড়বান্দা বাবার কাছে হার মানলেন হেডস্যার, তিনি আমাকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করিয়ে নিলেন। আমি বাবার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছিলাম। দশম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের প্রথম স্থানটি দখল করে রেখেছিলাম।

ক্লাসের সবাই আমাকে নেতা মানত, ছাত্রদের কোনো সমস্যা হলে আমাকে সামনে এগিয়ে দিত। তখন খুব সম্ভব অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। ছাত্ররা জানাল, মিলাদ মাহফিলের টাকা নিয়ে হেরফের হচ্ছে। এটা নিয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর দরখাস্ত দিতে হবে। এ কাজের ভার পড়ল আমার ওপর।

আমি লিখলাম, 'এত দ্বারা আপনাকে জানানো যাইতেছে যে আমরা সকালবেলা স্কুলে আসিয়া মিলাদের বিষয়ে আলোচনা করিতে গিয়া জানিতে পারিলাম, এখানে একটি প্রশ্নের উদ্রেক হইয়াছে...। ' বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায় দরখাস্তটা লিখে জমা দিলাম। হেডমাস্টার দরখাস্তটা পড়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর বললেন, 'আচ্ছা, তুমি যাও। ' আমি চলে এলাম, তিনি বাবাকে ডেকে পাঠালেন।

বললেন, 'দেখেন আপনার ছেলে এই কাজ করেছে। ' বাসায় ফেরার পর রাতে বাবা আমাকে ধরলেন, এই দরখাস্ত তুমি লিখেছ? আমি স্বীকার করলাম। তিনি বললেন, দরখাস্তের ভাষা ঠিক হয়নি। বাবা সংশোধন করে লিখতে বললেন। আমি এত দ্বারা কেটে দিলাম।

বারবার লিখছি আর কাটছি, কিন্তু কিছুতেই হচ্ছে না। বাবা বললেন, তুমি যেটা বলতে চাও, সেটাই লিখবে। কিন্তু ভদ্র ভাষায়, রীতি অনুযায়ী, কাউকে আঘাত না দিয়ে। ঠিকঠাক দরখাস্তটা লিখে তবেই বাবার কাছ থেকে ছাড়া পেলাম। ১৯৭১ সালে আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি।

এ সময় একটা আন্দোলনে জড়িয়ে যাই। 'পাকিস্তান দেশকৃষ্টি' নামে একটা বই আবশ্যিক হিসেবে চালিয়ে দেয় পাকিস্তান সরকার। সেখানে পাকিস্তানের জয়গান গাওয়া হয়, বিকৃত করা হয় ইতিহাস। এ নিয়ে আমরা স্কুল ছাত্রসংগ্রাম কমিটিও গঠন করেছিলাম। তখন একটি অদ্ভুত স্লোগান দিতাম, 'দেশকৃষ্টি বাতিল করো, বাতিল করো।

' এরই মধ্যে এসে গেল উত্তাল মার্চ। খবর পেলাম, কলাবাগানে গেরিলাদের একটি গ্রুপ আছে। তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন শিল্পী শাহাবুদ্দীন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হলো। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে একটা কাজ দিচ্ছি।

এখন তো সরকার চাইবে ম্যাট্রিক পরীক্ষাটা হোক, দেখাতে চাইবে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তোমাকে এমন কিছু করতে হবে, যাতে কেউ পরীক্ষা না দেয়। পরীক্ষার আগে স্কুলে বোমা মারতে হবে। আমি সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম। প্রথম যেটা করলাম, সহপাঠীদের একটি গোপন মিটিংয়ে ডাকলাম।

সবাইকে বললাম, আমরা কেউ ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেব না। সবাই বলল, দেব না। কিন্তু মুখে বললে তো হবে না, আমি সবাইকে প্রবেশপত্র জমা দেওয়ার জন্য বললাম। অনেকে দিল, অনেকে দিল না। শাহাবুদ্দীন ভাইকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি আমাকে কিছু লিফলেট দিলেন।

তাতে ভয়ভীতি দেখিয়ে নানা লেখা_'ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিলে বাসায় কাফনের কাপড় পৌঁছে যাবে...ইত্যাদি। ' বাসায় বাসায় লিফলেট পৌঁছে দিলাম। এ কাজটা সে সময় অনেক রিস্কি ছিল। ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগের রাতে গেলাম বোমা মারতে। স্কুলেই ছিল মিলিটারি ক্যাম্প, বোমাটি ছুড়েই দিলাম দৌড়।

আমার ধারণা, এখনই বিকট শব্দে সেটি ফুটবে। নির্মাণাধীন ভবনের ভেতর দিয়ে ছুটছি, এমন সময় সামনের দিকে যেতে বারণ করলেন এক মহিলা। পরে জানা গেল, সামনের বাসায় শিল্পী ইকবাল আহমেদকে ধরতে এসেছে মিলিটারিরা। ভাগ্য ভালো, বোমাটা ফাটেনি। এখন ভাবি, সেদিন বোমাটা যদি ফাটত, দুই দিক থেকে মিলিটারিরা গুলি করত।

আমি ক্রসফায়ারে পড়ে যেতাম। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য সীমান্তে পাড়ি জমালাম। অংশ নিলাম মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় ফিরে এলাম। ২০০ মার্কসের ম্যাট্রিক পরীক্ষা নেওয়া হলো।

খবর এলো, পরীক্ষায় আমাদের স্কুল থেকে একজন ঢাকা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। যেহেতু আমি ক্লাসের ফার্স্টবয়, সবাই ধরে নিয়েছে আমিই সেই জন। সবাই আমাকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে, অভিনন্দন জানাচ্ছে, আমি অবলীলায় তা গ্রহণ করছি। পরে জানা গেল, দ্বিতীয় হয়েছে ক্লাসের অন্য একটি ছেলে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, খুব ভালো প্রস্তুতি ছিল না।

তার পরও বোর্ডে ২০ জনের তালিকায় ছিলাম। বাংলা ছিল প্রিয় বিষয়। দুর্বল ছিলাম অঙ্কে। এ বিষয়ে ফেলও করেছি। ষষ্ঠ শ্রেণীর শেষের দিকে বাবা একজন শিক্ষক নিযুক্ত করেছিলেন।

স্যার আমার মধ্য থেকে গণিতভীতি দূর করেন। প্রিয় শিক্ষক ছিলেন আলাউদ্দিন স্যার, তিনি আমাদের বাংলা পড়াতেন। স্যারের সঙ্গে অনেক দিন পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল। পেপার এ এতটুকই ছিল। সত্যতা যাচাই করতে পারেন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।