ফুটবলের ইতিহাসে যুক্ত হচ্ছে যুগান্তকারী এক অধ্যায়। আজ প্রথমবারের মতো ফুটবল মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহৃত হবে জিএলটি তথা গোল লাইন টেকনোলজি নামের এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। একে রেফারির ডিজিটাল সংস্করণ বলা যায়। জাপানে শুরু হওয়া ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের আজকের হিরোশিমা বনাম অকল্যান্ড সিটির মধ্যকার খেলায় এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করছে ফিফা কর্তৃপক্ষ। এতোদিন ধরে রেফারিকে সন্তুষ্ট করে জালে বল ঢোকাতে পারলেই গোলের বাঁশি।
কিন্তু আজ থেকে এই গোল নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলেই ব্যবহার করা হবে এ পদ্ধতি যা হকআই ও গোলরেফ নামের দুটি প্রযুক্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে। গতকাল বুধবার জাপানে এক সংবাদ সম্মেলনে জিএলটি ব্যবহারের ঘোষণা দেন ফিফার মহাসচিব জেরোম ভালকে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে জেরোম বলেন, এটা একটা ঐতিহাসিক দিন হতে চলেছে। আগামীকাল (আজ) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো গোল লাইন প্রযুক্তি ব্যবহার হতে যাচ্ছে মাঠে। ইতিমধ্যে এই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ব্যবহার সফল হয়েছে।
তবে খেলা শুরুর প্রায় ঘণ্টা দেড়েক আগে এই প্রযুক্তি যথাযথভাবে কাজ করছে কী না তা পরীক্ষা করা হবে। যদি রেফারি সন্তুষ্ট হতে পারেন তবেই তা ব্যবহার করা হবে বলে জানান হকআইয়ের মহাব্যবস্থাপক স্টিভ কার্টার। এই পদ্ধতিটির ব্যবহার সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। হকআই পদ্ধটিতি ক্রিকেট ও টেনিসে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। গোলরেফ পদ্ধতিতে বলের গায়ে একটি মাইক্রোচিপ লাগানো থাকে।
আর গোলপোস্টে থাকবে চুম্বক। হকআই তার বাজপাখির মত শক্তিশালী সাতটি ক্যামেরা দিয়ে প্রত্যেকটি বল জালে ঢোকার চিত্রটি নিখুঁতভাবে ধারণ করবে। কাজেই জিএলটি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি গোল হওয়ার সময় বল ও গোলপোস্টের প্রতি মিলিমিটার পরিমাণ চিত্রে কোথায় কি হচ্ছে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখন শুধু দেখার বিষয় হলো, জিএলটি স্থাপনের পর তা সঠিকভাবে কাজ করছে এবং মাঠের ক্যামেরাগুলোও তা সঠিকভাবে দেখাতে পারছে।
মূলত ফুটবলে রেফারির যেকোনো সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে।
দর্শক ক্যামেরায় হয়তো স্পষ্ট দেখছেন যে সিদ্ধান্তটি ভুল। কিন্তু রেফরি হয়তো তা খেয়াল করেননি। এ সকল ভুল সিদ্ধান্ত খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আর এই সমস্যা থেকে ফুটবলকে মুক্ত করতেই জিএলটির ব্যবহার শুরু করতে চাইছে ফিফা।
তাছাড়া গোল লাইন টেকনোলজির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে স্টিভ কার্টার ২০১২ এর ইউরো কাপে ইংল্যান্ড বনাম ইউক্রেন ম্যাচের উদাহরন টেনে আনেন।
খেলার ৬২ মিনিটে ইউক্রেনের স্ট্রাইকার মার্কো দেভিচের শট গোলে ঢোকার পর জন টেরি কোনোমতে সেটা বের করে দেন। হাঙ্গেরিয়ান রেফারি কাসাই গোল দেননি। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল গোললাইন ক্রস করে গিয়েছিল। গোলটা দেওয়া হলেও অবশ্য ইউক্রেন কোয়ার্টার ফাইনালে যেত না। স্কোর ১-১ হলেও ইউক্রেন ছিটকে যেত।
কিন্তু গোলটা দেওয়া হলে ইউক্রেনের আরো গোল করার সম্ভাবনা ছিল। ইউক্রেন সমর্থকদের চিৎকারে ইংল্যান্ড দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। এই ইউরোতেই এ ধরনের গোল বিতর্ক সামলানোর জন্য দুদিকের গোলপোস্টের পাশে থেকেছেন অতিরিক্ত সহকারী রেফারি। তাদেরও চোখে পড়েনি গোল। ম্যাচের পর উত্তেজিত ইউক্রেন কোচ ওলেগ বেন্টাখিন মন্তব্য করেছেন, মাঠে পাঁচজন রেফারি ছিল।
বলটা ৫০ সেন্টিমিটার ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। তা হলে পাঁচ রেফারির কী দরকার? ম্যাচের মধ্যেই তিনি তর্ক জুড়ে দেন চতুর্থ রেফারির সঙ্গে।
কার্টার আশা করেন, জিএলটির ব্যবহার থাকলে ওই ম্যাচের ৫০ সেন্টিমিটার কেনো, দুই-তিন বা চার মিলিমিটারের মাপও সঠিকভাবে নেওয়া যাবে। আর শেষ পর্যন্ত আজকের খেলাতে এমন হলেই আমরা সফল হয়েছি বলে ধরে নেওয়া যাবে।
সুত্রঃ এখানে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।