আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা,২১শ অধ্যায়

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে ২০শ অধ্যায় Click This Link বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল ফার্ষ্ট ইয়ারের ক্লাস শুরু হয়েছে ; সব ছেলে মেয়ে নতুন , একটু সময় লাগবে সবাইকে চিনে নিতে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টের ছাত্ররা জানে আন্তরিকতা দিয়ে সহজ করে তুলতে পারেন ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক এই দিলরুবা ম্যাডাম । লীনা নামটা অফিসিয়ালি ব্যবহৃত হয় না , দিলরুবা আহমেদ নামে পরিচিত সে এখানে, সংক্ষেপে দিলরুবা। নতুন ছাত্র ছাত্রীদের জড়তা কাটতে একটু সময় লাগে এই নতুন পরিবেশে ; সে কথা মনে রেখে ক্লাসে ঢোকেন তিনি । হঠাৎ সামনে বসা একটা ছেলের দিকে চোখ পড়ল , হাসিমুখে পাশের ছেলের সাথে কথা বলছিল ।

হাসিটা দেখে লীনা চমকে গেল । কেমন যেন খুব চেনা , খুব পরিচিত মুখ ,মুখের হাসি । এত মিল কি করে হতে পারে ! তাকিয়ে খেয়াল করে ছেলেটার কথা বলবার ভঙ্গীতেও কি অসম্ভব মিল । কত দিন পেরিয়ে গেছে অথচ লীনার চোখের সামনে স্পষ্ট সেই মুখ । দীপুর মতই তো , একই অবয়ব বিশেষ করে হাসিটা তেমন নিষ্পাপ সরল ।

কোনভাবে ক্লাস নেয়া শেষ করে রুমে ফিরে আসে লীনা । ছাত্রদের তথ্য চেয়ে পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে; কি হয়েছে ওর ? দীপু তো সপরিবারে দেশের বাইরে তাহলে ওর ছেলে এখানে কি করে আসবে ! চেহারায় মিলে গেলেই যে সে দীপুর কেউ হবে এমন কোন কথা নেই । নিজের বোকামীতে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায় । এক এক করে ছবি মিলিয়ে অনিন্দ্য রায়হান নামের ছেলেটার কাগজটা মেলে ধরে চোখের সামনে , এই ছেলেটাই তো ! বিদেশী কোটায় ভর্তি হয়েছে , কানাডায় জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। ছেলেটার বাবার নাম পড়তে গিয়ে মাথাটা ঘুরিয়ে যায়, 'মোহাম্মদ দাইয়ান', বার বার পড়ে ; হ্যা দীপুর নামই তো এটা ! কে যেন ওর বুকের ওপর ভারী বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে এমন অনুভুতিতে অসাড় লীনা অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে ।

স্মৃতির ভার, বেদনার ভার , এক অব্যক্ত শূন্যতার হাহাকার বয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিলরুবা আহমেদ সেদিন ঘরে ফেরেন; ঘরটা কেমন পর পর মনে হয়, সব কিছু পর মনে হয় এমনকি নিজেকেও । মানুষকি তার নিজের কাছে আপন ? আপন হয়ে ধরা পড়ে অবিকল ? এতগুলো দিন কি সে পার করেনি ? জীবনের বাকী দিনগুলিও চলে যেত যেমন করে যাচ্ছে , কেন নিয়তি তার সাথে প্রহসনের খেলায় প্রতিনিয়ত তাকে বিদ্ধ করে ? এক এক করে মনে পড়ে যায় লীনার সব কথা । বিয়ের পরে লন্ডনে চলে যেতে হয় রাকিবের সাথে । সেখানে ডক্টরেট করবার সুযোগ পেয়ে যায় । একমাত্র মেয়ে সেখানেই জন্ম গ্রহন করে ।

আপাত: সুখের জীবন একরকম কাটছিল । তারপরে চাচীর অসুস্থতায় রাকিবের লন্ডন থাকার ইচ্ছেটা দূর হয় । দেশে ফেরে সবাই, রাকিব প্রাইভেট কোম্পানীতে যোগ দেয় । চাচা বয়সের কারনে হোক বা যে কারনে হোক বদলে যান, সংক্ষিপ্ত হলেও মানবিক মূল্যবোধ তার মধ্যে দেখা যায় । আশে পাশের বহুতল ভবনের মাঝে বাড়ীটা যেমন ছিল তেমনই থাকে, তিনতলা পুরোন।

লীনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগ লাভ করে অনেকটা ভাগ্যগুনে , দেশে ফেরার আগেই সার্কুলার হয় এবং যথাসময়ে সে সুযোগটার সদ্ব্যবহার করতে পারে । যার কথা ছিল এ দেশে স্থায়ী হবার, সব সময় তেমন কথাই যে বলতো সেই মোহাম্মদ দাইয়ান দীপু চলে যায় কানাডা । ৯০ এর গন অভ্যুত্থান , এক মহাজাগরন এ দেশে । ডাঃ মিলনের সাথে ঘনিষ্টতা ছিল দীপুর । গনতন্ত্রের আহ্বানে ডাঃ মিলনের মত একজন অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান মানুষের রক্ত ঝরলো এ দেশের মাটিতে, ১৯৯০ এর ২৭শে নভেম্বর মহিমান্বিত হোল ।

দীপুর পরিবার শঙ্কিত হয়ে পড়ে দীপুর জন্য এবং দীপুকে চলে যেতে হয় আমেরিকা, সেখান থেকে ডক্টরেট করে সে পাড়ি জমায় কানাডা , সেখানে সুখের সংসার তার । এ সব কথা জানে লীনা , কত জন আছে এ সব জানাবার । যারা বলে তারা শুধু কিছু তথ্য সরবরাহ করে; তারা জানে না এ সবে লীনার কোথায় কতটা আলোড়ন তোলে, কতটা কাতর হয় সে । কতভাবে সব ভুলে থাকতে চেয়েছে পারে না লীনা ; আকর্ষনীয় লাবন্যময়ী লীনা কখনো কখনো ভেবেছে দীপুর উপর প্রতিশোধ নেবার কথা এমন সব উপায়ে যা অত্যন্ত অসন্মানের , পারিপার্শ্বিকতা এবং নিজের শিক্ষা ও রুচিতে আটকেছে বলে পারেনি । প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষে রাকিব মনে করিয়ে দিয়েছে দুই একবার দীপুর কথা ।

সেখানেও লীনার যন্ত্রনা, বেগবান ব্যথা বুকের মধ্যে গুমরে মরেছে তাকেও মেরেছে । এক একবার শুধু জানতে ইচ্ছে করে কেন দীপু এমন করে ওকে প্রতারিত করলো , কেন পালিয়ে গেল ? কত কথা মনে পড়ে যায় , মনে পড়বে কি । চোখের সামনে জীবন্ত সব কিছু , সেই সব দিন । বাসায় সব দেখা শোনা শেষ করে একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে লীনা ; বাসার সবাই জানে ডিপার্টমেন্টে অনেক কাজ ছিল তাই ক্লান্ত । আর লীনা জানে সে ক্লান্ত সেই অবহেলা সয়ে সয়ে ; বড় ক্লান্ত ।

কবিতার বই একটা নিয়ে । পড়তে শুরু করে এখন তুমি অনেক দূরে পারুল, সুদূরিকা তুমি আকাশের দীর্ঘ পথ হাটি , যে তারাকে দিশা করে চলি দেখি উল্কা , ঝরে পড়ে বেদনার পাহাড়ে পুড়ে যায় আবেগ , উড়ে যায় ধূলিকণা দূর সীমানার পার , আর কত দূর হলে অদেখার ধার ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় , বলতে পারো পারুল ? তোমার বুকের ওপর এত মাটি এত ঘাস এত চলে যাওয়া চিহ্ণ , এত ব্যথা কোথায় লুকিয়ে রাখো জল নেই যে বুকে তোমার তার কেন ধারা ধরে রাখো মিথ্যে সব মিথ্যে হতে পারে , তবু তুমি ছিলে সে সত্য স্বচ্ছ তুমি নেই চোখের সম্মুখে সে কথাই মনে করিয়ে দেয় তুমি সত্য, নদী বা নারীর রূপ স্পর্শের অতীত তোমার চেয়ে বড় সত্য নেই এই মানব জীবনে । চলবে....  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।