আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। কিস্তি ৪৬:
বঙ্গবন্ধু হলের পরিবেশটা অন্য হলের চেয়ে একটু আলাদা ছিল। আমার নিজের হল বরে বলছি না। আসলেই আলাদা ছিল।
এই হলের নাম আবার দুপক্ষ দুভাবে বলতো। এক পক্ষ বলতো মুজিব হল। আরেক পক্ষ বঙ্গবন্ধু হল। আমি বঙ্গবন্ধু হলই বলতাম। তবে ছাত্রনেতাদের টলারেন্স ক্ষমতা দেখার জন্য আমি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ভাইকে মুজিব হল বলায় তিনি বেশ অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।
বললেন, তুমি তো সাংবাদিক তোমার মুজিব হল বর অর দরকার কী।
এ ক্ষেত্রে ছাত্রদল নেতারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান নি। লাল্টু ভাই আমেক জিগেশ করেছিলেন কোন হলে থাকি, বললাম বঙ্গবন্ধু হল। তিনি পাল্টা কোনো ক্রিয়া বা প্রত্রিকয়া জানাননি।
তবে জিয়া হলকে সবাই জিয়া হলই বলেন।
ওই হলের আসল নাম বীর মুবক্তযোদ্ধ জিয়াউর রহমান হল। স্বৈরশাসক হিসাবে খ্যাত এরশাদ হল দুটো বানিয়েছেন বলে শুনেছি।
হলে আমার রুমে যারা ছিলেন তারা একেক ক্ষেত্রে এককজন জন যথেষ্ট দক্ষ! তাদের গুরু মানি এখনো। মাসুদ ভাই, হুমায়ূন ভাই, পুতুল ভাই, আজাদ ভাই এবং আমার বন্ধু কামাল। যাকে আমি কা মাল বলেই ডাকতাম।
সব মিলিয়ে এ রুমের নারী জগতে একটা সুখ্যাতি ছিল। আমাদের আগে এ রুমে থাকা প্রিন্স ভাই, সিরাগঞ্জ বাড়ি। উনার নারী জগতে সবচেয়ে বেশি খ্যাতির গল্প শুনতে শুনতে অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছিলাম লোকটাকে দেখার জন্য। দেখাও হয়েছিল্। বেশ মিশুক মানুষ।
ভালোই ছিলেন।
হল লাইফে আমার অনেক স্মৃতি আছে। এ মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে আমাকে একবার চমকে দিয়েছিল আমার বন্ধু সোহেল। ও সে সময় হল শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। ৪ জুলাই আমার জন্মদিন।
এটা অনেকেরই জানার কথা নয়্। কিন্তু হঠাৎ করে ওইদিন রাতের প্রথম প্রহরে সোহেল দলবল নিয়ে হাজির। ফুলের তোড়া সাথে। কিছুক্ষণ আগে আমি বাইরে থেকে আড্ডা মেরে এসছি। মাত্র ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকলাম।
দেখি সবাই রুমে বসে আসে। আড্ডা মারছে।
আমি নিজেই ভুলে গেছিলাম জন্মদিনের কথা! ৩ জুলাই রাতের শেষ ভাগে ওরা এই হুলুস্থুল কাণ্ড করে বসলো।
সোহেলের সাথে ওর বিশ্বস্ত অনেকেই ছিল। এদের মধ্যে ডলারের কথা মনে পড়ছে।
ওরা সবাই রুমে এস বসলো। আমার রুমমেটরা বোকা হয়ে গেলেন। পরে অবশ্য তাদের আপ্যায়নের বন্দোবন্ত করলেন রুমের সবাই মিলে। আমার ৩৩ তম জন্মদিন সামনে। তাই এ দিনটি কাছিয়ে আসলে আমার সে দিনের কথা মনে পড়ে।
এমন হঠাৎ করে কেউ আমাকে চমকে দিবে, এটা আমার ভাবনার বাইরে ছিল। সে চমক দিয়ে সোহেল আমাকে অনুরক্ত করে রেখেছে।
আমার জন্মদিনে এ ছাড়া বড় কোনো চমক নেই। এখন অবশ্য সংসার করি, তাই জন্মদিন ঘিরেই আগেই পরিকল্পনা করা থাকে। আগে সে ভাবে দিনটি পালন, বা এ দিন ঘিরে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা থাকত না।
অনেকে জানত, অনেকে জানত না। তবে ইদানিং কালে ফেসবুকে কল্যাণে সবাই সবার জন্মদিন জানে এবং উইশ করে থাকে।
আমরা রুমমেটরা রুমটেদের জন্মদিন সম্পর্কেও জানতাম খুবই কম। বাইরে থেকে গিফট আসলে এটা বেশি জানা যেত। তবে মজার ব্যাপার হলো ৩১৪ নম্বর রুমে গিফট আসবে না, এটা হতে পারে না।
এ রুমে রোমান্টিক সব মানুষের ভরপুর, সবাই সবার হরিহর আত্মা। কেউ কারো পেছনে লেগে নেই। রুমে সবার মধ্যে এ রকম সদ্ভাব আর কয়টা রুমে ছিল বা আছে আমার জানা নেই। এসএম হলে এমন দেখেছি এক রুমে দুই জন, তাও মিল নেই। কিন্তু আমাদের রুমমেটদের সাথে এখনো যোগাযোগ আছে।
আমরা একে অন্যের সুখ দু:খের সাথী। ভালো লাগে বিষয়টা ভাবতে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।