আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুড বাই ধানমন্ডি লেক

যে যায় লংকায়, সে হয় রাবন বিকেলে একবার ধানমন্ডী লেকের পাড়ে না বসলে নিরব পোদ্দারের পেটের চা-বিস্কুট হজম হয় না। আজকে বাসা থেকে বের হবার সময় নিরব মনে মনে শপথ করেছে সজ্ঞানে কোন মেয়ের দিকে তাকাবে না। সে জানতে পারে, ধর্মে এ নিয়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা আছে। যথারিতী একটি ঢাউস সাইজের কড়াই গাছের নিচে নিরবে বসে আছে নিরব পোদ্দার। মাঝে মাঝে নিজের অজান্তে চোখ পড়ে মেয়েদের দিকে।

জেট বিমানের ন্যায় দ্রুত গতিতে চোখ নামিয়ে নিলেও ঐশ্বরিয়ার কাছাকাছি দেখতে একটি সুন্দরী মেয়ের দিকে দ্বিতীয়বার তাকাতে গিয়ে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলে চোখ ফিরিয়ে নেয়। মেয়েটি যেন সাক্ষাৎ ঐশ্বরিয়া! আবারও তাকাতে ইচছা করছে। রিতীমতো মনের সাথে পানি পথের যুদ্ধের ন্যায় শুরু হযে যায় তীব্র যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত নিরবের হার। চুলে আঙ্গুল চালিয়ে কিছুটা বিন্যাস করে পুন:বার একটু ভাব নিয়ে তাকাতে গিয়ে নিরবের চক্ষু চড়কগাছ।

একি! ঐশ্বরিয়া কৈ? এতো আমাদের ক্লাশের ‘বাইট্টা শেফালী’!! টেকনিক্যাল কলেজে পড়লে এ এক সমস্যা। মেয়ে কম। তাই খুব দ্রুত চেনা যায়। শেফালী একটি ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নিরব ভালো করে দেখলো।

না, ছেলেটা তাদের কলেজের কেউ নয়। অসম্ভব রকমের কালো একটা ছেলে। গ্রামের বাড়ীতে লাকড়ির চুলায় বসানো ডেকচির তলায় জমাট বাধা কালিকে যেন হার মানায়। অথচ শেফালীর রং ফর্সা। বাইরের একটি কুচকুচে ছেলের সাথে প্রেম করছে সে।

কি আর করা। বিশ্ব প্রেমিকা হিসাবে তার পরিচিতি আছে ক্যাম্পাসে। হেন কোন পোলাপান নাই শেফালী টাংকি মারে নাই। কলেজের গন্ডি পেরিয়ে সেফালী এবার বাইরে হাত বাড়িয়েছে। সম্প্রতি কলেজের পাজি ছেলে কোব্বাত আলী যে বোমা ফাটালো শেফালীকে নিয়ে তাতে মাঘ মাসের শীতেও অনেকের গায়ে ঘামের নিশানা দেখা যায়।

শেফালী নাকি বাথরুমে কলেজের পিয়ন তোবারককে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িযে আছে। শুধু তাই নয়,শেফালীর ঠোঁট...। বাকিটুকুন না বললেও ক্লাসের বদের হাড্ডি সম্প্রদায় ঠিকই বুঝে নিয়েছে। অতি অল্পতেই সবকিছু বুঝে নেয়ার অনন্য সাধারন প্রতিভার অধিকারী তারা। শেফালীর গায়ের রং কর্ণফুলী পেপার মেলের সাদা কাগজের মতো সাদা হলেও চেহারাখানা একদম বান্দরের লাহান।

ক্লাসে ঢুকলে রফিক, সুমন, ইমন এর মাতো পাজিরা ‘বাইট্টা বান্দর’ এসেছে বলে কিঞ্চিত আওয়াজ তোলে। অবশ্য এই আওয়াজ শেফালীর কান পর্যন্ত যায় না। শেফালী নিজেকে লম্বা প্রমানের জন্য কখন-সখনও মিনিমাম পাঁচ ইঞ্চি উঁচু হাই-হিলের জুতা পড়ে আসে। এতে করে কাক যেমন ময়ুরের মতো হাটতে গিয়ে নিজের হাটা ভুলে যায় ঠিক তেমনি শেফালীর নিজস্ব স্বকীয়তার স্খলন ঘটে। কেউ সহজে তার পাশে ঘেষতে চাই না।

কী সব পারফিউম মেখে আসে, কারো কারো বমির উদ্রেক করে। সেদিন তো ক্লাশে ঢুকার সাথে সাথে রফিক ওয়াক করে বমি করে বসলো। পরে গোপন সূত্রে জানা গেল, রফিক ইচ্ছা করে গলায় আঙ্গুল চালিয়ে এ অকাজটি করেছিল। উদ্দেশ্যে শেফালীকে অপমান করা। রিতীমতো করিমের গা ভাসিয়ে দেয় সে।

এ নিয়ে করিমের কোন রাগ নাই রফিকের উপর। যতো রাগ ঐ শেফালীর উপর। একটা বিদগুটে গালি দিয়ে করিম ক্লাশ থেকে বেরিয়ে পড়ে। নিরব ভেবে পাইনা, যে মেয়েটির নাই ভালো চেহারা, বামনের কাছাকাছি খাটো, আচড়নে অসভ্য, কারো সাথে নেই কোন ভালো সম্পর্ক, কিংবা বয়স হাফ সেঞ্চুরীর কাছাকাছি হলেও এখনও বিয়ের নেই কোন খবর- তার ভিতরে কিসের এতো অহংকার! বাহিরের একটি ছেলের সাথে শেফালীকে দেখে নিরব মোটেও অবাক হইনি। তবে যে বিষয়টি তাকে পীড়া দিচ্ছে তা হলো, এই শেফালীকে দেখতেই তার আজকের দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শপথ ভাঙ্গতে হলো।

নিরব রাজ্যের হতাশা বুকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিল। সে ভাবছে, আর কখনও ধানমন্ডি লেকের পাড়ে আসবেনা। ফিরে লেকের দিকে তাকিয়ে বলল- গুড বাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।