১৯৪৭ সালে একদিনের ব্যাধানে দুটি দেশ হল ভারত আর পাকিস্তান।
১৪ই আগষ্ট জন্ম হল পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের আর
১৫ই আগষ্ট জন্ম হল ভারত নামক রাষ্ট্রের
ভারত পাকিস্তান ভাগের একটা অন্যতম নিয়ামক ছিল ধর্ম। হিন্দু প্রাধান্য অঞ্চল নিয়ে ভারত আর মুসলিম প্রাধান্য অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান। তখন ভাষার বা জাতীয়তা নির্ধারণের অন্যান্য উপাদানগুলোকে তেমন প্রাধান্য দেয়া হয়নি তাই ভারতে হিন্দু হয়েও যেমন অনেকগুলো ভাষার সমন্বিত একটা দেশ হল তেমনি পাকিস্তানেও ভিন্ন ভাষা বাংলা হয়েও বাংলা প্রদেশ (পরবর্তীতে স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ) হয়েছিল পাকিস্তানের অংশ যদিও একটা বিশাল কিন্তু থেকে গিয়েছিল তা হল মাঝখানে ভারত থেকে গিয়েও দুইটা অংশ দুই যায়গায় রেখে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র।
পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা রাখতে পারলনা সেই ধর্মের মর্যাদা, থাকা গেলনা মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই এই শব্দে।
প্রথম আঘাতটা আসল ভাষার উপর উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করতে গিয়ে, বাংগালীরা তাদের মায়ের ভাষার এমন অমর্যদা আর অবহেলা মেনে নিতে পারলনা তার সাথে যোগ হল অর্থনৈতিক, রাজনৈতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈষম্য। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন দ্বন্দের ঘটনা প্রবাহে ছয় দফা পেরিয়ে এক দফাতে ঠেকল। শুরু হল মুক্তি যুদ্ধ। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক শ্রেণী এবার ও রাখতে পারলেননা ইসলাম ধর্ম নামক ধর্মের এই মর্যাদা। ইসলামের ইতিহাস ঘাটলে অনেক যুদ্ধের বর্ণনা চলে আসে অনায়াসে কিন্তু কোন যুদ্ধে মুসলমানরা শিশু এবং নারীদের অপমান করেছে নজীর পাওয়া যাবেনা, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীরা সেদিন ধর্ম ভুলে গিয়েছিল, বাংগালীর বুকে চালিয়ে দিয়েছিল ট্যাংক এর বহর, অপমান করেছিল মা বোনদের, শিশুরা বাদ যায়নি ধ্বংসলীলা থেকে, কোন বাছ-চিচার না রেখেই আক্রমণটা করল।
কিন্তু রুখে দিতে পারেনি বাংগালীদের, বাংলার দামাল ছেলেরা সেদিন ঝাপিয়ে পড়েছিল সেদিন মাথায় ছিলনা কোন জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা বংশ পরিচয়। সবার ছিল একটাই প্রত্যয় দেশ স্বাধীন করা চাই।
শুরু হল ধ্বংসযজ্ঞ
গুড়িয়ে দিল ঘরবাড়ি
দিশেহারা হয়ে একটু আশ্রয় এর সন্ধানে নারী, শিশু, পরুষ, আবাল, বৃদ্ধ।
ধ্বংসপ্রাপ্ত গভর্ণর হাউজ বা আজকের বংগ ভবন
গণহত্যা
বুদ্ধিজীবি হত্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর শহীদ শিক্ষকদের কফিন
পথেঘাটে লাশ আর লাশ
এত হত্যা, ধ্বংসলীলার পরও মাথা নত করে সেরেন্ডার করতে হল পশ্চিম পাকিস্তানের
জেনেরাল আরোরা, জেনেরেল নিয়াজি, মেজর হায়দার স্যারেন্ডার এর পূর্ব মূহুর্তের একটি দৃশ্য
মুক্ত পতাকা বাংলার আকাশ
স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ
সোনার বাংলাদেশ আমার প্রাণের বাংলাদেশ
আমরা রাখতে পারিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে
পারিনি স্বাধীনতার ঘোষক ধরে রাখতে
গণতন্ত্রের জন্য আমাদের আবার সংগ্রাম করতে হল, শহীদ হতে হল নূর হোসেনদের
আমরা কমাতে পারিনি ধনী গরীব বৈষম্য
আমাদের সীমান্তে ঝুলে যায় ফেলানীরা
আমাদের ছাত্রদের চলে অস্ত্রের মহড়া
আমরা পুড়ে দিই ছাত্রবাস
আমাদের শিক্ষকদের কাছে ধর্ষীত হয় ছাত্রী
আজও সারি সারি গুমের মিছিল
বুটের তলায় মানবতা
তাহলে কি আমরা সেই পাকিস্তানের দিকেই ফিরে যাচ্ছি, পাকিস্তানীরা আমাদের নির্যাতন, অপমান করেছে কিন্তু আমরাতো আজ স্বাধীন তবে কেন আমরা করছি অপমান নিজেরা নিজেদের, আসুননা সবাই আমরা একটা সুন্দর দেশ গড়ি, আজকেই শপথ হয়ে যাক, আমরা বদলে যাব, বদলে দেব, আমরা গাইব বিজয়ের গান
যত দুঃখ, যত বেদনা
যত অন্যায়, যত যাতনা
হোক আজ অবসান
এসো গাই বিজয়ের গান। ।
ছাড়ি হিংসা, ছাড়ি বিদ্বেষ
হাতে হাত ধরি, চল গড়ি দেশ
মনের যত ময়লা ধূলো
ধূয়ে মুছে হোক অবসান
এসো গায় বিজয়ের গান। ।
নয় মুসলিম নয় হিন্দু
নয় খ্রিষ্টান নয় বৌদ্ধ
পিঠে পিঠ নয় বুকে বুক রেখে
সকল ধারা মিলে মিশে এক প্রাণ
এসো গায় বিজয়ের গান। ।
যায়নি রোখা একাত্তরে
দামাল ছেলেরা সবই পারে
শপথ এবার ৭১ কে হতে দেবনা ম্লান
এবারের সংগ্রাম, অন্ন বস্ত্র শিক্ষা চিকিৎসা বাসস্থান
এসো গায় বিজয়ের গান।
।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।