আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! আমি আবার বললাম
-আমি আসতে পারবো না !
এবার গলায় একটু রাগের ভাব ছিল । আর খানিকটা বিরক্তির ভাব !
নিশি নিশ্চই বুঝতে পেরেছে যে আমি ওর কথায় খানিকটা বিরক্ত হয়েছি ! তাই চুপ করে রইলো !
আমি ফোনটা কানের কাছে ধরেই রাখলাম কিছুক্ষন ! কোন সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না ! বললাম
-তুমি শুনতে পাচ্ছ?
নিশি মৃদুস্বরে বলল
-পাচ্ছি তো ! বল !
-আমি এখন আসতে পারবো না !
-দেখ না একটু ? প্লিজ ! তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ! আর খুব তো বেশি দুরে না ! আমি উত্তরা থেকে আসতে পারছি আর তুমি এই দুরে আসতে পারবে না ?
-উত্তরা থেকে আসতে পারছো মানে ?? তুমি কি চলে এসেছো ?
নিশি কোন কথা বলল না । চুপ করেই রইলো ! আমার মেজাজটা এবার একটু সত্যি খারাপ হল ! এই ফাজিল মেয়ে আসবি তো আয় আগে একবার ফোন দিয়ে আসবি না ?
আমার কাজ থাকতে পারে না । আর এখন শীত কাল । সকাল বেলা বেশ শীত পড়ে ।
বাইরে একদম বের হতে ইচ্ছা করে না ! আমার তাই ইচ্ছাই ছিল না একদম বাইয়ে রের হওয়ার । আর আজকে টিউশনীও নাই ! প্লান ছিল সারাদিন ঘরে বসে বসে ঘুমাবো আর টিভি দেখবো !
তার উপর মাসের শেষ ! হাতে একদম টাকা পয়সা নাই ! নিশি কে নিয়ে বের হওয়া মানে টাকা পয়সার খরচ !
আমি আবার বললাম
-কি হল কথা বলছো না কেন? তুমি চলে এসেছ ?
-হুম !
আমার মেজাজ এবার সত্যিই খারাপ হল । এই শীতের ভিতরেও আমাকে এখন বের হতে হবে ! ঝামেলা !!!
আমি আরো খানিকটা মেজাজ গরম করে বললাম
-যেমন নিজে নিজে এসেছ আবার নিজে নিজে চলে যাও ! আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নাই ! রিক্সা ভাড়া দেওয়ার মতও কোন টাকা নাই ! আমি চাইলেও আসতে পারবো না !
নিশি আরো কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ! তারপর নিশি বলল
-তুমি রিক্সা নিয়ে আসো ! আমি ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি ! আসো না প্লিজ ! একটু আসো !
-কি টাকা পয়সা বেশি হয়ে গেছে নাকি ?
নিশি চুপ করে রইলো আবার !
নিশির এই ব্যাপার টা আমার একটু পছন্দের ! নিশি কখনও আমার সাথে কোন বিষয়ে কোন আরগু করে না । যদি ও কিছু চায় আর তাতে যদি আমার মত না থাকে তখন চুপ করে থাকে ! কোন চিৎকার চেচামিচি করে না ! ও খুব ভাল করেই জানে আমি যতই নাহু নাহু করি শেষে গিয়ে আমি ঠিকই রাজি হয়ে যাবো !
আমি বললাম
-কোথায় তুমি এখন ?
-এই তো বাস স্টান্ড !
-কোথাকার বাসস্টান্ড ?
-মোঃপুর !
-বাহ ! চলেও এসেছো !
-হুম ! দাড়াও ! আসতেছি !
রিক্সা করে যখন বাসস্টান্ড নামলাম তখন বাইরে আসলেই বেশ শীত পড়েছে । গায়ে গ্যাবাডিনের ব্লেজারেও শীত মানছিল না ! কাঁপতে কাঁপতে রিক্সার ভাড়া দিতে যাবো তখন কোথা থেকে নিশি এসে হাজির ! বলল
-আমি দিচ্ছি !!
আমি নিশির দিকে তাকিয়ে বললমা
-এতোটা ফকির হয়ে যাইনি এখনও !
আমার কথা শুনে একটু হাসলো ও ! আমি নিশি দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হলাম ।
অবাক হলাম ওর পরনের পোষাক দেখে ! নিশি সাদা রংয়ের একটা চাদর পরে আছে ! ভিতরে কালো কামিজ ! আর কালো ল্যগিংস !
এই শীতে কেবল ল্যাগিংস পরে বের হয়েছে মেয়েটা ?
মাথা খারাপ নাকি ? আমার জিন্স প্যান্টেও শীত মানছে না !
আর এই মেয়েটা ???
আর মাথায় কোন টুপিও পরে নি ! ঠান্ড বাতাসে যেন একটু কাঁপছে ! সারাটা পথ নিশ্চই এমন কাঁপতে কাঁপতে এসেছে !!
আমি বলল
-তোমার শীত লাগছে না ? শুধু ল্যগিংস পরেছ কেন?
নিশি আবারও চুপ করে রইলো !
আমি আবার বললাম
-দেখ কথা বল ! চুপ করে থাকবা না !
নিশি নিচু স্বরে বলল
-তুমি পছন্দ কর যে !
-আমি পছন্দ করি বলেই এতো ঠান্ডার ভিতরে পাতলা ল্যাগিংস পরে বের হতে হবে ! আমি যদি বলি মিনিস্কার্ট আমার খুব পছন্দ তুমি তাই তাই পরে রাস্তায় বের হবে ?
কোন উত্তর নাই ?
এই ফাজিলটা কথা বলে না কেন ?
আমি রাগ করতে গিয়েও পারি না ! এমন মেয়ের উপর কেমনে রাগ করবো !!
একটু নমনীয় কন্ঠে বললাম
-এই রকম পাগলামী আর করবা না । মনে থাকবে ?
নিশি এবার আমার মুখের দিকে তাকালো ! ওর মুখটা কেমন হাসি হাসি মনে হল ! যেন খুব মজা পাচ্ছে ! আমার কথায় উত্তরে নিশি একটু মাথা নাড়িয়ে বলল
-না ! মনে থাকবে না !
আমি বললাম
-তোমার খুব মজা লাগছে ! তাই না? আমি তোমাকে বকছি গায়ে লাগছে না ?
-তোমার বকা শুনতে খুব ভাল লাগে যে ! তুমি যখন আমাকে বকা দেও তোমার কান আর নাকটা কেমন লাল হয়ে যায় ! দেখতে খুব সুইট লাগে !
নিশি মুখ টিপে হাসতে লাগলো ! আমি তাকিয়ে রইলো ওর দিকে ! রাগ আনার চেষ্টা করলাম ! কিন্তু কেন জানি ঠিক রাগ উঠছে না ।
নিশি আবার বলল
-শুনো খামোখা চেষ্টা কর না ! তুমি এখন আমার উপর রাগ করতে পারবে না !
-বুঝলাম ! এখন কি করবা বল !
নিশি বাচ্চা মেয়েদের মত খুশি হয়ে বলল
-চল বাসে উঠি ! সেদিন মতিঝিলের দিকে গেছিলাম আজ চল গুলাশানের দিকে যাই !
-এই শীতের ভিতর ?
-চল না ! প্লিজ ! একদম শেষ মাথা পর্যন্ত যাবো আবার আসবো !
নিশির এই একটা অভ্যাস খুব আছে ! মানুষ তো ডেটিং করতে কত যায়গায় যায় ! কত রেস্টুরেন্টে যায় নিশির এসবের কোন কিছুই পছন্দ না ! ও প্রায়ই কোন বাস উঠে পরবে আমাকে নিয়ে ! পিছনের দিকে একটা ডাবল সিটে বসে এবার গল্প করতে করতে যাবে !
একবার ইডেনের সামনে থেকে নিশি আমাকে নিয়ে মিরপুর ১৪ নম্বরের একটা বাসে উঠল ! পিছনের দিকে বসে আমরা প্রায় তিন ঘন্টা পর ১৪ নম্বরে পৌছালাম । আমার মনে হয়েছিল যে ওর নিশ্চই কোন কাজ আছে এই জন্য আমাকে নিয়ে যাচ্ছে ! মিরপুরে গিয়ে আমরা যখন নামলাম তখন নিশি বলল
-চল যাই !
আমি অবাক হয়ে বললাম
-চল যাই মানে? তুমি কিসের জন্য এখানে এসেছ !
নিশি খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-এই তোমার সাথে আসলাম । গল্প করতে করতে আসলাম ! কি চমৎকার সময় কাটলো !
-এই তিন ঘন্টা জ্যামে আটকে থেকে আমি হাজির হলাম ।
কোন করন ছাড়াই !
নিশি বলল
-কেন এই যে আমরা একসাথে আসলাম না ?
আমি খুব হবাক হয়ে রইলাম !!
তারপর থেকে প্রায়ই এরকম প্রেম ভ্রমন করতে হত !
প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও পরে মনে হল নিশির সাথে জার্নিটা নেহত মন্দ হয় না ! সময়টা ভালই কাটে !
আমি টিকিট কাটতে যাবো নিশি বলল
-আমি টিকিট কেটেছি ! আসো এই বাস !
নিশি আমাকে বাস দেখালো !আমি বললাম
-আমি চিনি গুলশানের বাস চিনি ! চল !
নিশিকে নিয়ে বাসের শেষের দিকের একটা ডাবল সিটে বসলাম ! নিশি বসল জানলার পাশে ! কেমন জড়সর হয়ে !
ওর শীত লাগছে !
আমার মাথার কানটুপিটা ওকে পরিয়ে দিলাম ! বললাম
-এমন বোকামী আর করবা না ? মনে থাকবে ?
-আচ্ছা থাকবে থাকবে ! এখন বসতো আমার পাশে !
আমি বসলাম !
একটু পরেই বাস চলতে শুরু করলো ! শুরু হল আমাদের বাস ডেটিং !
আমি সব সময় কল্পনা করি আমার এমন একজন ভালবাসায় মানুষ থাকবে যে আমাকে সবমসয় আমাকে তার ভালবাসায় ঘিরে রাখবে ! বাসে চলার সময় আমি প্রায়ই এমন জুটি দেখতে পাই ! বাসের শেষের দিকে বসে তারা আপন ভুবনে হারিয়ে আছে ! কেন জানি আমার বড় মন খারাপ হয় ! মনে হয় ইস ! এমন যদি আমার হত !!
যদি এমন আমি বাস জার্নি করতে পারতাম !!
কিন্তু হায় !!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।