আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক বিকেলে

একজন বেকার যুবক। ভাগ্যন্নোয়নে আশাবাদী। সন্ধ্যা। সারাদিনের ক্লান্তি যেন কমতে শুরু করেছে। অন্তত হেলে পড়া সুর্য সে কথারই জবাব দেয়।

লেকের পাড়ের লেনের ধারে জারুল ছায়ার তলে বসে ক্লান্ত শরীরটাকে দম দেয় রনি। উফফ…! বেশ ধকল গেছে আজ। ক্লাস-পরীক্ষা-প্রেজেন্টেশন… তারপর আবার লাঞ্চ হয়নি। বিকালের টিউশনি শেষ করে সন্ধ্যারটায় আর যেতে ইচ্ছে করছে না। ভীষণ টায়ার্ড।

কিন্তু যেতে হবে। স্টুডেন্টের পরীক্ষা কাল। ম্যাথে একটু প্রবলেম। সলভ করে দিতে হবে। কিন্তু হাটতে গিয়ে টলতে শুরু করায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছে।

শরীর বলে কথা। কয়েকদিনের ভীষণ জ্বর তাকে প্রায় কাবু করে দিয়েছে। ধকলটা এখনও সয়ে উঠতে পারেনি ও। মনটা আজ খারাপ। গত সেমিস্টারের রেজাল্ট দিয়েছে।

ভালো হয়নি। টেনেটুনে বি। এই সেমিস্টারে ভালো ফল করে সিজিপিএ টা এগিয়ে নিতে চাইছিলো রনি। হলো না। হবে কীভাবে? রোজ পাঁচটা টিউশনি করে চলে সে।

নিজের পড়ার সময় কোথায়? তাছাড়া উপায়ও তো নাই। ঢাকা শহরে তার তো আর কোনো সহায় নেই এছাড়া। এছাড়া গ্রামে টাকা পাঠাতে হয়। মায়ের শরীরটাও বিশেষ ভালো নেই। বাবার পেনশনের টাকায় সংসার চলে না, যদিও সংসারের কলেবর বেশি বড় না।

এদিকে সেশন জটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি জুটিয়ে নেবে সেটা্ও মস্ত এক চ্যালেঞ্জ। সমস্যার যেন অন্ত নেই। কী করবে সে। ভেবে কূল পায় না।

… লেকের টলায়মান জলে অস্তমিত সুর্য দোল খাচ্ছে। পাখিরা কোলাহল করে নীড়ে ফিরছে। দখিনের কোমল হাওয়া গাছের শাখায় দোলা দিচ্ছে। হালকা বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝিরি-ঝিরি করে হাওয়ায় ভাসছে। অশান্ত পরিবেশ ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে।

স্থিতি পাচ্ছে পরিবেশ। দিনের আলো কমতে শুরু করেছে আগেই, তার গতিটা যেন বাড়ছে। সব কিছুই নিয়মমাফিক ঘটছে। বাত্যয় নেই কোনো কিছুতে। লেকের পাড়ে সদ্য গজিয়ে ওঠা চা-চটপটির দোকানগুলোয় ভিড় করে ছেলেমেয়েরা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আড্ডায় মেতেছে।

পাশেই একদল গীটারের সুরে গলা মেলাচ্ছে। প্রেমিক-প্রবরগণ পরস্পর একান্ত আলাপে মত্ত। চারুকলার শিক্ষার্থীরা ক্যানভাসে যেন সেই সবেরই প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলছে। টোকাইরা্ও ব্যস্ত তাদের কাজে। জীবনটা কত সুন্দর ! বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে রনি।

নিজেকে বড় একা-একা লাগে রনির। বন্ধুদের সাথে এমন আড্ডা দেবার ফুসরত তার নেই। বন্ধুদের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে গলা ছেড়ে গান গাইবার সুযোগ যে তার নেই। কাউকে পাশে বসিয়ে নিজের সুখ-দুঃখগুলো ভাগাভাগি করার মত কেউ নেই তার। ধূসর বিবর্ণ জীবনে রং তুলিতে রাঙিয়ে তোলার চেষ্টা দুঃস্বপ্নের মতো।

জীবনটা বিভীষিকাময়। ফোন বাজছে। স্টুডেন্টের ফোন। রিসিভ করতেই- স্যার লেট করছেন কেন? কাল তো পরীক্ষা… দিনের আলো মিইয়ে গেছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোর তীব্রতা বাড়ছে।

পরিবেশ আগের তুলনায় শান্ত। সড়কে যানবাহনের শব্দ ও হর্ণ। ছাত্রের বাসার দিকে পা বাড়ায় রনি, সব কিছু পেছনে ফেলে… ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।