salehin.arshady@gmail.com কয়েক মাস আগে টোকাই এর ফেসবুক স্ট্যাটাস এ আমরা দুই বন্ধু ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে কিভাবে যেন ৫০০'র উপর কমেন্ট হয়ে গেল। আমরা কি করতাম, কি খেলতাম, কি খেতাম ইত্যাদি ইত্যাদি। তখনই টোকাই কে বলেছিলাম, একটা কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে। পরে লিখতে গিয়ে দেখলাম এক এক টা স্মৃতি এতটাই বিশাল যে সেই ৫০০ কমেন্ট ময় স্মৃতি একই পরিসরে লিখা আমার জন্য অসম্ভবের মত একটা কাজ। তাই ভাবলাম একটা একটা করেই লিখে ফেলি।
নাই মামার চাইতে তো কানা মামা ভালঃ
:::টারজান আর জেন:::
উঁহু উঁহু...শিরোনাম দেখেই এত খুশি হওয়ার কিছু নাই। দুষ্টু ছেলের দল, তোমাদের দুষ্টুমিতে ভরা চিন্তা গুলোকে সংযত কর। আমি আমার শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করছি, কৈশরের না। আমি বলছি আজকে থেকে প্রায় বিশ বছর আগের কথা। এখনও মনে আছে, কারেন্ট চলে যাওয়া এক সন্ধ্যায় আব্বু আমাকে একটা গল্প শুনিয়েছিল।
কিভাবে বনের মধ্যে একটা প্লেন ক্র্যাশ করল, কিভাবে জঙলে হারিয়ে যাওয়া শিশু গরিলা পরিবারে বড় হয়ে একদিন শক্তিশালী হয়ে উঠল আর তার নানা রকম দুঃসাহসিক এডভেঞ্চার। বাসায় তখন ইত্তেফাক রাখা হত। সেই ইত্তেফাক এর মাধ্যমেই পরে সেই গল্পের নায়ক টারজান, জেন আর এডগার রাইজ বারোজ এর সাথে আমার পরিচয়। সেই থেকে আমি ইত্তেফাক এর নিয়মিত পাঠক হয়ে গেলাম। এক সময় ইত্তেফাক এর পাতায় চোখ বুলানো টা নেশার মত হয়ে গেল।
বেশী কিছু না, শুধুমাত্র টারজান এর সেই তিন ব্লক কার্টূন।
প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে যেতাম। বাসার সবাই উঠার আগেই টারজান টা পড়ে নিব বলে, একদিন মিস করলেই হয়েছে, সারা বাড়ি- এই ঘর থেকে সেই ঘর লাট্টুর মত ঘুরতে হবে।
ছোটবেলায় ধৈর্য আর অধ্যাবসায় প্রথম পাঠ রবার্ট ব্রুস এর আগে মনে হয় টারজান এর এই ধারাবাহিক কার্টূন পড়তে গিয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম। প্রতিদিন সর্বসাকূল্যে চার থেকে পাঁচ টা ডায়লগ।
কাহিনী তো আর আগায় না। এরপর কি হবে, জংলিরা কি জেন কে মেরে ফেলবে? সারাদিন জল্পনা-কল্পনা করতাম আর ছটফট করতাম। পরে বিরক্ত হয়ে এক কঠিন সংকল্প করে ফেললাম- পুরো কার্টূন টা একবারে পড়ব। তখন কি আর জানতাম, এই কাহিনী চুইংগাম এর মত খিচতেই থাকে। কোনদিন শেষ হয়না।
ইত্তেফাক এ এখনো টারজান এর কার্টূন ছাঁপে-ঐ ৩ ব্লকই। তাও ভাগ্য ভাল জেন এর প্রেম এ পরে ২০ বছর অপেক্ষা করে বসে থাকি নাই। আমার সংকল্প স্থায়ী ছিল ৭-৮মাস। প্রথম প্রথম কচি মন কে সংযত করতে অনেক কষ্ট হত। মাঝে মাঝে চোখ চলে যেত, পরে নিজেকেই প্রবোধ দিতাম, শুধু তো চোখ বুলাইসি, কিছু পড়ি তো নাই।
কয়েকদিন পরই এক সমস্যায় পরলাম। পুরানো পেপার গুলা যে দুইদিন পর কই চলে যায় পরে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এরপর থেকে প্রতিদিনের কাজ হল টারজান এর কার্টূন ব্লক টা কেঁটে নেয়া। এইজন্য ভাইয়ার শেভিং কিট থেকে একটা কাঁচি ও মেরে দিলাম। একদিন ভোরে টারজান কেঁটে স্কুলে চলে গেছি, দুপুরে বাসায় ফিরতেই আব্বুর সেই কি বেদম মার।
আমি নাকি কোন এক গুরুত্বপূর্ণ খবর হাওয়া করে দিয়েছি। এখন আমি কিভাবে জানব যে টারজান এর পিছেন আবার খবর ও ছাপা থাকে।
সবচেয়ে বেশী পেপার কেঁটেছি নারায়নগঞ্জ এর সূধীজন পাঠাগার থেকে। সেই ছোটবেলা থেকে রাম ভাই কে পটিয়ে আর্কাইভ রুমে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো। চারিদিকে পুরানো বই, পেপার আর ম্যাগাজিন এর সাড়ি- এর মাঝে বসে তন্ময় হয়ে আমি এক এক করে টারজান কাটছি।
দেখতে দেখতেই অনেক অনেক টারজান কাটিং জমতে লাগল।
কয়েকমাস পর হঠাৎ করেই একদিন আব্বু একটা বই নিয়ে আসে, ছোটদের আবিষ্কার। ঐ বইতে জুতার বাক্স দিয়ে একটা বায়োস্কোপ বানানোর নকশা ছিল। সেটা দেখে মনে হল, অনেক ধৈর্য্য হইসে। এখন সব পড়া যাক, আসল কথা হল বায়োস্কোপ টা বানানো যাক।
তারপর সব কয়টা কাটিং এক এক করে সিরিয়াল এ সাজালাম। এখন একটা শক্ত জুতার বাক্স লাগবে। ছোট চাচার ঘর থেকে একটা মেরেই নকশা অনুযায়ী কেঁটে ফেললাম। কাটিং গুলোকে এক এক করে সাঁজিয়ে আঠা লাগিয়ে উপরে আর নীচে দুটা চকবার এর কাঠিতে পেঁচিয়ে দিলাম। কাঠি দুটা জুতার বক্সের সাইডে বসিয়ে দিলাম যা চেঞ্জার হিসেবে কাজ করত।
অন্ধকারে পড়ার সুবিধার জন্য বক্সের ভিতরে লাইটিং এর ও ব্যাবস্থা করেছিলাম। নানার স্টীলের টর্চ লাইট থেকে লাইট চুরি করে তার আর ব্যাটারী দিয়ে সুন্দর একটা সার্কিটও বানিয়ে ছিলাম।
সেই ছোট্ট কালো রঙের জুতার বাক্স টা আমার অনেক প্রিয় ছিল। সারাক্ষন সাথে নিয়ে ঘুরতাম। সময়ের সাথে সাথে সেই বাক্স টাও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।