Astronauts শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে যারা মহাকাশ পাড়ি দেন। এদেরকে অবশ্য Cosmonauts বা নভোচারীও বলা হয়। সুতরাং যারা মহাকাশে স্পেসক্রাফট এর বিভিন্ন কাজের জন্য প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত তাদেরকে মহাকাশচারী বলা হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেমন হয় তাদের মহাকাশ জীবন, আমাদের মতো নাকি একেবারে আলাদা? তারাও কি ঘুমায়, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার, বাথরুম .. করে?
এই নিয়েই আমার ধারাবাহিক পর্ব।
আজকে আমরা মহাকাশচারীদের খাবার, টয়লেট, গোসল ও ঘুম সমন্ধে জানব।
সাধারণত মহাকাশচারীদের মাঝে কয়েকটি ক্যাটেগরি থাকে তা হচ্ছে- কমান্ডো, পাইলট, স্পেস শাটল স্পেশালিস্ট এবং মিশন স্পেশালিষ্ট।
স্পেসে খাওয়া-দাওয়াঃ আমরা পৃথিবীতে যা খাই তারাও অনেকটা সেরকম খাবারই খায় তবে সব খাবারই প্রিজার্ভড বা প্রসেসড ফুড।
মহাকাশযানে মিশন এর পূর্বেই একজন খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানি সকল ক্রুদের জন্য আলাদা আলাদাভাবে ডায়েট প্লান করেন যাতে করে প্রত্যেকের সকল ধরনের পুষ্টি নিশ্চিত করেন।
ছবিঃ কয়েকজন মহাকাশচারীর খাবার নিয়ে খেলা করছে।
মজার ব্যাপার হল প্রত্যেকের জন্য আলাদা রঙের খাবারের প্যাকেট থাকে।
তাই খাবারের ট্রেতে খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি বা বাছাবাছি করতে হয়না।
বেশিরভাগ খাবারই ফ্রোজেন করা থাকে। যেমন- শাকসবজি, পাউরুটি, দুগ্ধজাতীয় খাবার, কোমল পানীয় ইত্যাদি। পূর্বে খাবার এর সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে প্রায় ১৫০ রকমের খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু খাবারে শুধু ঠান্ডা বা গরম পানি ঢাললেই হয় আবার কোনটা ওভেন এ গরম করলেই চলে।
তবে পানীয় পানের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্ট্র বা নল ব্যবহার করতে হবে তাছা্রা পানীয় মুখে ঢাললেও মুখে পরবেনা কিন্তু!
খাবার রান্নার জন্য আলাদা কিচেনরুম থাকে। খাবার পরিবেশন করা হয় ট্রেতে করে।
ছবিঃ কয়েকজন মহাকাশচারীর খাবার গ্রহন করছে।
ডাইনিং টেবিল থাকে মহাকাশযানের সাথে সংযুক্ত আর ট্রে থাকে টেবিল এর সাথে সংযুক্ত। ট্রেতে আবার স্পুন, ফোর্ক, খাবারের প্যাকেট, খাবারের প্যাকেট কাটার জন্য কাচি সবকিছুই ভেল্ক্রুর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে।
ছবিঃ ভেল্ক্রু(কেডস জুতায় ভেল্ক্রুর ব্যবহার)
টয়লেটঃ খাবাররের পরই আসি টয়লেট এ কারন ইনপুট নিলেন আর আউটপুট দিবেন না? মহাকাশচারীরা তাদের ২ হাত ও পা কে টয়লেট এর সাথে ভালো করে বেঁধে নেন যাতে করে টয়লেট করার সময় ভেসে না বেড়ায়। আর টয়লেট এর কমোডে লাগানো থাকে শোষক যন্ত্র যার মাধ্যমে সব জৈবিক আবর্জনা পরিষ্কার হয়।
মহাকাশযানের টয়লেটগুলো পৃথিবীর টয়লেট এর আদলেই তৈরি করা হয়ে থাকে তবে সেখানে পানি ব্যবহার এর বদলে বাতাসের চাপ ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
ছবিঃ টয়লেট
গোসলঃ পৃথিবীতে গোসল করা যেমন জরুরী মহাকাশেও তেমনই জরুরী। মহাকাশচারীরা তাদের গোসল সম্পন্ন করে ভেজা গামছা দিয়ে গা ভিজিয়ে আর অনেক সময় গামছায় সাবান লাগানো থাকে।
মহাকাশযানে পৃথিবীর মতো ইচ্ছামতো পানি পাওয়া যায়না। শুধুমাত্র ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে মাত্র ৪ লিটার পানি পাওয়া যায় গোসল করার জন্য।
একবার ভাবুন তো গোসলের পানি যদি গায়ে না পরে গায়ে ঢালার পরেও!!! হ্যাঁ, স্পেসে অতি অল্প গ্র্যাভিটির জন্য পানি গায়ে ঢাললেও গায়ে উপর পরেনা। আর তাই মহাকাশযানে গোসলের আর মহাকাশচারীদের স্পঞ্জ বাথ করতে হয় সীমিত পানি সরবরাহের জন্যে।
মহাকাশচারীরা গোসলের জন্যে যে সাবান ব্যবহার করে টা অনেকটা টুথপেস্ট এর মতো তবে ভেতরে পেস্ট এর বদলে থাকে তরল সাবান।
তারা একধরনের চোষক যন্ত্র পানি মোছার জন্য ব্যবহার করে থাকেন। আর শুধু চুল পরিষ্কার করার জন্য ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করেন।
ছবিঃ ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করছেন কয়েকজন মহাকাশচারী।
ঘুমঃ মহাকাশচারীরা ছোট স্লীপিং ব্যাগের মধ্যে ঘুমান। সেখানে তারা দেহকে স্লীপিং ব্যাগের সাথে ফিতা দিয়ে হাল্কাভাবে বেধে রাখে যাতে করে দেহ ভেসে না বেড়ায়।
সেই স্লীপিং ব্যাগটি আবার মহাকাশযান এর সাথে সংযুক্ত থাকে।
ছবিঃ মহাকাশচারী ছোট স্লীপিং ব্যাগের মধ্যে দাড়ায়ে ঘুমাচ্ছেন।
শুন্য গ্র্যাভিটির জগতে কোন উপর বা নীচ বলে কিছু নাই। তাই মহাকাশচারীরা যেকোনো দিক মুখ ফিরে ঘুমাতে পারে। মহাকাশচারীরা ছোট স্লীপিং ব্যাগের মধ্যে ঘুমান।
সেখানে তারা দেহকে স্লীপিং ব্যাগের সাথে ফিতা দিয়ে হাল্কাভাবে বেধে রাখে যাতে করে দেহ ভেসে না বেড়ায়। অনেকে চোখে কাপড় ও কানে Ear plug লাগিয়ে ঘুমান যাদের আলো ও মেশিন এর শব্দে ঘুমের সমস্যা হয়।
মহাকাশচারীদের ২৪ ঘণ্টায় ৮ ঘণ্টার ঘুমানোর সুযোগ থাকে কিন্তু কাজের চাপে বা মহাকাশজগতের অপার দৃশ্য উপভোগ করার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৬ ঘন্টা ঘুমানো পড়ে।
আজ এ পর্যন্তই...........(চলতে থাকবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।